1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদেশীদের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে উত্‌সাহ দিচ্ছে জার্মান সরকার

সঞ্জীব বর্মন ১৬ জুলাই ২০০৮

জার্মানিতে বসবাসরত অনেক বিদেশী নাগরিক জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে উত্‌সাহী নন৷ সরকার এই প্রবণতা বন্ধ করতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে৷ অন্যদিকে হবু নাগরিকদের জন্য চালু হচ্ছে এক নতুন পরীক্ষা-ব্যবস্থা৷

https://p.dw.com/p/Edd7
নিজের নাগরিকত্ব ছেড়ে জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই সহজ নয়ছবি: picture-alliance/Bildfunk

প্রেক্ষাপট

ইউরোপে অভিবাসী বা বহিরাগতদের ভূমিকা সম্পর্কে এই মুহূর্তে নানা রকম আলোচনা চলছে৷ একদিকে অভিবাসীদের প্রয়োজনীয়তা, তাদের প্রবেশের বৈধ বা অবৈধ পথ বা কাঠামো সম্পর্কে যেমন প্রশ্ন উঠছে, অন্যদিকে যে সব বিদেশী বহু বছর ধরে ইউরোপে বসবাস করছেন, সমাজের মূল স্রোতে তাদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টিও বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷

জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশীদের সংখ্যা কম নয়৷ অনেক বিদেশী বহু বছর ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন৷ তাঁদের একটা বড় অংশের এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস বা কাজ করার অধিকারও রয়েছে৷ অনেকেরই জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগও রয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যে এই অধিকার থাকা সত্ত্বেও অনেক বিদেশী জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে মোটেই উত্‌সাহী নয়৷

সমাজে সম্পৃক্ত হওয়ার চাবিকাঠি

এই প্রবণতা কাটাতে জার্মান সরকার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে৷ জার্মান সরকারের বিদেশী বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারিয়া ব্যোমার গত সপ্তাহেই এই লক্ষ্যে নতুন এক কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন৷ তিনি বলেন, ……জার্মানির নাগরিকত্ব প্রত্যেকের জন্য সুবিধা বয়ে আনতে পারে৷ সামাজিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও নিশ্চয় এর একটা গুরুত্ব রয়েছে৷ তাছাড়া নাগরিক হিসেবে মানুষ নিজেকে বৃহত্তর সমাজের এক অংশ হিসেবে গণ্য করতে পারে৷ …আমরা– - কথাটা বলতে পারলে তার এক আবেগের দিক রয়েছে, যা আমার মতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷––

Die Integrationsbeauftragte der Bundesregierung, Maria Böhmer
জার্মান সরকারের বিদেশী বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারিয়া ব্যোমারছবি: picture-alliance/ dpa

গত কয়েক বছরে জার্মান সমাজে বিদেশীদের সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন ঘটেছে৷ এমনকী যেসব বিদেশী কম সময়ের জন্যও জার্মানিতে বসবাস করতে আসছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জার্মান ভাষা শিক্ষা ও জার্মানির সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করার বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ …ভাষা যোগাযোগের চাবিকাঠি– - এই উপলব্ধি দেরীতে হলেও স্বীকৃতি পাচ্ছে৷ ভাষা শেখার সুযোগ-সুবিধা অতীতের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে৷ অনেক বিদেশী নাগরিক সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারও করছেন৷ যাঁরা বহু বছর জার্মানিতে থেকেও জার্মান ভাষা রপ্ত করতে পারেন নি বা তার সুযোগ পান নি, তাঁরাও দেরীতে হলেও উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বাধ্যতামূলক পাঠক্রম শেষ করার পর তাঁদের সামনে অনেক নতুন সুযোগও খুলে যাচ্ছে৷ এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো অনেক সমালোচনা শোনা গেলেও নতুন এই উদ্যোগ সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷

নাগরিকত্বের যোগ্যতা প্রমাণে পরীক্ষা

জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে একদিকে যেমন উত্‌সাহ দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে তার পূর্বশর্তও নতুন করে স্থির করে দেওয়া হচ্ছে৷ আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে প্রত্যেক আবেদনকারীকে এক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে, যে তিনি জার্মান নাগরিক হওয়ার যোগ্য কি না৷ নতুন এই কাঠামোর উপযোগিতা সম্পর্কে ব্যোমার বলেন, ……যে সব বিদেশী দীর্ঘদিন ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন অথবা সবে এদেশে এসেছেন - তাঁরা যদি জার্মানির নাগরিকত্ব চান, তাঁদের কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে৷ এর লক্ষ্য হল - আমরা এমন সচেতন নাগরিক গড়ে তুলতে চাই, যিনি নিজের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং নাগরিক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারেন৷––

জার্মান সমাজের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে জার্মানির সংবিধান সম্পর্কে জ্ঞানকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ সংবিধানের ১৯টি ধারার ভিত্তিতেই দেশের সব আইন প্রণয়ন করা হয়৷ তাই দেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধানের মূলমন্ত্র আত্মস্থ করা প্রয়োজন৷ জার্মান নাগরিক হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করার সময় যে কোনো বিদেশীর জানা উচিত, তিনি কোন্ আদর্শ গ্রহণ করছেন৷

Fragenkatalog der Ausländerbehörde
জার্মান নাগরিক হতে হলে এবার থেকে পরীক্ষা পাশ করতে হবেছবি: picture-alliance / dpa/dpaweb

পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক

জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশী বা যে সব বিদেশী জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে চান, নীতিগতভাবে তাঁদের সমাজে আরও সম্পৃক্ত করার বিষয়টি নিয়ে তেমন বিতর্ক দেখা যাচ্ছে না৷ জার্মানিতে থাকতে গেলে দেশের ভাষা-সংস্কৃতি, অধিকার বা দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন অনেকেই বোধ করছেন৷ কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে বেশ বিতর্ক দেখা যাচ্ছে৷ জার্মানির সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, দেশের রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে সম্পর্কে ঠিক কতটা জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, সেই মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷

অনেকের কাছে সেই সব প্রশ্ন এতই কঠিন মনে হচ্ছে, যে তাঁরা প্রশ্ন করছেন, ……কোনো জার্মান নাগরিক - যিনি এদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং শিক্ষালাভ করেছেন - তিনি কি এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?–– জার্মান সরকারের বিদেশী বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারিয়া ব্যোমারের মতে, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরীক্ষার্থী এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন৷ প্রথম বার না পারলেও ক্ষতি নেই - পরীক্ষা আবার দেওয়া যাবে৷ জার্মানিতে এক তুর্কি সংগঠনের সভাপতি কেনান কোলাত এই পরীক্ষার সমালোচনা করে বলেন, ……১৯৯০ সাল থেকে আমরা লক্ষ্য করছি, যে বিদেশীদের জন্য একের পর এক বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ জার্মান ভাষাজ্ঞান পরীক্ষার বিরুদ্ধে আমাদের কিছু বলার নেই৷ কিন্তু এই পরীক্ষার মান বার বার বাড়ানো হচ্ছে৷ এখন আবার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য নতুন পরীক্ষা চালু করা হচ্ছে৷ মানুষ এক সময় বলতে শুরু করবে, ……আমাকে তো সব সময় কোনো না কোন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে!–– এই ধরনের পরীক্ষার বদলে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করা উচিত বলে আমি মনে করি, যাতে তাঁরা সানন্দে জার্মানিতে বসবাস করতে উত্‌সাহ পান৷ তাঁদের কাছ থেকে শুধু যোগ্যতা প্রমাণের দাবি না করে তাঁদেরকে বরং কিছু দেওয়া উচিত৷––

ব্যোমার অবশ্য এই সমালোচনার সঙ্গে একমত নন৷ তাঁর মতে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু অভিবাসীদের জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে - তাঁদের কোনো আদর্শে দীক্ষিত করা এর লক্ষ্য নয়৷

সম্প্রতি জার্মানিতে বসবাস করতে এসে ভাষা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যাঁদের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, কলকাতা থেকে আসা তমসা গোস্বামী তাঁদের মধ্যে একজন৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাত্‌কারে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান