1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে গোয়েটে ইন্সটিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি

২১ জানুয়ারি ২০১০

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জার্মানভাষা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ভারত৷ দিল্লি থেকে কোলকাতা পর্যন্ত ২০ হাজারের মত শিক্ষিত ভারতীয় তরুণ এখন গোয়েটে ইনস্টিটিউটে জার্মানভাষা নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷

https://p.dw.com/p/LcN2
ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত গোয়েটে ইন্সটিটিউটছবি: DW/ Werner Bloch

জার্মানি ও জার্মান ভাষা সম্পর্কে তাদের আগ্রহের কারণ কী ?

‘‘আমার নাম শেরিফ৷ আমি কাশ্মীর থেকে এসেছি৷ আমি জার্মান ভাষা ভালবাসি৷ আমি জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারি৷''

মঙ্গলবার সকাল, দিল্লির একটি সরকারি স্কুলের দৃশ্য৷ উৎসবমুখর আমেজ চারিদিকে৷ আজ জার্মান ভাষাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্য বিষয় হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হল৷ শুধু দিল্লিতে নয় ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও জার্মান ভাষা এই মর্যাদা পেল৷ তার মানে ছাত্ররা হিন্দি, ইংরেজি, বা বাংলার মত কোনো ভাষার পর জার্মান ভাষাকে চতুর্থ বিদেশি ভাষা হিসাবে নির্বাচন করতে পারবে৷ তাই তো এক ছাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ওঠে, ‘‘আমরা জার্মান শিখছি, কেননা আমরা জার্মান সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও জার্মান কোম্পানির গাড়ি ভালবাসি৷ ফরাসির চেয়ে এই ভাষা আকর্ষণীয় এবং সহজ৷''

দক্ষিণ এশিয়ার গোয়েটে ইনস্টিউটের ভাষা বিভাগের প্রধান এবেরহার্ড ভেলার-এর মতে, ভারতে জার্মান ভাষা শেখার জন্য বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়োজন নেই৷ তিনি জানান, ‘‘দুই দেশের মধ্যে ক্রমেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে৷ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যোগ্যতা অর্জন করতে হলে জার্মান শেখাটা জরুরি৷ যেমন ভারতে কোনো জার্মান কোম্পানিতে ক্যারিয়ার করতে হলে জার্মান জানা প্রয়োজন৷ এজন্য অনেকে স্বদেশেই জার্মান ভাষা শিখতে চান, জার্মানিতে গিয়ে পড়াশোনা করতে চান না৷''

Flash - Galerie 50 Jahre Goethe in Indien
৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ভারতে গোয়েটে ইন্সটিটিউট-এর প্রেসিডেন্ট ক্লাউস-ডিটার লেমানছবি: DW/ Werner Bloch

অনেক মা বাবা বাড়ি গাড়ি কেনার চেয়ে বাচ্চাদের শিক্ষাখাতে অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী

ভারতে কেউ কেউ বিদেশি ভাষা বিশেষ করে জার্মান ভাষা শেখার জন্য ছেলে মেয়েদের মাক্স ম্যুলার ভবনে পাঠান৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর খ্যাতনামা জার্মান ভারতবিশারদ, দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ মাক্স ম্যুলারকে স্মরণ করে ভারতের গোয়েটে ইন্সটিটিউটের নাম দেয়া হয়েছে মাক্স ম্যুলার ভবন৷ বিদ্বান ও উদারমনা এই মানুষটি ছিলেন সংস্কৃতসহ বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী৷ ভারতীয় দর্শনেও আগ্রহ ছিল তাঁর, অনুবাদ করেছেন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ৷ তাই ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা আজও অক্ষুন্ন রয়েছে৷

এবেরহার্ড ভেলার বলেন, ‘‘এছাড়া আমাদের ইমেজটাও এক্ষেত্রে সাহায্য করেছে৷ জার্মান ভাষা বেশ কঠিন, জার্মানরা নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে, তারা কর্মনিষ্ঠ৷ এসব বলা হয় জার্মানদের সম্পর্কে৷ তাই যে জার্মান ভাষা শেখে, সে নিশ্চয়ই পরিশ্রমী৷ এটাই মনে করা হয়৷''

তবে জার্মানদের সবকিছুই যে ভারতে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় তা বলা যায়না

বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফারাকটা লক্ষ্যণীয়৷ জার্মানদের সবকিছুই একেবারে সরাসরি৷ তারা পার্থিব জিনিসকে প্রাধান্য দেয় বেশি৷ ব্যবহারে উষ্ণতার অভাব রয়েছে, মনে করেন অনেক ভারতীয়৷ অন্যদিকে ভারতীয়রা পারস্পরিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, এক সঙ্গে অনেক কিছুতে সম্পৃক্ত হতে চায়, যা জার্মানদের কাছে অনেক সময় গোলমেলে মনে হয়৷

50 Jahre Goethe in Indien
গোয়েটে ইন্সটিটিউট : জার্মানি ও ভারতের মধ্যে এক যোগসূত্রছবি: DW/ Werner Bloch

ভারতে ব্যবসা করতে গেলে শুধু অর্থনৈতিক বিষয়গুলির দিকে লক্ষ্য রাখলেই চলবেনা৷ সাংস্কৃতিক দিকটাও জানতে হবে৷ এতে দুই সংস্কৃতির মধ্যে সংঘাত ও সংকট প্রায়ই এড়িয়ে চলা সম্ভব৷ এজন্য মুম্বাই-এর গোয়েটে ইন্সটিটিউট আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগযোগের ওপর একটি কোর্স চালু করেছে৷ অন্যের সংস্কৃতি জানাটা নিছক কোনো বিলাসিতা নয়, ব্যবসা করতে হলেও যে তার প্রয়োজন রয়েছে সেটাই তুলে ধরা হয় এই সব কোর্সে৷

জার্মানির বিখ্যাত মোটরগাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি মেরসেডিস-এর ভারতীয় শাখার প্রধান ভিলফ্রিড আউলবুর্গ বিষয়টি তাঁর পুনার কারখানাতেও লক্ষ্য করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আজ এমন এক বিশ্বে বসবাস করছি, যেখানে সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন কোনো এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই, দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তা৷ বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া থাকলে, ব্যবসা বাণিজ্যের পথটাও সুগম হয়৷ আর এই ক্ষেত্রে গোয়েটে ইন্সটিটিউটের কাজকর্ম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷''

প্রতিবেদক: ভ্যার্নার ব্লখ, ভাষান্তর: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক