1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেসরকারি উদ্যোগে জল সরবরাহের পথ দেখাচ্ছ ম্যানিলা

৭ অক্টোবর ২০১১

মেগাসিটি বা বিশাল মাপের শহরে নাগরিক পরিষেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে৷ ফিলিপাইন্স’এর ম্যানিলা শহর বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের অভিনব এক পথ বেছে নিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/12nSI
flood, water, Manila, Philippines
বন্যার পর ম্যানিলার জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার বন্দোবস্ত করা একটা চ্যালেঞ্জছবি: AP

দু-দুটি ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ফিলিপাইন্সের বেশ কিছু ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বন্যা হয়েছে৷ কমপক্ষে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, অনেকে এখনো নিখোঁজ৷ প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ম্যানিলা শহর ও আশেপাশের এলাকার জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি বলে ধরে নেওয়া হয়৷ স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের জন্য মৌলিক পরিষেবা দিতে শহর কর্তৃপক্ষকে বেশ বেগ পেতে হয়৷ সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের পর পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ এই অবস্থায় নগর কর্তৃপক্ষ বেসরকারি সংস্থার আর্থিক ও প্রযুক্তির বল কাজে লাগিয়ে পানীয় জল সরবরাহের অভিনব পন্থা গ্রহণ করেছে৷

আসলে ঢাকা ও কলকাতার মতো ম্যানিলা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে৷ কাজের সন্ধানে অসংখ্য মানুষ দলে দলে শহরে এসে থাকতে শুরু করছে৷ খালি জায়গা পেলেই গজিয়ে উঠছে বস্তি৷ অত্যন্ত সাধারণ উপকরণ দিয়ে মাথার উপর কোনোরকমে একটু ছাদের ব্যবস্থা করে সংসার পেতে বসছে বাইরে থেকে আসা এই সব মানুষ৷ তাদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা, নিকাশি ব্যবস্থা বা স্বাস্থ্য পরিষেবার বন্দোবস্ত করা বিশাল এক চ্যালেঞ্জ৷ সরকারি কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সাল থেকে ‘ম্যানিলা ওয়াটার' ও আরেকটি বেসরকারি কোম্পানির হাতে এই দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল৷

Manila, Philippines
দু-দুটি ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ফিলিপাইন্সের বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যাছবি: dapd

‘ম্যানিলা ওয়াটার'এর প্রতিনিধি লুইস খুয়ান ওরেতা মনে করেন, বেসরকারি কোম্পানির প্রযুক্তি ও অর্থবল ছাড়া এটা সম্ভবই হতো না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা ৩,০০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ নতুন লাইন পেতেছি৷ আমাদের গ্রাহকের সংখ্যা ৩০ লক্ষ থেকে আজ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে৷ এর অন্যতম কারণ হলো, আমরা আমাদের কর্মীদের উপর অনেক বিষয় ছেড়ে দিই৷ তারাই লাইন ও জলের মিটার বসানোর কাজের তদারকি করে এবং লক্ষ্য রাখে মিটার ঠিকমতো চলছে কি না৷ আগে সবকিছু কেন্দ্রীয় এক দপ্তরে করা হতো৷ এখন আমরা প্রতিটি এলাকায় একজন করে ম্যানেজার নিয়োগ করেছি, যার হাতে সেই এলাকার পরিষেবার দায়িত্ব রয়েছে৷''

একটা বড় সমস্যা ছিল চুরির প্রবণতা৷ বেসরকারীকরণের আগে এভাবে যে কত পরিমাণ পানীয় জল চুরি গেছে, তার কোনো হিসেব নেই৷ ফলে শহরের অর্ধেক মানুষের কাছে সেই জল পৌঁছানো যেত না৷ আজ, অর্থাৎ প্রায় ১৫ বছর পরে চিত্রটা বদলে গেছে৷ এখন ৮৭ শতাংশ মানুষ শুদ্ধ পানীয় জল পেয়ে থাকেন৷ এমনকি গরিব মানুষও নিয়মিত মাশুল দেন, কারণ পরিষেবার এই নেটওয়ার্কের গ্রাহক না হলে খোলা বাজারে সেই জলের জন্য প্রায় দশ গুন বেশি টাকা গুনতে হয়৷ তার পরেও কিছু সমস্যা থেকে গেছে৷

dead, Manila bay, Philippines,
বন্যার ফলে আশেপাশের এলাকার জলেও ক্ষতিকারক জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছেছবি: AP

পৌরসভার প্রতিনিধি রামন আলিকপালা এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘ম্যানিলার জনসংখ্যা প্রতি বছর প্রায় ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে৷ বেড়ে চলা সেই চাহিদা মেটাতে নতুন উৎসের খোঁজ চলছে৷ এই মুহূর্তে আনগাট বাঁধ থেকেই প্রায় ৯৭ শতাংশ জল নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু সেই একই উৎস থেকে আবার দেশের উত্তরে প্রায় ২৬,০০০ হেক্টর ধান চাষের জমির জন্য জল সরবরাহ করা হয়৷ সেখানে প্রায় ২০,০০০ পরিবারও এই উৎসের উপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু যখন খরা দেখা দেয়, তখন যেটুকু জল থাকে, তা শহরের মানুষের জন্যই সরবরাহ করা হয়ে থাকে৷ চাষীরা তখন সমস্যায় পড়েন, কারণ জল পাওয়া বা না পাওয়া তাদের জীবন-মরণের সঙ্গে যুক্ত৷''

তবে শুধু খরা নয়, বন্যার সময়ও পরিস্থিতি সামলানো কঠিন এক কাজ৷ বে-আইনি বস্তিগুলিতে মারাত্মক দূষণের ফলে জল নিষ্কাসন ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে৷ বন্যা এলে সেই দুষিত জল ও সেইসঙ্গে ক্ষতিকারক জীবাণু আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে৷ তখন কলেরার মতো রোগ মহামারির আকার ধারণ করতে পারে৷ এক্ষেত্রেও সরকারি ও বেসরকারী ক্ষেত্রের সহযোগিতা সুফল বয়ে আনতে পারে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷ ২০০৯ সালে ম্যানিলায় এক ঘূর্ণিঝড়ের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়েছিল৷ জল কোম্পানি তাদেরই সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতো৷ তারা ঠিক সময় কোম্পানিকে জানিয়ে দিত, কোথায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ ফলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়ে পড়তো৷ সেই সাময়িক ব্যবস্থাকে স্থায়ী করে তোলার বিষয়ে এখন ভাবনা-চিন্তা চলছে৷ জলের দূষণ বন্ধ করে পরিষ্কার শৌচাগার ও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্যও বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষ পানীয় জলের জন্য মাশুল গুনতে প্রস্তুত হলেও নিকাশি ব্যবস্থার প্রশ্নে তারা ততটা উৎসাহ দেখাচ্ছে না৷ তাছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জল পরিশোধনের প্লান্ট গড়ে তোলার জন্য জমি পাওয়াও কঠিন৷

প্রতিবেদন: আগ্নেস ব্যুয়রিশ / সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান