1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক

২৮ জানুয়ারি ২০১১

খরা এবং ভূমিধসে নাব্যতা হারাচ্ছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক৷ অসংখ্য চর জেগে উঠেছে এর নৌ-চলাচল পথে৷ উজানে শুকিয়ে গেছে কর্ণফুলি ও কাছালং নদী৷

https://p.dw.com/p/106Nt
ছবি: DW

ঢাকা থেকে বেশ কয়েক ঘন্টার পথ পেরিয়ে যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে পৌঁছলাম তখন কেবল সন্ধ্যা৷ পাহাড়ি হাওয়া এসে লাগছে গায়ে৷ চারিদিকে বুনো গন্ধ৷ পাহাড়ের গায়ে ঘরবাড়ি৷ শহরটিকে প্রায় ঘিরে রেখেছে কাপ্তাই লেক৷ সেই লেক আর পাহাড় থেকে দলে দলে পাখি ছুটে আসছে৷ করছে কিচির মিচির৷ পরদিন ভোরে কাপ্তাই লেক অভিযান! সকালেই দে ছুট৷ রাঙ্গামাটির রাজবাড়ি ঘাটে বাঁধা ছিল দেশি ইঞ্জিন নৌকা৷ ছুটতে শুরু করলো সেটি৷ ষাটের দশকে নির্মিত এই লেক৷ বাংলাদেশের একমাত্র মনুষ্য নির্মিত লেক৷ সেই সময় যখন বাঁধ দেয়া হলো, পানির গতিপথ দেওয়া হলো আটকে, সে সময় চাকমা রাজবাড়িসহ লাখো আদিবাসী হয়েছিলেন বাস্তুচ্যুত৷ পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি ও ৭শ'বর্গ কিলোমিটার বনভূমি৷ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান করার জন্য বানানো হয়েছিল এই কৃত্রিম হ্রদটি৷ ১ হাজার ৭২২ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই কাপ্তাই লেক৷ বর্ষার ভরা যৌবনে চারপাশে আরো ৮'শ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ডুবে যেত পানিতে এক সময়৷ তবে এই দৃশ্য এখন আর নেই৷ চারপাশের পাহাড়ের ভূমি ধসে এবং স্থানে স্থানে চর জেগে ওঠায় হ্রদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ মোটর লঞ্চ, স্পিডবোট এবং ডিজেল চালিত যান্ত্রিক নৌকা নিঃসৃত কার্বনে লেকের পানির রং এখন বিবর্ণ৷ ধনুকের মত বাঁকা ৬৭০ মিটার দীর্ঘ কাপ্তাই বাঁধের রয়েছে ১৬টি স্লুইস গেট৷ এরপর দীর্ঘদিনেও কাপ্তাই ড্যামের কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি৷ কাপ্তাই ড্যামের আয়ুষ্কাল ৯০ বছর৷ সেই হিসাবে ২০৫০ সাল পর্যন্ত হয়তো টিঁকে থাকবে এটি৷

Kaptai Lake in Bangladesh Flash-Galerie
খরা এবং ভূমিধসে নাব্যতা হারাচ্ছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকছবি: DW

ইঞ্জিন চালিত নৌকায় এই সব কাহিনী জানাচ্ছিলেন পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান৷ তিনি জানালেন নানা সমস্যা এখন এই লেককে কেন্দ্র করে৷ বিশেষ করে এর পরিবেশ প্রতিবেশ এখন হুমকির মুখে৷

Kaptai Lake in Bangladesh
ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলছেন মনিস্বপন দেওয়ানছবি: DW

লেকের মধ্যেই ছোট্ট একটি দ্বীপের মতো পাহাড়৷ সেখানেই আছে একটি খাবার হোটেল৷ নাম 'পেঁদা টিংটিং'৷ চাকমা ভাষায় দেওয়া নাম৷ বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় পেটভর্তি করে খাওয়া৷ সেই ছোট্ট পাহাড়ের এক কোণে বসে মনিস্বপন দেওয়ানকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, কেন এই পরিবেশ প্রতিবেশ হুমকির মুখে? তিনি জানালেন, উন্নয়নের নামে এখানে যে সব অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তা সঠিক নিয়মে না হওয়ায় এখানে নানা সমস্যা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, সব কিছুরই একটা আয়ুঃস্কাল থাকে৷ কাপ্তাই লেকেরও আছে৷ কিন্তু নানাবিধ পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপ, বন ধ্বংসের ফলে এখানে বিশেষ করে ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটছে৷ এ সব কারণে এই লেকটি এখন একটি অগভীর লেকে পরিণত হয়েছে৷ আজ হোক আর কাল হোক এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে৷ তিনি বললেন, যদি এই বাঁধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়, তাহলে এক সময় মানুষের খাদ্য চাহিদার যোগান দিতেই এই বাঁধটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে বলে আমি মনে করি৷ তাহলে পাওয়া যাবে অনেক জমি৷ নতুন করে চাষের জমি হয়তো দেওয়া হবে অন্যদের৷ আর দীর্ঘদিন ধরে ভূমি সমস্যার সমাধান না হওয়ার পর নতুন এই সমস্যা এখানে সৃষ্টি করবে রাজনৈতিক অস্থিরতা৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়