1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে বাড়ছে আত্মহত্যার হার

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০

সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্রে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ইতোমধ্যে চলতি বছরেই ৩০ জন আত্মহত্যা করেছে, আর এদের মধ্যে একজনের বয়স মাত্র ১১ বছর৷

https://p.dw.com/p/M5Pz
ভারতে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ বিশ হাজার মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেছবি: Milk&Opium

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বে আত্মহননের হার ভারতে সর্বোচ্চ৷ দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হিসাব করে দেখেছে যে, প্রতিবছর প্রায় এক লাখ বিশ হাজার মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে৷ এবং এদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বয়স ৩০ এর নিচে৷

মহারাষ্ট্রে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধির পেছনের কারণ হিসেবে কলেজের বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখানো ভয়, পরীক্ষা পরবর্তী হতাশা বা নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷

ফিজিওলোজিস্ট এবং বয়ঃসন্ধিকালে আত্মহত্যা প্রতিরোধ হেলপলাইনের প্রতিষ্ঠাতা স্যান্ডে ডিয়েস আন্দ্রাডী বলেন শুধু এই কারণেই নয় এছাড়াও আরও অনেক কারণ রয়েছে যা আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি করে৷

তিনি বলেন, আত্মহত্যার ঘটনাটি একটি সাধারণ ঘটনার জন্য ঘটে না৷ এটি এমন একটি বিষয় যার ভাবনা অনেক দিন থেকেই আত্মহত্যাকারীর ভেতরে লালিত থাকে৷ আর এর সাথে আরও অনেক আবেগময় ঘটনাও জড়িত থাকে৷ ছোট্ট কোন ঘটনাই এই ঘটনাটি ঘটাতে প্রভাবিত করে৷

আন্দ্রাডী জানান, এই আত্মহননের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বায়ণ ও ভারতের শহরাঞ্চলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কারণে৷ সামাজিক আস্থার প্রক্রিয়া যেমন ভারতে যৌথ পরিবারের প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ বেশিরভাগ একক পরিবারগুলোয় বাবা-মা দুজনেই চাকরি করায় মানসিক আস্থা দেবার মত কেউ না থাকায় শিশু বা বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েরা হতাশায় ভোগে৷

Symbolbild Selbstmord bei Jungendlichen in Indien
বয়ঃসন্ধিকালে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতেছবি: picture-alliance/dpa/DW

মুম্বাই ভিত্তিক টাটা ইন্সটিটিউট অব সোসাল সায়েন্সের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সুভদা মিত্র মনে করেন, একই বয়সিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কেরও পরিবর্তন হচ্ছে৷ যে সময়টা প্রতিবেশি বন্ধুর সাথে খেলাধুলা করে কাটাবার কথা তা কাটছে কম্পিউটারে গেমস খেলে৷ আর এর মধ্য দিয়েই তারা একটি ভাল পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷

তিনি বলেন, এখনকার ছেলেমেয়েরা তাদের পড়ালেখা, শিক্ষক, সাংগঠনিক কর্মকান্ড, কম্পিউটার নির্ভর খেলাধুলায় বেশি ডুবে থাকছে৷ তাই তাদের গড়ে ওঠছে না কোন বন্ধুমহল৷ আর এ কারণে শিশুদের সমবয়সিদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না৷

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান পড়ালেখার প্রক্রিয়াও মানুষের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করছে৷ স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির বাজার পর্যন্ত এই চাপের মাত্রা থাকে একই রকম৷ এছাড়া প্রকৌশল বা চিকিৎসাবিদ্যা মত পছন্দসই বিষয়টিতে পড়ার সুযোগ পাবার জন্য অনেকেই হতাশায় ভোগে৷

মহারাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে বলে জানান মহারাষ্ট্রের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক এম.আর. কদম৷ তিনি আরও জানান, পুরো রাজ্যে বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক শিক্ষা বোর্ড রয়েছে৷ ঐ শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া রয়েছে যে কোন আত্মহত্যার সংবাদ পাওয়া মাত্রই ২৪ ঘন্টার মধ্যে এর পেছনের কারণ বের করতে৷ তারা আত্মহত্যাকারীর পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করেন যে পরীক্ষার চাপের কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছে কিনা৷ তা না হলে এর পেছনে সঠিক কারণ বের করার চেষ্টা করেন তারা৷

তিনি আরও জানান, সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশ দেয়া রয়েছে তারা যেন শিক্ষার্থীদের আচরণ এবং চাহিদার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন৷ বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের উপদেশ দেবার জন্য স্থানীয় এনজিও এবং উপদেষ্টা নিয়োগ করছে৷

তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন স্কুলগুলোতে পরামর্শদান আরও বাড়ানো প্রয়োজন৷ আর এই প্রবণতা রোধ করতে বাবা-মা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে একসাথে কাজ করতে হবে৷

প্রতিবেদক: আসফারা হক

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার