1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু

১৯ ডিসেম্বর ২০১১

ভারতে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি৷ দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, শিক্ষার অভাবই মূলত এর জন্য দায়ী৷ এক্ষেত্রে দেশটির সনাতন পদ্ধতি হয়তো বহু মেয়েকে বাঁচাতে পারে৷

https://p.dw.com/p/13VKR
এমন সৌভাগ্য অনেক মায়েরই হয় নাছবি: dapd

গুজরাটের রাজকোট জেলার মাটেল গ্রামের দুই সন্তানের জননী ২২ বছর বয়স্ক হানসা এই রকমই দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার এক শিকার, যাকে ভারতের হাজার হাজার গর্ভবতী নারীর মতই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে৷

‘‘এটি ছিল তার তৃতীয় গর্ভধারণ'', জানান হানসার স্বামীর এক আত্মীয়া৷ ‘‘গর্ভধারণের পঞ্চম মাসে তার সমস্যা দেখা দেয়৷ তার স্বামী সন্ধ্যার সময় আমাকে তাদের বাড়িতে আসতে অনুরোধ করে৷''

হানসার ৪ দিন ধরে রক্তপাত হচ্ছিল৷ উপযুক্ত পরিবহণের অভাবে তাকে একটি তিন চাকার গাড়িতে চড়িয়ে কাছের এক ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়৷ সেই ডাক্তার হানসাকে ওষুধ দিয়ে বলেন, সকালেই তাকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ তাঁর কথা মত হানসাকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ কিন্তু যাত্রার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা যায় সে৷

বাল্য বিবাহ ও দুর্বল পরিবার পরিকল্পনা

ভারতের গ্রামাঞ্চলের অনেক মেয়েই অল্প বয়সে বিয়ের কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়৷ হানসার দুই ও এক বছর তিন মাসের দুই সন্তান ছিল৷ সুষ্ঠু পরিবার পরিকল্পনার অভাবে এক গর্ভধারণের ধকল কেটে ওঠার আগেই মেয়েদের একটার পর একটা বাচ্চা হয়ে যায়৷ প্রায় না থাকা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার কারণে ও পরামর্শ কেন্দ্রের অভাবে অবশেষে এই সব মেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে৷ প্রাক গর্ভ স্বাস্থ্য রক্ষার উন্নয়নের ব্যাপারে বহু নীতিমালা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ভারত সম্ভবত তার সহস্রাব্দের লক্ষ্য, ১৯৯১ সাল থেকে মাতৃমৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে পারবেনা৷ সেই সময় প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর হার ছিল প্রতি লাখে ৫২৩ জন, আজ এই হার প্রতি লাখে ২৫৪ জন৷

ইউনিসেফের হয়ে শিশু উন্নয়ন ক্ষেত্রে কাজ করেছেন গীতাঞ্জলি চতুর্বেদী৷ ভারতে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর সমস্যাটি নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে তিনটি মূল সমস্যা রয়েছে, কিছু কিছু সমস্যা স্পষ্টতই রাজনেতিক, কিছু সমস্যা সামাজিক, এবং আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যাও রয়েছে৷'' অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে হওয়াটা একটা সামাজিক সমস্যা৷ এর ফলে টিন এজ-এ থাকতেই বাচ্চা হয়ে যায়ে অনেক মেয়ের, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ৷

Weltbevölkerung: UN feiern den siebenmilliardsten Menschen Nargis Indien
ভারতে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর হার অনেক বেশিছবি: dapd

শ্রীলংকা প্রসবকালীন মৃত্যুর হার জয় করেছে

ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকা কিন্তু প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে পেরেছে৷ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রসব করতে গিয়ে এক লাখে ৩২ জন মায়ের মৃত্যু হয় সেখানে৷ জার্মানিস্থ শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত সারাথ কোনগাহাজে বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে, নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের মাধ্যমে৷ এখন প্রায় ৯৫ শতাংশ মেয়ে স্কুলে যায় এবং প্রসবকালে মেয়েদের গড় বয়স থাকে ১৮ বছরেরও বেশি৷

গীতাঞ্জলি চতুর্বেদী মনে করেন, ভারতের সনাতন কিছু পদ্ধতি এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে পারে৷ আগে প্রত্যেক গ্রামের নিজস্ব ধাত্রীরা মেয়েদের প্রসবে সাহায্য করতেন, পরামর্শ দিতেন, দেখাশোনাও করতেন৷

কিন্তু এখন এই পদ্ধতিটা বলা যায় একেবারেই লুপ্ত হয়ে গেছে, জানান, নারী স্বাস্থ্যসেবায় তত্পর আহমেদাবাদ ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা চেন্টা-এর কর্মী স্মিতা বাজপেই৷ তার মানে, গর্ভবতী মেয়েদের প্রসবে সাহায্য করার জন্য অভিজ্ঞ কাউকে বাড়িতে আনার চেয়ে অনেক দূরে হলেও হাসপাতালে যেতে উত্সাহিত করা হয়৷

ধাত্রীর সাহায্যে প্রসব

বাড়িতে ধাত্রীর সাহায্যে প্রসব করা জার্মানির মত দেশগুলিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ জার্মানিতে একজন ধাত্রী ডাক্তারের সাহায্য ছাড়াই প্রসব করাতে পারেন, কিন্তু একজন ডাক্তার ধাত্রীর সাহায্য ছাড়া তা পারেননা, বলেন পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন প্রোফামিলিয়ার কির্শ্টিন মাইন্স রিল৷

প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর হার জার্মানিতে খুব কম৷ প্রতি লাখে মারা যান ৭ জন মা৷ এতে বোঝা যায় সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করলে সাধারণ পদ্ধতিও অবাক করার মত ভাল হতে পারে৷ মাইন্স রিল বলেন ধাত্রীর পেশা এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, প্রশিক্ষণের স্কুলগুলিতে জায়গা পাওয়াই কঠিন৷

বাড়িতে নিরাপদ প্রসবের প্রচলন ভারতে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে৷ বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ঘরের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে হবে৷ অনেক সময় শয়ে শয়ে কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বহু জটিলতার সৃষ্টি হয়, মারাও যায় অনেক মেয়ে৷ বলেন স্ত্রী রোগবিশেষজ্ঞ ড. চন্দ্রশেখর৷ চতুর্বেদী জানান, ইউনিসেফ এক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে, উত্তর প্রদেশের অনেক মেয়েকে বাড়িতে নিরাপদ প্রসবে সাহায্য করার জন্য ধাত্রীর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷

নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি

জার্মানিতে নিযুক্ত শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত বলেন, জন্মহার হ্রাস করার জন্য শিক্ষা ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি৷ এক্ষেত্রে শ্রীলংকায় সাফল্য দেখা দিয়েছে৷

ভারতে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে গর্ভবতী মেয়েদের খুঁজে বের করে তাদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য কিছু মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যাদের বলা হয় ‘আশা'৷ অবশ্য এই পদ্ধতি কতটা ফলপ্রসূ তা জানা যায়নি৷ এক্ষেত্রে সচেতনতার বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়নি৷

জার্মানিতে গর্ভসংক্রান্ত পরামর্শের ওপর জোর দেয়া হয়েছে৷ মাইন্স রিল বলেন, জার্মানিতে প্রতিটি মেয়েই চাইলে এ ব্যাপারে নিখরচায় পরামর্শ পেতে পারেন৷ মেয়েরা তাদের স্বামী বা পুরুষ সঙ্গীকেও সম্পৃক্ত করতে পারেন৷ জার্মানির ডাক্তাররা বাচ্চার বাবাকে প্রসবের সময় উপস্থিত থাকার ব্যাপারে উত্সাহিত করেন৷ তারা শিশুর নাড়ি কাটা বা প্রথম স্নান করানোর কাজটি করাতে পারেন৷ অন্যদিকে ভারতীয় সমাজে প্রসব ও বাচ্চার জন্মপরবর্তী যত্নআত্তিতে পুরুষদের সম্পৃক্ত করার প্রচলন নেই বললেই চলে৷ এ প্রসঙ্গে চতুর্বেদী বলেন, ‘‘এক ধরনের স্বাস্থ্য বিপ্লব আমাদের প্রয়োজন, যেখানে প্রত্যেক মেয়েই গর্ভসংক্রান্ত পরামর্শ কেন্দ্র এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলে একজন ডাক্তারের সাহায্য পেতে পারেন৷''

প্রতিবেদন: বেনিশ আলি ভাট / রায়হানা বেগম

সম্পাদক: আব্দুল্লাহ আল ফারূক