1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইইউ-র নাগরিকত্ব কেনা

ইউলিয়া মানকে/আরবি২৪ নভেম্বর ২০১৩

শুধু অর্থই যে মানুষকে সুখী করতে পারে না, একথা সবাই জানে, কিন্তু অর্থ যে ইউরোপের কোনো দেশের নাগরিকত্বও এনে দিতে পারে, তা হয়ত অনেকে জানেন না৷ সম্প্রতি ছোট্ট দ্বীপ-রাষ্ট্র মাল্টা এই রকমই এক সিদ্ধান্তের কথা জানালো৷

https://p.dw.com/p/1AMuC
(বাম থেকে) জার্মানি, পর্তুগাল আর পোল্যান্ডের পাসপোর্টছবি: Katarzyna Domagala-Pereira

ইউরোপের কোনো দেশের পাসপোর্ট পাওয়া অনেকের কাছেই বেশ লোভনীয় ব্যাপার৷ এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো দেশে শান্তিতে বসবাস করা যায়, চাকরি বা ব্যবসা করা যায়৷ অনেক দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করা যায়৷ এই স্বপ্ন অনেকের৷ আর কিছু অর্থের বিনিময়ে অনেকের এই স্বপ্নই বাস্তবে পরিণত করতে যাচ্ছে মাল্টা৷ ৬৫০,০০০ ইউরো দিলেই কেনা যাবে দেশটির পাসপোর্ট৷

দেশের উপার্জন বাড়াতে ইচ্ছুক

মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাস্কাট এইভাবে দেশের উপার্জন বাড়াতে ইচ্ছুক৷ এছাড়া সারা বিশ্বের বিত্তশালীদের দেশটিতে আসার ব্যাপারে আকৃষ্ট করতে চান তিনি৷ এর ফলে বছরে ২০০ থেকে ৩০০ আবেদনপত্র পাওয়া যাবে বলে আশা করে মাল্টা সরকার৷ প্রথম বছর নাগরিকত্ব বিক্রির মাধ্যমে ৩০ মিলিয়ন পাওয়া যাবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী মাস্কাট৷ মাল্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় দেশটির নাগরিকত্ব পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি ২৭ দেশেও কাজ ও বসবাসের সুযোগ পাবেন লোকজন৷ সহজ ভিসা চুক্তি থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াতও সহজ হবে৷

Malta Gerettete Bootsflüchtlinge 12.10.2013
‘‘একদিকে ধনীরা মাল্টার নাগরিকত্ব সহজেই কিনতে পারবেন, অন্যদিকে বহু শরণার্থী বার বার দেশটিতে আসার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যা অসন্তোষের সৃষ্টি করতে পারে’’ছবি: Reuters

অন্যদিকে মাল্টার বিরোধী দল এই ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলছে, রাশিয়ার মতো দেশগুলির বিত্তশালীরা নাগরিকত্ব নিয়ে নিশ্চয়ই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে বসবাস করতে বা টাকা বিনিয়োগ করতে চাইবেন না৷ আর এই ধরনের ব্যবস্থার ফলে কর বাঁচানোর স্বর্গে পরিণত হতে পারে দেশটি৷

শোনা যাচ্ছে সমালোচনার সুর

ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয় অভিবাসন নিয়ে গবেষণা করছেন মেনডেরেস জান্দান৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘নৈতিক দিক দিয়ে বিষয়টিকে আমি মেনে নিতে পারি না৷ একদিক দিয়ে ধনী ব্যক্তিরা মাল্টার নাগরিকত্ব সহজেই কিনতে পারবেন, অন্যদিকে বহু শরণার্থী বার বার দেশটিতে আসার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যা অসন্তোষের সৃষ্টি করতে পারে৷''

Jan Philipp Albrecht Europaabgeordneter der Grünen
গ্রিন পার্টির ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিষয়ক রাজনীতিক ইয়ান ফিলিপ আলব্রেশটছবি: picture-alliance/dpa

গ্রিন পার্টির ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিষয়ক রাজনীতিক ইয়ান ফিলিপ আলব্রেশট এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরেও বহু মানুষ ইউরোপের কোনো দেশের নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা করছেন, যাঁদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু এই মহাদেশটিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে৷ অভিবাসননীতির ক্ষেত্রে সবার জন্য এক ধরনের মানদণ্ড হওয়া উচিত৷''

গবেষক জান্ডান আরো বলেন, নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে শুধু অধিকার নয় কর্তব্যও থাকতে হবে৷ যার মধ্যে পড়ে কর প্রদান করা৷ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এতে আগ্রহী হবে বলে মনে হয় না৷

শোনা যায়, পাঁচ বছর ধরে ১৫ মিলিয়ন ইউরো খাটালে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব পাওয়া যায়৷ আর দেশটির প্রেসিডেন্ট নাকি সম্প্রতি এই পদ্ধতি আরো সহজ করার ঘোষণা দিয়েছেন৷ ভবিষ্যতে তিন মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করলেই সাইপ্রাসের পাসপোর্ট দেওয়া হবে৷

আয়ারল্যান্ডে ২০০১ সাল পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে সহজে নাগরিকত্ব পাওয়া যেত৷ বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প ক্ষেত্রে কোনো প্রকল্পে পাঁচ লক্ষ ইউরো বিনিয়োগ করলে দেশটিতে থাকার অনুমতি পাওয়া যায়, নাগরিকত্ব নয়৷ পর্তুগালে কোনো বাড়ি কিনলে অভিবাসনের অনুমতি পাওয়া যায়৷ স্পেনও এই ধরনের পরিকল্পনা করছে৷ এক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৬০,০০০ ইউরো বিনিয়োগ করতে হবে৷ হাঙ্গেরিতে সরকারি বন্ড কিনলে লোভনীয় বস্তুটি পাওয়া যায়৷ রাশিয়া, চীন ও ভারতের মানুষদের এব্যাপারে আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়৷ অস্ট্রিয়ায় কোনো বিদেশি যদি দেশটির জন্য বিশেষ কোনো অবদান রাখে, তাহলে তাঁকে ‘উপহার' হিসাবে নাগরিকত্ব দেওয়া যেতে পারে৷

Österreichischer Reisepass (Foto: picture alliance) / Eingestellt von wa
অস্ট্রিয়ার পাসপোর্টছবি: picture-alliance/dpa

এই পদ্ধতি কিন্তু সমস্যাবহুল

এইভাবে ‘নাগরিকত্ব বিক্রি করা'-কে সমস্যাময় বলে মনে করেন ম্যুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডিটরিশ ট্র্যানহার্ট৷ তাঁর মতে, খুব কম সংখ্যক মানুষই এই উপায়ে নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহী হবেন৷ ২০১২ সালে বিনিয়োগের বিনিময়ে অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব কেউ পেয়েছে বলে জানা যায়নি৷ এর আগের বছর মাত্র ২৩ জন এই পথে অস্ট্রিয়ার পাসপোর্ট পেয়েছেন৷

জার্মানিতেও যে সব বিদেশি খেলাধুলা বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করা হয়৷ অভিবাসনের ক্ষেত্রে এই ধরনের শ্রেণি বিভেদের ফলে অভিবাসন-ইচ্ছুক সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে, যা কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য