1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ব্র্যান্ড বেঙ্গল’

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা৩ মার্চ ২০১৪

বাঁকুড়ার টেরাকোটা থেকে ডোকরার পুতুল, কালীঘাটের পট থেকে নয়াগ্রামের পটচিত্র, জয়নগরের মোয়া থেকে বর্ধমানের মিহিদানা – এগুলিও এবার প্রতিনিধিত্ব করবে পশ্চিমবঙ্গের৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন সেটাই৷

https://p.dw.com/p/1BHw1
Mamata Banerjee Ministerpräsidentin West Bengal
পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ফাইল ফটো)ছবি: Prabhakar Mani Tewari

ভারতে কলকাতা বিমান বন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনটির কাজ এগোচ্ছিল ঢিমে তালে৷ একে তো সারা দেশের মধ্যে একমাত্র কলকাতার নতুন টার্মিনালের কাজই দীর্ঘদিন স্থগিত হয়ে ছিল বামপন্থি কর্মী ইউনিয়নের লাগাতার বিরোধিতায়৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই প্রথম যে কটি বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করতে জোর দিয়েছিলেন, তার মধ্যে একটি হলো কলকাতা বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণ এবং নতুন টার্মিনাল ভবনটি চালু করা৷ সেই সময় অনেকেই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর এই হঠকারিতার সমালোচনা করেছিলেন, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনো কিছুকেই আমল দেননি৷

ঠিক যেমন পশ্চিমবঙ্গ তথা মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘ব্র্যান্ড বেঙ্গল'-কে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তুলে ধরতে জনপ্রিয় বলিউড ফিল্মস্টার শাহরুখ খানকে রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করার সিদ্ধান্তও বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছিল৷ ভারতের টিভি, রেডিও আর খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে তখন পশ্চিম ভারতের গুজরাট রাজ্যের হয়ে প্রচার করছেন আর এক মেগা ফিল্মস্টার অমিতাভ বচ্চন৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত তার থেকেই আইডিয়াটা পেয়েছিলেন এবং হাজার সমালোচনা সত্ত্বেও আইপিএল ক্রিকেটের ফাইনাল থেকে কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভাল, সর্বত্র শাহরুখ খান প্রোমোট করে গেছেন এই ব্র্যান্ড বেঙ্গলকে৷

সেই উদ্যোগেরই আর একটি ফসল, কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনে ‘বিশ্ব বাংলা' নামে একটি কাউন্টার, যেখানে একই ছাদের তলায় মিলবে ঐতিহ্যগতভাবে যা কিছু বাংলার, বাঙালির, সেই সব জিনিসই৷ পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত শান্তিপুরী বা ধনেখালি তাঁতের শাড়ি, মহার্ঘ জামদানি বা আরও মহার্ঘ রেশমবস্ত্র, মুর্শিদাবাদের সিল্ক থেকে বিষ্ণুপুরি বালুচরী, বাটিকের কাজ থেকে কাঁথার কাজ, পোড়ামাটি. ডোকরা থেকে শুরু করে হাতির দাঁতের কাজ, কৃষ্ণনগরের ঘূর্নির বিখ্যাত পুতুল, পাটের কাজ, পটচিত্র, কালীঘাটের পট, ইত্যাদি সবই দেখা এবং কেনার সুযোগ মিলবে প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে তৈরি এই ‘বিশ্ব বাংলা'-য়৷

হস্তশিল্প ছাড়াও বিশ্ব বাংলায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের বিখ্যাত সব খাবার৷ তার মধ্যে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা বা জয়নগরের মোয়া যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে কালিম্পংয়ের চিজ, দার্জিলিংয়ের চা, কৃষ্ণনগরের সরভাজা-সরপুরিয়া, মালদার আমসত্ত আর কাসুন্দি, সুন্দরবনের এবং ডুয়ার্সের মধু৷ এছাড়া উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল বা মরশুমি নলেন গুড়ের মতো জিনিসও থাকবে৷ আন্তর্জাতিক গুণমান নিশ্চিত রেখে এইসব জিনিস সংগ্রহ করা হবে তাদের নিজস্ব অঞ্চল থেকে৷

পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরের পরিকল্পনায় এইরকম আরও তিনটি বিশ্ব বাংলা শোরুম আছে, যেগুলি হবে মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, এসপ্ল্যানেড এবং দক্ষিণাপণ শপিং কমপ্লেক্সে৷ ক্রমশ এই শোরুম ছড়িয়ে দেওয়া হবে দিল্লি, মুম্বই, ব্যাঙ্গালোরের মতো ভারতের অন্যান্য বড় শহরের বিমানবন্দরগুলিতে৷ অদূর ভবিষ্যতে অ্যামেরিকা, ক্যানাডা এবং ইওরোপের বিভিন্ন বিমানবন্দরে, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককেও এমন শোরুম চালু করতে আগ্রহী সরকার৷

ব্র্যান্ড বেঙ্গল-কে তুলে ধরার এই উদ্যোগের পাশাপাশিই এসেছে সুখবরটা যে, পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক ৩৫টি ব্র্যান্ড রয়েছে ভারতের সেরা ১০০০টি ব্র্যান্ডের তালিকায় এবং সবকটিই রয়েছে প্রথম ২৫০টি ব্র্যান্ডের মধ্যে৷ মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের ঠিক করে দেওয়া মাপকাঠির ভিত্তিতে ভারতের ট্রাস্ট রিসার্চ অ্যাডভাইসারি সংস্থা সম্প্রতি সমীক্ষা চালিয়ে চলতি ২০১৪ সালের যে ব্র্যান্ড ট্রাস্ট রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতেই ওই ৩৫টি ব্র্যান্ডের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সম্ভাবনার ঘুরে দাঁড়ানোর এই ছবি ধরা পড়েছে৷ এই ৩৫টি ব্র্যান্ডের প্রতিটিই পশ্চিমবঙ্গ থেকে সারা ভারতে এবং কখনও কখনও আন্তর্জাতিক স্তরেও সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করছে৷ এদের মধ্যে ১৫টি ব্র্যান্ড এই প্রথম ব্র্যান্ড ট্রাস্ট রিপোর্টে জায়গা পেল, বিভিন্ন নামজাদা বহুজাতিক পণ্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে রীতিমত পাল্লা দিয়ে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্র্যান্ড বেঙ্গলের পক্ষে সেটা নিঃসন্দেহে সুখবর৷