1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যর্থতার আতঙ্কজনিত অবসাদ কেড়ে নিল এনকে-র প্রাণ

১২ নভেম্বর ২০০৯

ফুটবলকে ভালোবেসেই আত্মহত্যা করেছেন জার্মান গোলকিপার রবার্ট এনকে৷ বুধবার তাঁর পরিবার আর তাঁর চিকিত্সকের হাজিরায় সংবাদসম্মেলনে সেরকম তথ্যই উঠে এল৷

https://p.dw.com/p/KUJA
সদ্যবিধবা টেরেসা এনকেছবি: AP

‘ডিপ্রেশন' বা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন রবার্ট এনকে৷ এই ডিপ্রেশনই তাঁর প্রতিভাবান জীবনকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেল মাঝপথে৷ মাত্র বত্রিশ বছর বয়সী এনকে মঙ্গলবার হানোভার শহরের কাছেই নয়েস্টাড আম রুবেনবার্গ নামের ছোট্ট একটি শহরের এক নির্জন লেভেলক্রসিং-এ গিয়ে ধাবমান ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন৷ সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ আত্মহত্যা করেন এনকে৷ আগুনের মত সেই খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে জার্মানি সহ ফুটবল বিশ্বের একাংশ৷ এনকে ছিলেন জার্মানির জাতীয় দলের পয়লা নম্বর গোলকিপার৷ আগামী বিশ্বকাপে তাঁর খেলার কথা ছিল পাকা৷

প্রথমে জানা যায় নি কেন এমনটা করলেন এনকে৷ কী ছিল তাঁর অসহায়তা! বুধবার বার্লিনে তাঁর চিকিত্সক ভ্যালেন্টিন মার্কসের এবং তাঁর সদ্যবিধবা স্ত্রী টেরেসা এনকে হাজির ছিলেন৷ ডাক্তার মার্কসের জানান, ভালো ফুটবলার এনকে এক প্রবল আতঙ্কে ভুগছিলেন৷ আতঙ্কটা ছিল খেলার মাঠে ব্যর্থ হয়ে পড়ার আতঙ্ক৷ এই আতঙ্ক থেকেই তাঁর মনে জন্ম নেয় গভীর হতাশার৷ সেই ২০০৩ সাল থেকেই এই হতাশা বা ডিপ্রেশনের শিকার এনকে৷ তার জন্য চিকিত্সাও চলছিল৷ কিন্তু এই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নেওয়াটার অন্য কোন পরিপূরক তিনি খুঁজে পেলেন না শেষ পর্যন্ত৷ ফুটবলের প্রতি প্রবল ভালোবাসাই শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিল তাঁর জীবন৷

Oliver Bierhoff während der Pressekonferenz zum Tod von Robert Enke
নিজেকে সামলাতে পারেন নি বিয়েরহফছবি: AP

কিন্তু ফুটবলের বাইরেও যে একটা অন্য জীবন আছে এই বিশ্বাসটা কী তাহলে এনকের মনে জন্ম নেয়নি?

এনকের সদ্যবিধবা স্ত্রী টেরেসা এনকে সেকথার জবাব দিয়েছেন সাংবাদিক সম্মেলনে৷ নিহত স্বামীর জন্য চোখের জল ফেলতে ফেলতে টেরেসা বলেছেন, ‘‘আমি বারবার ওকে আশা দেওয়ার চেষ্টা করেছি৷ বারবার বলেছি, ফুটবলই সবকিছু নয়৷ আমিও আছি তোমার পাশে৷ আছে অন্য একটা জীবনের হাতছানি৷ কিন্তু....''

টেরেসা বলেছেন, তিনি সবসময়ে এনকের পাশে পাশে থাকতে, তাঁর মনে সাহস যোগাতে চেষ্টা করে গেছেন৷ বলেছেন, ‘‘ আমি বিশ্বাস করতাম ভালোবাসা দিয়ে যে কোন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা যায়৷ বলেওছি বহুবার ওকে সেকথা৷ কিন্তু, এনকের কাছে জীবনটাই ছিল ফুটবল৷ তার বাইরে আর কিছুই ভাবতে পারত না এনকে৷''

আসলে ২০০২ সালে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েই বোধহয় বড় ভুল করে ফেলেছিলেন এনকে৷ সেই বছরটায় তাঁর ফর্ম ভালো ছিল না৷ বার্সেলোনা তাঁকে সেভাবে মাঠেও নামায় নি৷ তারপর সে বছরেই বার্সেলোনা থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল ফেনেরবাখে ক্লাবে৷ ফেনেরবাখের হয়ে তাদের চিরশত্রু ইস্তানবুলস্পোর-এর বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটায় ৩-০ গোলে পরাজয়ের গ্লানি এনকে কে চরমভাবে ভেঙে দিয়েছিল৷ তাঁর চিকিত্সক ভ্যালেন্টিন মার্কসের সাংবাদিক সম্মেলনে সেই পরিস্থিতির কথা জানান৷ সেই খেলায় তিন গোল খাওয়ার পর এনকের ফ্যানেরাই তাঁকে চরমভাবে হেনস্থা করেছিল মাঠের মধ্যে৷ সেই যন্ত্রণা থেকেই অবসাদের শিকার হন এনকে৷ আর সেই অবসাদ, সেই ব্যর্থ হওয়ার আতঙ্ক শেষ পর্যন্ত মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ৷

জার্মানির সর্বত্রই এনকে-র মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া৷ জার্মান জাতীয় দলের ম্যানেজার অলিভার বিয়েরহফ সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেকে সামলাতে পারেন নি৷ এনকের কথা বলতে গিয়ে ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক সম্মেলনে বিয়েরহফের চোখ ভিজে গেছে বারবার৷ জার্মান জাতীয় দলের তরফে জানানো হয়েছে, এনকের প্রতি সম্মান জানাতে আগামী শনিবার কোলনে চিলি বনাম জার্মানির বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে আগামী ১৮ই নভেম্বর আইভরি কোস্ট বনাম জার্মানির বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচটি যথারীতি খেলা হবে৷

রবার্ট এনকে তাঁর এই কঠিন যন্ত্রনাদায়ক মানসিক পরিস্থিতির কথা, তাঁর অবসাদ আর ব্যর্থতার আতঙ্কের কথা ক্লাবের কাউকে জানান নি বলে জানিয়েছেন এনকের ক্লাব হানোভারের ম্যানেজার মার্টিন কিন্ড৷ বলেছেন, মানুষ হিসেবে অসাধারণ ছিল এনকে৷ ছিল শিশুর মত সরল৷ ওর জন্য সকলেই মর্মাহত৷ হানোভার দল সম্ভবত চিরতরে তাদের এক নম্বর জার্সিটা এবার তুলে রেখে দেবে৷ বলেছেন কিন্ড৷ কারণ এনকে ওটাই পরতেন৷ তাঁর প্রিয় ছিল ওই জার্সিটা৷ তাই সেটা তোলা থাকবে শুধুমাত্র এনকের জন্যই৷

খেলার মাঠে ব্যর্থতার আতঙ্কে ভুগে ছুটন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেওয়া এনকে জানলেন না কী গভীর ভালোবাসা ছিল সকলের মনে তাঁর জন্য৷ অনেক দেরি হয়ে গেল তাঁর বুঝতে যে পরাজয়টাও খেলারই অঙ্গ৷ তবে ফুটবলের প্রতি এনকের এই ভালোবাসার কথাও মনে করে রেখে দেবে ঘেরা মাঠ ছড়ানো গ্যালারির ফুটবল দুনিয়া৷ মনে রেখে দেবে চিরদিনের জন্য৷

প্রতিবেদন- সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা- রিয়াজুল ইসলাম