1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রান্তিক শিশুদের প্রতি বৈষম্য

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২৭ এপ্রিল ২০১৪

ভারতবর্ষের বেশিরভাগ প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাচ্চাদের প্রতি নানান ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকেন, যেটা তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নামান্তর৷ জানাচ্ছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷

https://p.dw.com/p/1BonK
আলোচকবৃন্দছবি: DW/A. Chatterjee

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, সম্প্রতি নতুন দিল্লির এক আলোচনাচক্রে তার ওপর বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বক্তা৷

রিপোর্টের মূলকথা: ভারতের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে প্রান্তিক জনসমাজের বাচ্চাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, যার ফলে তারা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার অধিকার থেকে৷ কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৯ সালে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সের বাচ্চাদের জন্য বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা আইন চালু করার পর দেখা যায় প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৮ কোটিরও বেশি বাচ্চা স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি বা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হবার আগেই৷ অথচ রাজ্য, জেলা ও পঞ্চায়েত স্তরের শিক্ষা কর্মকর্তারা কখনোই এ বৈষম্যের কথা স্বীকার করেন না, সমস্যার সমাধান তো দূর অস্ত৷

Human Rights Watch Konferenz in Neu Delhi
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কর্মকর্তা মীনাক্ষী গাঙ্গুলিছবি: DW/A. Chatterjee

ভারতের চারটি রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং দিল্লির সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সমীক্ষা চালিয়ে এবং সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সংস্থার গবেষকরা প্রান্তিক শ্রেণির বাচ্চাদের প্রতি কী ধরণের বৈষম্য করা হয়, কারা করেন, কেন করেন এবং তা নিবারণের জন্য কী করণীয় – সে বিষয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে সেই আলোচনাচক্রে বক্তব্য রাখেন৷

আলোচনার সূত্রপাত করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর দক্ষিণ এশিয়ার ডায়রেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে ভারতে এখন তুমুল উত্তেজনা৷ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, প্রবৃদ্ধি নিয়ে চলছে ভাষণবাজি, বাকযুদ্ধ ও বিতর্ক৷ কিন্তু আইন থাকা সত্ত্বেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাচ্চারা শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত? কেন তারা বৈষম্যের শিকার? কারা দায়ী এ জন্য? সরকার, রাজনৈতিক দল বা দলের নেতারা কেন এই বিষয়ে উদাসীন? কী ধরণের বৈষম্য করা হয়, কারা করে এবং এর জন্য কারা দায়ী?

এ প্রশ্নগুলির উত্তরে মীনাক্ষী গাঙ্গুলি প্রথমেই দায়ী করেন স্কুল শিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষকে৷ ডয়চে ভেলেকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বৈষম্যটা ওদের স্তর থেকেই শুরু হয় প্রথমে৷ ওদের প্রথম নিশানা দলিত, উপজাতি এবং গরিব মুসলিম পড়ুয়ারা৷

কী ধরণের বৈষম্য? যেমন উত্তর প্রদেশের আট বছরের এক উপজাতি বাচ্চা ছেলে পঙ্কজ (নাম পরিবর্তিত) বা ওর মতো আরো অনেক পড়ুয়াদের কথায়, ‘‘ক্লাসে অন্য সহপাঠিদের সঙ্গে বসতে গেলে দিদিমনি উঁচুজাতের ছেলে-মেয়েদের পাশে বসতে দেন না, আলাদা বসতে বলেন৷ কারণ নীচুজাতের ছেলে-মেয়েরা, মানে আমরা নাকি খুব নোংরা৷ তাই দিদিমনি আমাদের বসতে বলেন একেবারে শেষের বেঞ্চিতে বা অন্য রুমে৷ শুধু তাই নয়, কথায় কথায় গালাগালি দেন আমাদের৷ স্কুলের প্রার্থনা সভায় বা অন্য কোনো বড় অনুষ্ঠানে আমাদের যোগ দিতে বারণ করা হয়৷ মিড-ডে মিলে সবার শেষে আমাদের খেতে দেয়া হয়৷ এমনকি শিক্ষকদের টয়লেট পর্যন্ত সাফ করতে বলা হয়, বলা হয় শিক্ষকদের পা টিপে দিতে৷ নইলে মার খেতে হয় আমাদের৷ যেটা তথাকথিত উচ্চবর্গের সুবিধাভোগী পরিবারের পড়ুয়াদের বলার সাহস হয় না শিক্ষক-শিক্ষিকাদের৷''

এইভাবে দিনের পর দিন অপমান ও অমানবিক আচরণে স্কুলের প্রতি এই সব প্রান্তিক ছেলে-মেয়েদের আকর্ষণ আর থাকে না৷ গরিব অভিভাবকরাও বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর চেয়ে শিশু শ্রমিক হবার দিকেই ঠেলে দেন৷ এতে দুটো পয়সা তো অন্তত আসবে!

তাহলে এর প্রতিবিধানের জন্য করণীয় কী? উত্তরে আলোচনা চক্রের অন্যান্য বক্তাদের সুপারিশ: প্রান্তিক বাচ্চাদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য একটা ‘মনিটরিং মেকানিজম' থাকা জরুরি৷ যদি কেউ ধরা পড়ে তাহলে উপযুক্ত শাস্তির বিধান থাকা দরকার৷ দ্বিতীয়ত, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মানসিকতায় আনতে হবে পরিবর্তন৷ আর সেজন্য বিশেষ ট্রেনিং কোর্স থাকতে হবে৷ তৃতীয়ত, কোনো পড়ুয়া দীর্ঘদিন স্কুল কামাই করলে কেন কামাই করছে সে বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে খোঁজ নিতে হবে এবং সেটা করতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে৷

শিশু অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ভারত সামিল হওয়া সত্ত্বেও এ দেশে জাতপাত, ধর্ম ও লিঙ্গভেদে সেটাই হয়ে চলেছে, বলেন আলোচনাচক্রের অন্যতম বক্তা জয়শ্রী বাজোরিয়া এবং বিমলা রামচন্দ্রন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য