1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বীরাঙ্গনাদের দাবি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

২৯ জানুয়ারি ২০১১

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য অনেকে অনেক খেতাব পেয়েছেন৷ বীরশ্রেষ্ঠ, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন৷ কিন্তু বীরাঙ্গনা খেতাব পাওয়া বাংলা মায়েদের ভাগ্যে এখনও জোটেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি৷

https://p.dw.com/p/106sr
Rahela, Begum, Sirajgonj, Bangladesh, বীরাঙ্গনা, রাহেলা, বেগম, বাংলাদেশ, সিরাজগঞ্জ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, raped, Pakistani, army, accomplices, liberation, war, 1971, Shafina, lohani, Director, SUMS,
বীরাঙ্গনা রাহেলা বেগমছবি: Shafina lohani

‘‘মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের প্রাণবাজি রেখে লড়াই করেছেন৷ দেশকে স্বাধীন করেছেন৷ কিন্তু দেশ স্বাধীন করতে আমরা আমাদের মান-সম্ভ্রম উৎসর্গ করেছি৷ আমাদের মানের কি কোনই মূল্য নেই?'' স্বাধীন বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারক আর সুশীল সমাজের কাছে এভাবেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন সিরাজগঞ্জের বীরাঙ্গনা রাহেলা বেগম৷ দীর্ঘ নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই থেকে প্রায় চার লাখ বীর মায়ের মান-সম্ভ্রম হানি করেছে পাক বাহিনীর নরপিশাচরা৷ তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে৷ অনেককে ধর্ষণের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে পাক সেনারা৷ কাউকে সেনা শিবিরে আটকে রেখে তাদের উপর চালানো হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন৷ এসব বীর নারীদের অধিকাংশই চলে গেছেন দৃষ্টির আড়ালে৷ তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হাতে গোনা কিছু বীর মায়ের খোঁজ মেলে৷

Shamsunnahar Sirajgonj Bangladesh
বীরাঙ্গনা শামসুন্নাহারছবি: Shafina Lohani

স্বাধীনতা অর্জনের পর ৪০ বছর পার করছে বাংলাদেশ৷ এই দীর্ঘ সময়ে নীরবে নিভৃতে হারিয়ে গেছে বীর মায়েদের অনেকেই৷ অথচ স্বল্প যে ক'জন বীর নারী এখনও রয়েছেন নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে তাদের ভাগ্যে জোটেনি কিছুই৷ এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা শব্দটিও যোগ হয়নি এসব বীরাঙ্গনাদের নামের পাশে৷ উল্টো সমাজ-সংসারের কাছ থেকেই অনেকের ভাগ্যে জুটেছে আরো বেশি বঞ্চনা, হয়রানি আর নির্যাতন৷

সহায়-সম্বলহীন রাহেলা, আমেনা আর রাসমনিরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব বীর মায়েদের পাশে এসে দাঁড়ান৷ তাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন তাঁদের দেখাশোনার ভার গ্রহণের৷ কিন্তু বঙ্গবন্ধু পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে আর কোন সরকার প্রধান ফিরে দেখেননি এসব বীরাঙ্গনাদের দিকে৷ ডয়চে ভেলের সাথে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে শামসুন্নাহারের আক্ষেপ, ‘‘বঙ্গবন্ধু আমাদের মাথায় হাত দিয়ে বলে গিয়েছিলেন আমাদের জীবন-জীবিকার দায়িত্ব সব তাঁর৷ কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেও আমাদের কোন খোঁজ খবর নিলেন না৷ সরকারের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ কিংবা কোন ভাতাও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি৷''

Raju Bala Sirajgonj Bangladesh
বীরাঙ্গনা রাজু বালাছবি: Shafina Lohani

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ড. নীলিমা ইব্রাহীমের নেতৃত্বে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের একটা উদ্যোগ শুরু সেই সময় থেকেই৷ পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ না থাকলেও বেসরকারি সংগঠন সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থা এসব নির্যাতিত নারীদের লালন ও তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মুক্তিযোদ্ধা সাফিনা লোহানীর নেতৃত্বে পরিচালিত সংস্থাটির ছায়াতলে বর্তমানে রয়েছেন ২১ জন বীরাঙ্গনা৷ তাঁদেরই একজন ৫০ বছর বয়সি শামসুন্নাহার৷

Kamola Begum Bindu Parha
বীরাঙ্গনা কমলা বেগমছবি: Shafina lohani

শামসুন্নাহার ডয়চে ভেলের কাছে তাঁর করুণ কাহিনী তুলে ধরেন৷ জানালেন, ‘‘বিয়ের মাত্র তিন মাস পর দেশে যুদ্ধ বাধে৷ আর যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর চোখের সামনে দুই সারিতে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে পাক সেনারা৷ এরপর বর্বরোচিত নির্যাতন নেমে আসে আমার নিজের উপর৷ রাজাকার ও পাক সেনাসহ ১৩ জন একের পর এক ধর্ষণ করে৷ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় নদীর ধারে৷'' তবুও ভাগ্য জোরে বেঁচে যান আছিয়া৷ কিন্তু আর কখনও স্বামীর খোঁজ পাননি৷ শ্বশুর-শাশুড়ি কিংবা আত্মীয় স্বজনও তাঁকে আশ্রয় দেয়নি৷ সেই থেকে সমাজের গ্লানি ও ঘৃণা সহ্য করে যাচ্ছেন৷ অভাব-অনটনের মাঝে কোনরকমে দিন কাটাচ্ছেন৷

তবে আছিয়া, রাহেলার মতো এসব বীর মায়েদের জাতির কাছে চাওয়া খুব বেশি কিছু নয়৷ নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি আর যুদ্ধের সময় নারকীয় তাণ্ডবের হোতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার৷ বাংলার এসব বীরাঙ্গনা পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেওয়ার আগেই তাঁদের এই চাওয়া পূরণে সরকার এগিয়ে আসুক সেই দাবিই জোর দিয়ে বললেন বীরাঙ্গনাদের অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত মুক্তিযোদ্ধা সাফিনা লোহানী৷ একইসাথে বাঙালি জাতি ও সমাজ এসব বীর নারীদের তাঁদের ত্যাগ ও বীরত্বের জন্য সম্মান জানাবে এটিই সবার প্রত্যাশা৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য