1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিষাক্ত ইলেকট্রনিক বর্জ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঝুঁকির কারণ

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০

ইলেকট্রনিক বর্জ্যের বিষাক্ত জিনিসগুলো যদি আলাদা না করা হয় এবং সঠিকভাবে নতুন করে প্রক্রিয়াজাত না করা হয়, তাহলে এই সব বর্জ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্রমশই ঝুঁকি হয়ে দেখা দেবে৷

https://p.dw.com/p/M8vo
ই-বর্জ্যের কারণে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্য জনিত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছে বিশ্বছবি: AP

জাতিসংঘ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোতে ইলেকট্রনিক বর্জ্য পুর্নব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় না৷ প্রায়ই দেখা যায় যে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলো সেখানে তেমন নিরাপদ নয়৷

আগামী দশ বছরে বিশেষ করে চীন ও ভারতের মত দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশগুলোতে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির বিক্রি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তার এই প্রতিবেদনে জানিয়েছে৷

‘পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ : ই-বর্জ্য থেকে সম্পদ' শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৪০ মিলিয়ন টন ইলেট্রনিক বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে৷

ইউএনইপি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখিম স্টাইনার বলেন, ইলেকট্রনিক বর্জ্যগুলোর সঠিক ব্যবস্থা করাই শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, অবশ্যই জরুরি৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সব ইলেকট্রনিক জিনিসে যেসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে তা হচ্ছে - সীসা, ক্যাডমিয়াম, পারদ, ক্রোমিয়াম, পলিব্রোমিনেটেড বাইফিনাইল৷ আর এই সব পদার্থ মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে, এগুলোর ক্রিয়ায় কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এই সব রাসায়নিক ক্ষতিকারক পদার্থের জন্য জন্মগত ত্রুটিও দেখা দেয়৷

ইন্দোনেশিয়ার অবকাশকেন্দ্র বালিতে একশটিরও বেশি দেশ থেকে আসা পরিবেশ মন্ত্রীদের এক বৈঠকে এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়৷ এতে ১১টি উন্নয়নশীল দেশের সংশ্লিষ্ট তথ্যউপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে৷ ফেলে দেয়া কম্পিউটার, প্রিন্টার, মোবাইল ফোন, পেজার, ক্যামেরা, মিউজিক প্লেয়ার, ফ্রিজ, খেলনা, টেলিভিশন ও অন্যান্য বর্জ্যের ভিত্তিতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ই-বর্জ্য প্রজন্মের একটা পরিসংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে৷৷

রিপোর্টে বলা হয়, চীন বছরে ২.৩ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপন্ন করে৷ই-বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা সত্তেও চীন এখনও উন্নত দেশগুলোর বর্জ্য পদার্থ ফেলার এক বড় জায়গা হয়ে রয়েছে৷

জাতিসংঘের গবেষণা ভিত্তিক এই রিপোর্টে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে পুরাতন কম্পিউটার থেকে ই-বর্জ্যের পরিমাণ ২০০৭ সালের মাত্রার চেয়ে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ বেড়ে যাবে এবং ভারতে তা বাড়বে ৫০০ শতাংশ৷ মোবাইল ফোনের বর্জ্যের পরিমাণ চীনে সাত গুণ ও ভারতে ১৮ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন বিক্রি হয়৷ ২০০৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৯ কোটি ৬০ লক্ষ৷

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাজেল অ্যাকশ্যান নেটওয়ার্ক বিষাক্ত বর্জ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ এই সংস্থার কর্মকর্তা জিম প্লাকেট বলেন, বছরের পর বছর চীনে বিপুল পরিমাণ বাতিল ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে৷ তিনি জানান, চীনের গুয়াংদং প্রদেশের একটি জায়গায় মানুষ প্রস্তর যুগের প্রযুক্তি দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি যুগের বর্জ্য পদার্থের মোকাবিলা করা হচ্ছে৷ আর এটা ঘটছে প্রতিদিন৷ ফলে সমস্যাটা আরও গুরুতর হচ্ছে৷

স্টাইনার বলেন, চীনই যে শুধুমাত্র এই সমস্যার সম্মুখীন তা নয়৷ ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকো সহ অন্যান্য দেশও পরিবেশগত ও স্বাস্থ্য জনিত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে ই-বর্জ্যের কারণে৷

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর কনরাড অস্টারভাল্ডার বলেন, ইলেকট্রনিক বর্জ্য সমস্যার সমাধান সবুজ অর্থনীতির দিকে উত্তরণের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নির্দেশ করবে৷ তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনটি নতুন প্রযুক্তির কাঠামো ও কৌশল উপস্থাপন করেছে যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালার সঙ্গে সমন্বিত করে ই-বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরিত করা যেতে পারে৷ তৈরি হতে পারে নতুন পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা৷

এই রিপোর্টে উন্নয়নশীল দেশের সরকারদের ই-বর্জ্য পরিচালনা কেন্দ্র গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে৷

প্রতিবেদক : আসফারা হক

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক