1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে প্রাইভেট টিউশন-এর রমরমা

২১ নভেম্বর ২০০৯

প্রাইভেট টিউশন বা কোচিং সেন্টারে পড়াটা ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ দেশের সব অঞ্চলেই ব্যাঙের ছাতার মতো নিত্য নতুন কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠছে৷ তাই টিউশন ক্লাসে না যাওয়াটাই এখন অস্বাভাবিক !

https://p.dw.com/p/KcFK
কোচিং সেন্টারে পড়া তো দূরের কথা, স্কুলে পড়াটাই এহেন বহু ভারতীয় শিশুর কাছে মরীচিকাছবি: AP

নম্বর, নম্বর আর নম্বর! অংকে তোমার নম্বর কতো? ইংরেজিতে এবং বিজ্ঞানে কতো? অভিভাবক, শিক্ষক এবং পরবর্তীকালে চাকরির নিয়োগকর্তার এসব প্রশ্নের কারণেই হয়তো ভারতের লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী স্কুলের পর স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে বা কোচিং সেন্টারে পড়তে দৌড়াচ্ছে৷

কোলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত প্রাইভেট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র শিলাদিত্য ভাদুড়িও বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে না গিয়ে কোচিংয়ে পড়তে যায়৷ সে বলছিল, ‘‘ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রাইভেট পড়াটা দরকার, কারণ স্কুল সবসময় আমাদেরকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে না৷''

কোলকাতার প্রাইভেট টিউটর শর্মিষ্ঠাও এ বিষয়ে একমত৷ তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা স্কুলে যা শিখতে যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় সবটুকু জ্ঞান দিয়ে দেওয়া শিক্ষকদের পক্ষে অসম্ভব৷ তাই তাদের যা জানা প্রয়োজন সেজন্য ছাত্রদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়৷''

ভয়াবহ প্রতিযোগিতা

সরকারি এমনকী বেসরকারি স্কুলেও পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাবের চেয়েও প্রধানত চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং সরকারি আমলার মতো পেশায় ঢুকতে হলে যে তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে হয় তা-ই অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারের দিকে দৌড়াতে উৎসাহিত করছে৷ অন্য অনেক ভারতীয়র মতোই উৎপল মৈত্রও চান তার ছেলে সরকারি চাকুরে হোক৷

মৈত্র বলছিলেন,‘‘আমি চাই আমার ছেলে সরকারি চাকুরে হোক কিন্তু আমি জানি না সত্যিই সে তা পারবে কি না৷'' তিনি বলেন,‘‘যদি এমন একটা ভাল প্রতিষ্ঠান পেতাম যারা ওকে একটা ভাল অবস্থায় যেতে কোচিং দিতে পারতো তাহলে তাকে কোচিং সেন্টারে পাঠাতে আমার কোনো আপত্তি নেই৷''

বিভিন্ন পেশার জন্য আলাদা আলাদা বিশেষায়িত টিউটোরিয়ালগুলোর বিজ্ঞাপন সবখানেই দেখতে পাওয়া যাবে৷ স্বপ্নের পেশায় ঢোকার লক্ষ্যে বহু ছাত্রই এসব প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে৷

‘‘গুণ নয় নম্বরের শিক্ষা''


নতুন দিল্লির ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট এর শিক্ষক শাশ্বতী গোস্বামী বিশ্বাস করেন যে, এই প্রাইভেট টিউশন সঙ্কটের মূলে রয়েছে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি মৌলিক সমস্যা৷

তিনি বলছিলেন, ‘‘এটা শিক্ষার গুণগত মান নয় বরং শিক্ষার সংখ্যাগত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত৷''

‘‘তুমি কতো নম্বর পেলে সেটাই তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিচ্ছে৷ শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞান যাতে নম্বরের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে সেজন্য এমন পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে যেখানে জ্ঞানের পরীক্ষা হবে৷ তাই তোমাকে কেবল কিছু মুখস্থ করলেই চলবে না তোমাকে তা আত্মস্থ করতে হবে৷ তোমাকে বইটা পড়তে হবে এবং শিক্ষক তোমাকে এ পুরো প্রক্রিয়ায় নির্দেশনা দেবেন, যেটা এখন হচ্ছে না৷''

বলতে গেলে প্রায় কোনো ট্যাক্সই দিতে না হওয়ায় কোচিং এর ব্যবসাও রমরমা৷ ওদিকে, স্কুলের শিক্ষকতায় ক্ষতি হতে পারে বিধায় ভারতের কয়েকটি রাজ্যে শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগও প্রায়ই শোনা যায় যে, প্রাইভেটের ছাত্র যোগাড় করতে ইচ্ছে করেই তারা পাঠ্যসূচির পুরোটা স্কুলে পড়ান না৷কিন্তু এসব বন্ধে সরকারের নির্দেশ কোনো কার্যকারিতা পায়নি৷

যতদিন পর্যন্ত অভিভাবক আর ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাকরির বাজারের ভয়াবহ প্রতিযোগিতা এবং বেশি নম্বরের উন্মাদনার চাপ শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত প্রাইভেট টিউশনের রমরমাও চলতেই থাকবে৷

মূল: দেবারতি মুখার্জ্জী, ভাষান্তর: মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ