দক্ষ কর্মী
৪ নভেম্বর ২০১২তাঁরা সবাই সফটওয়্যার প্রোগ্রামার, জৈব রসায়ন বিশেষজ্ঞ, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার৷ এসেছেন ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে৷ জার্মানিতে কাজ করতে দিব্যি ভালো লাগছে৷ ‘মেক ইট ইন জার্মানি' নামে এক বিজ্ঞাপনী ছবিতে উৎসাহে ভরপুর এই সব বিদেশিরা এমন কথাই বলছেন৷ ছবিটি তৈরি করেছে জার্মান সরকার ও জার্মান কর্মসংস্থান দপ্তর৷ বিদেশি দক্ষ কর্মী হিসেবে জার্মানিতে বসবাস ও কাজের অভিজ্ঞতার নানা উদাহরণ উঠে এসেছে৷
‘‘আমি জার্মানিতে থাকতে পছন্দ করি৷ ব্যক্তিগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে এখানে আমার বিকাশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল৷''
‘‘ওয়েল্ডিং করার সময় যে রোবোট লাগে, আমি তার জন্য সফটওয়্যার তৈরি করি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে যা শিখেছি, আমি তা কাজে লাগাতে পারছি৷ এর মধ্যে আমি জার্মান সমাজে বেশ সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছি৷ এখানকার ভিয়েতনামি সমাজের সঙ্গেও আমার বেশ যোগাযোগ হয়েছে৷''
স্পেনের মারিয়া বা ভিয়েতনামের টুং'এর মতো উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিদেশি কর্মীদের জার্মান কোম্পানিগুলি লুফে নিয়েছে৷ শুধু বড় বড় কোম্পানি নয়, ছোট বা মাঝারি মাপের কোম্পানিগুলি জার্মানিতে সহজে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী খুঁজে পাচ্ছে না৷ অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী ফিলিপ ব়্যোসলার এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘কোম্পানিগুলিকে যখন প্রশ্ন করা হয়, জার্মানিতে প্রবৃদ্ধির পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় কী – তখন বার বার একটা কথাই শোনা যায়৷ তারা বলে, চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না৷ এই প্রেক্ষাপটে নানা তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়েছে৷ তবে মোটামুটি ধরে নেওয়া যেতে পারে, যে জার্মান কোম্পানিগুলি বছরে প্রায় ২ লক্ষ এমন দক্ষ কর্মীর খোঁজ করে৷''
কয়েক মাস আগে একটি ইন্টারনেট পোর্টাল খোলা হয়েছে, যার নাম ‘মার্কেট ইন জার্মানি'৷ এর মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ব্যবহারকারী সেই ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখেছে৷ তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই বিদেশি৷
জার্মানিতে গিয়ে কাজ করতে গেলে কী কী করতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর পাঁচটি ধাপে দেওয়া হয়েছে৷ প্রথমে চাকরির খোঁজ পাওয়া, তারপর ভিসার ব্যবস্থা করা৷ এ সব হয়ে গলে ভিটে-মাটি ছেড়ে জার্মানিতে বসবাস করার প্রস্তুতি৷ তারপর সপরিবারে জার্মান সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে৷ ওয়েবসাইট ছাড়াও ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে আলাদা দপ্তর খোলা হয়েছে, যেখানে আগ্রহী কর্মীরা সরাসরি যোগাযোগ করে এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন৷ জিআইজেড – বা জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা এইভাবে সম্ভাব্য অভিবাসীদের জন্য এক সামগ্রিক প্যাকেজ তৈরি করেছে৷ জিআইজেড'এর পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যা তানিয়া গ্যোনার এ প্রসঙ্গে বললেন, যে শুধু সঠিক চাকরি পেলেই চলে না, আরও অনেক বিষয় মনে রাখতে হয়৷ তাঁর মতে, ‘‘দেখতে হয়, কোম্পানি এমন প্রার্থীর জন্য যথেষ্ট বেতন দিচ্ছে কি না৷ কাজ শুরু করার আগেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়৷ তারপর সমাজে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টির দিকেও নজর দিতে হয়৷ কারণ আমরা চাই, শুধু কর্মস্থল হিসেবে নয় – কর্মীরা যেন জার্মানিকে নিজের দেশ হিসেবে মেনে নিতে পারে৷ আমার মতে, যারা জার্মানি আসছেন, তাদের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷''
দক্ষ বিদেশি কর্মীদের পেলে জার্মানির উপকার হয় ঠিকই, কিন্তু তার ফলে কি সেই সব দেশের ক্ষতি হচ্ছে না, যেখান থেকে সেরা মগজগুলিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে? জিআইজেড বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখতে চায়৷ যেমন এই প্রকল্পের জন্য ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, এই তিন দেশের জনসংখ্যার মধ্যে তরুণ-তরুণীদের অনুপাত বেশি৷ জার্মানিতে যে সব পেশায় কর্মীর চাহিদা রয়েছে, এ সব দেশে তেমন কর্মীর কোনো অভাব নেই৷ উল্টে এমন কর্মীদের কর্মসংস্থানে সমস্যা হচ্ছে৷
তাছাড়া এমন কর্মীরা বিদেশে গিয়ে বসবাস করলে তাদের মাধ্যমে প্রযুক্তি হস্তান্তর, তাদের রেমিটেন্স ইত্যাদি কারণে দেশের উপকার হয়৷ যারা কয়েক বছর বিদেশে থেকে দেশে ফিরে যায়, তাদের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো যায়৷ এই প্রক্রিয়াকে টেকসই অভিবাসনও বলা হয়৷ অর্থাৎ জিআইজেড একে ‘উইন-উইন সিচুয়েশন' বলে, যার মাধ্যমে দুই পক্ষই উপকৃত হয়৷ বসনিয়া হ্যারৎসোগোভিনা, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশের ক্ষেত্রে এমন দৃষ্টান্ত দেখা গেছে৷
প্রতিবেদন: সাবিনে কিংকারৎস/এসবি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ