1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী মুক্তিযোদ্ধা

২১ মার্চ ২০১২

লাখো শহীদের রক্ত এবং লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার পর দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সমাজসেবা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে যুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধা রাশিদা আমিন৷ তবে দেশের অবস্থা নিয়ে দুঃখ এখনও রয়ে গেছে তাঁর হৃদয়ে৷

https://p.dw.com/p/14OMQ
Rasheda Aminছবি: The Bangladesh Observer

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলার এক পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ চিন্তা করলেন যে, ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে হামলা চালাতে হবে৷ যাতে করে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী চলমান যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ও সাফল্যের ব্যাপারে একটি ইতিবাচক ধারণা পায়৷ পরিকল্পনা অনুসারে সেই হোটেলে হামলা চালানোর জন্য অন্যদের সাথে রাশিদা আমিন এবং খালেদা খানমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল৷

এই অভিযান প্রচেষ্টা সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা রাশিদা বলেন, ‘‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের অভিযান চালানোর জন্য আমাদেরকে খবর দেওয়া হয়েছিল৷ পরিকল্পনা অনুসারে আমি এবং খালেদা আপা ঢাকায় গিয়ে পৌঁছাই৷ আমাদের লক্ষ্য ছিল ঐ হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো৷ যাতে করে আমাদের যুদ্ধের পরিস্থিতি বিশ্ব নেতাদের নজরে পড়ে৷ কিন্তু এই অভিযান প্রচেষ্টার এক পর্যায়ে আমাদের দলের অন্যতম সদস্য মেসবাহ ভাই প্রায় ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে যান৷ ফলে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ আর শত্রুদের সতর্কতার মাত্রাও ভিন্ন রূপ নেয়৷ এরপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই অভিযান বাতিল করতে হয়েছিল৷ তবে এই অভিযান সফল হলে সেটা খুব বড় একটা ঘটনা হতো৷''

Freiheitskämpferin Rasheda Amin aus Bangladesch
ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে হামলায় অংশ নিয়েছিলেন রাশিদা আমিনছবি: The Bangladesh Observer

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রতিটি দিনই ছিল ঘটনাবহুল৷ সেসব ঘটনার মধ্য থেকে কয়েকটি বিশেষ ঘটনার কথা জানালেন রাশিদা আমিন৷ তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের বাড়িতে বড় একটি ট্রানজিস্টারের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ স্বাধীন বাংলা বেতার ও বিবিসি'র খবর শুনতো৷ একদিন প্রায় ৫০-৬০ জন মানুষ বসে খবর শুনছিলেন৷ এমন সময় হঠাৎ কেউ খবর দিল যে, পাক সেনারা এদিকে আসছে৷ এমন অবস্থার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলাম না৷ ফলে এই খবর শোনার সাথে সাথে সবাই যে যার মতো পালানো শুরু করলো৷ আমরা মেয়েরাও তখন নিরাপদ ছিলাম না৷ তাই আমরাও বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বাড়ির পেছনে পাট ক্ষেতে লুকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ৷ এছাড়া আরেকদিনের ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে৷ সেটি ছিল পালং থানা অভিযানের পরপরই৷ আমরা খবর পেলাম গ্রামে পাক সেনারা হামলা চালাবে৷ ফলে খালেদা আপা কিছু মেয়েকে নিয়ে গলা পর্যন্ত পানি ভেঙে একদিকে চলে গেলেন৷ আর আমি অন্য মেয়েদের নিয়ে আমাদের একটি স্পিড বোটে উঠে রওয়ানা দিলাম৷ তবে নৌকাটির মটর খুলে রাখা ছিল৷ আমরা নৌকা নিয়ে গ্রামের শেষ প্রান্তে পাট ক্ষেতের আড়ালে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম৷ সেখান থেকে আমরা দেখতে পাই যে, পাক সেনারা বাজারে আগুন ধরিয়ে দিল এবং সেই আগুনের ছাই উড়ে আমাদের কাছাকাছি পড়ছিল৷ সেই অভিযান শেষ করে পাক সেনারা চলে গেলে প্রায় মধ্য রাতে আমরা একটি বাড়িতে গিয়ে উঠলাম৷ এক স্কুল শিক্ষকের বাড়ি ছিল এটি৷ তিনি আমাদের মোটা চালের ভাত আর ডাল রান্না করে খেতে দিয়েছিলেন৷''

১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে আবারও লেখাপড়া শুরু করেন রাশিদা আমিন৷ একইসাথে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন৷ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পরিষদে পরপর তিনবার বিভিন্ন পদে থেকে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি ছাত্রজীবন শেষ করার পরও এমন পেশায় থাকতে চান যাতে করে দেশ গড়ার কাজে ভূমিকা রাখতে পারেন৷ তাই নিজেকে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত করেন৷ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস'সহ বিভিন্ন বার্তা সংস্থা ও পত্রিকায় কাজ করেছেন রাশিদা আমিন৷ বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মহিলা সাংবাদিক ফোরামের সভানেত্রী এবং সার্ক'ভুক্ত দেশসমূহের নারী সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সাউথ এশিয়ান উইমেন ইন মিডিয়া'র বাংলাদেশ শাখার প্রধান৷ এছাড়াও বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশিদা আমিন৷

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেকের মতোই ক্ষোভ এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিক রাশিদা আমিন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা দেখে শুধু মনে হয় যে, আমরা তো এ রকম দেশ চাইনি৷ চেয়েছিলাম উন্নত, সমৃদ্ধ ও সত্যিকারের স্বাধীন একটি দেশ৷ তাই দেশের এ অবস্থা দেখে কষ্ট লাগে৷ তবে স্বাধীনতার দরকার ছিল এবং সেটা আমরা পেয়েছি৷ কিন্তু দেশটাকে আমরা যেভাবে গড়তে চেয়েছিলাম, সেভাবে আমরা গড়ে তুলতে পারিনি৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য