1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশ্নের মুখে উবার-এর ব্যবসা

১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

ইন্টারনেট-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্যাব বুকিং কোম্পানি ‘উবার’৷ ঐ সংস্থার একজন চালকের ওপর দিল্লিবাসী এক নারী সম্প্রতি শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনায়, প্রথমে রাজধানী দিল্লি, পরে মুম্বই, হায়দ্রাবাদ ও চন্ডিগড়ে নিষিদ্ধ হয় ‘উবার’৷

https://p.dw.com/p/1E3fx
Symbolbild zu Uber Verbot in Indien 07.12.2014
প্রতীকী ছবিছবি: AFP/Getty Images/T. Bahar

ভারতের রাজধানী দিল্লি আজ ‘ধর্ষণের নগরী' হিসেবেই যেন বেশি পরিচিত বিশ্বে৷ ২০১২ সালে দিল্লির সেই পাশবিক গণধর্ষণকাণ্ডে মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যুর ক্ষত এখনও শুকায়নি, অথচ এখনও নিত্যদিন ঘটে চলেছে নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা৷ সাম্প্রতিক ‘কাণ্ড'-টি এ সত্যেরই পুনরাবৃত্তি৷

অভিযুক্ত ড্রাইভার আন্তর্জাতিক ক্যাব, মানে ট্যাক্সি বুকিং কোম্পানি উবার-এর কর্মী, নাম শিব কুমার যাদব৷ গুরগাঁওয়ের একটি বহুজাতিক ‘ফিন্যান্স' কোম্পানিতে কর্মরত ২৭ বছরের এক নারী এই যাদবের গাড়িতেই বাড়ি ফিরছিলেন৷ কিন্তু বাড়ি ফেরার আগেই ঘটে যায় অঘটন৷ নির্যাতিতা জানান, ‘‘বাড়ি ফেরার পথে একটা সময় আমি গাড়ির পিছনের সিটে ঘুমিয়ে পড়ি৷ তারপর হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়৷ বুঝতে পারি, গাড়িটি একটি নির্জন স্থানে থেমে রয়েছে আর ড্রাইভার আমার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছে৷''

চালককে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সে তাঁকে বেশ কয়েকবার চড় মারে, খুনের হুমকি দেয় এবং তারপর ধর্ষণ করে বলে জানান তিনি৷ এমনকি বাড়িতে নামিয়ে দেওয়ার সময় পুলিশের কাছে গেলে ‘প্রাণে মেরে ফেলবো' – এমন হুমকিও দেয় যাদব৷

তারপরও দমবার পাত্রী ছিলেন না এই ‘ফিন্যান্স একজিকিউটিভ'৷ তিনি পুলিশের কাছে যান, রিপোর্ট দাখিল করেন, শুরু হয় তদন্ত৷ দিল্লি ও উত্তর প্রদেশ পুলিশের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে আদতে মথুরার বাসিন্দা শিব কুমার যাদব৷

তবে আশ্চর্যের বিষয়, এটাই প্রথম নয়৷ ৩২ বছরের এই ড্রাইভারের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে যৌন হয়রানি, ২০০৬ সালে বেআইনি অস্ত্র রাখা এবং ২০১৩ সালে ডাকাতি এবং ধর্ষণের মামলা করা হয়েছিল বলে জানান উত্তর দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মধুর ভার্মা৷ এছাড়া তিহার কারাগারে যাদব সাত মাস জেল খেটেছিল বলেও জানান তিনি৷

এরপর আর কী? চালকের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ না করে তাকে নিয়োগ দেওয়ার কারণে উবার-এর সব সার্ভিস নিষিদ্ধ করা হয় দিল্লিতে৷ মধুর ভার্মা জানান, গাড়িটিতে কোম্পানির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অত্যাবশকীয় জিপিএস ছিল না৷ বরং গৌরব বলে এক ব্যক্তির নামে যাদবের মোবাইল ফোন নথিভুক্ত করা ছিল৷ এমনকি, দিল্লি ট্রান্সপোর্ট দপ্তরেও ঐ চালকের লাইসেন্স ইস্যু করা ছিল না৷ অর্থাৎ যাদবের কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশনই করা হয়নি উবার-এর পক্ষ থেকে৷

মুখে ভোক্তার জন্য নিশ্চয়তা দিলেও, ড্রাইভার নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দায়িত্ববোধের পরিচয়ও দেয়নি সংস্থাটি৷ তাই সোমবার পরিবহণ দপ্তর জানায়, ‘এই সংস্থাটির ড্রাইভার যে জঘন্য অপরাধ করেছে, তা মাথায় রেখে www.uber.com – এই ওয়েবসাইটের ট্রান্সপোর্ট সংক্রান্ত সমস্ত সার্ভিস নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো৷'

এদিকে দিল্লি ছাড়াও ভারতের আরো ১০টি শহরে অ্যাপনির্ভর এই ক্যাব বুকিং সংস্থাটির গাড়ি রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ, সে সমস্ত শহরে উবার-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক৷ ইতিমধ্যে মুম্বই ও চন্ডিগড়ে নিষিদ্ধ হয়েছে ‘উবার'৷ এছাড়া ভারতের ‘আইটি-হাব' বা তথ্য-প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হায়দ্রাবাদেও উবার-এর পরিসেবা ‘ব্যান' করা হয়েছে৷

শহরের সিনিয়র পরিবহণ অফিসার টি রঘুনাথন জানান, শুধু উবার নয়, সবগুলো ইন্টারনেট-ভিত্তিক ট্যাক্সি সার্ভিসকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে হায়দ্রাবাদে৷ এগুলোর কোনোটারই ‘লাইসেন্স' ছিল না৷

ওদিকে উবার-এর নাম ধর্ষণের ঐ ঘটনার সঙ্গে জড়ানোর পর, কোম্পানির মুখপাত্র ইভেলিন টে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা নির্যাতিতার পাশে আছি৷ পুলিশকে তদন্তে সবরকম সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত৷ এ ধরণের ঘৃণ্য অপরাধে জড়িতদের আমরা তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করি৷ এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি৷''

শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী পুলিশ উবার-এর বিরুদ্ধে ‘প্রতারণার' মামলা ঠোকার পর, মার্কিন কোম্পানিটি এবার উল্টে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে দিল্লির পরিবহণ দপ্তরের বিরুদ্ধে ‘গাফিলতির' অভিযোগ এনেছে৷

ডিজি/জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ)