1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিংশ সাহিত্যের কালজয়ী লেখক ফ্রান্স কাফকা

দেবারতি গুহ২৭ জুন ২০০৮

৩-রা জুলাই ফ্রান্স কাফকার ১২৫-তম জন্মদিন৷ চেক ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখক ফ্রান্স কাফকা, জার্মান ভাষায় সাহিত্য চর্চা করতেন৷ নস্ট্যালজিক এই লেখক তাঁর গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলি তুলে ধরতেন আলো-আঁধারির খেলায়৷

https://p.dw.com/p/ES0V
ফ্রান্স কাফকাছবি: AP

কাফকার গল্প-উপন্যাসগুলি ছিল যেন জীবনানন্দ-আবুল হাসানের কবিতার মতো - নিঃসঙ্গ৷ সাদা বরফে মোড়া৷ অনেক সময় আবার কাফকার চিত্রিত চরিত্রগুলির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়, কামু অথবা বেকেটের লেখা চরিত্রগুলির৷ সেই এক জীবনাশক্তি, সেই এক ভাবাবেগ৷ কখনও আবার অ্যাবসার্ড৷ এই যেমন কাফকার লেখা বিখ্যাত গল্প Die Verwandlung, অর্থাত্ The Metamorphosis-এর কথাই ধরা যাক৷

গল্পের নায়ক গ্রেগর, এক বোহিমিয়ান৷ নাগরিক জীবনের জাঁতাকলে জড়িয়ে - অত্যন্ত বিপন্ন৷ যেন আমাদের সময়েরই প্রতিভু৷ সেই গ্রেগর একদিন সকালে জেগে উঠে দেখলো, যে সে নিজের বিছানাতেই একটি বিকট পোকায় পরিণত হয়েছে৷ মসৃন পিঠ, পেট খয়েরী, সরু সরু পা৷ অন্য শরীরে, কি এক দুঃস্বপ্নের আবহ টেনে আনেন কাফকা ! প্রাত্যহিক জীবনে যান্ত্রিকতার কি অসাধারণ অনুষঙ্গ !

ফ্রান্স কাফকার জীবনীকার রাইনার স্টাখ এই যান্ত্রিকতার কথাই তুলে ধরেছেন তাঁর লেখাতে৷ স্টাখ লেখেন, কাফকাকে একটা সময় দিনে দু-বার করে অফিস করতে হতো৷ এমনকি শনিবারেও৷ লেখালেখির জন্য তাঁর হাতে সময়ই যেন আর অবশিষ্ট ছিল না৷ তাই, একটা সময় কাফকার ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, দেখা দেয় মানসিক অশান্তিও৷ কিছুতেই তিনি যেন সে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না৷

ফ্রান্স কাফকার জন্ম হয় ১৮৮৩ সালের ৩-রা জুলাই এখনকার চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ শহরে, একটি মধ্যবিত্ত জার্মান ভাষী ইহুদি পরিবারে৷ ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফ্রান্স বেড়েও ওঠেন প্রাগ শহরে৷ যে শহরে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল কাফকার মননে, অনুভবে এবং অবশ্যই লেখাতেও৷ তাই একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করলেও, কাফকার চোখে যেন সর্বদাই ভাসতো প্রাগের সৌন্দর্য - শীতের সকালে বরফে ঢাকা সাদা ক্যাথিড্রালের চূড়ো অথবা রাতের নিস্তব্ধতা৷ রাইনার স্টাখের কথায়, কাফকার মতিষ্ক ছিল ছায়াছবির মতো৷ অসংখ্য চলমান ছবিতে ভরা৷ যেমনটা আমাদের মাদক নিলে অথবা তরুণ বয়সে হয়ে থাকে৷

প্রাগের সঙ্গে ফ্রান্স কাফকার এই সম্পর্কের কিছু নিদর্শন আজও দেখা যায় সেখানকার কাফকা যাদুঘরে৷ ১৯১৭ সালে যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সময়, কাফকা কিছুদিনের জন্য জার্মানির বার্লিন শহরেও বাস করেছিলেন৷ তবে এরপরও প্রাগের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কোনদিনই কমে নি৷ ফ্রান্স কাফকা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯২৪ সালে৷

The Metamorphosis ছাড়াও, ফ্রান্স কাফকার অন্যন্য বিখ্যাত লেখাগুলি হল - The Trial, Class Relations নামের দুটি উপন্যাস এবং It’s a Wonderful Life নামের ছোট গল্পটি৷ এছাড়াও, আরো অসংখ্য গল্প, ছোট গল্প, নাটক আরো কতো কি লেখেন তিনি! তাঁর কাজকে এক কথায় বলা হতো কাফকাশ৷

কিন্তু দুঃখের বিষয় ফুয়েন্তেস, মার্কোজ, এমনকি কাফকাও কখন মেইন স্ট্রীমে আসতে পারেন নি৷ অন্ততপক্ষে বাংলার পাঠকদের কাছে৷ এতো প্রচার, নোবেল, থিথিসের জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, গ্রিশাম বা অধুনা কিশোর ম্যাজিসিয়ান হ্যারি পটারের তুলনায়, এরা যেন কেউ নন৷