1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাল্টিক সাগরের তলায় গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে বিতর্ক

১১ নভেম্বর ২০১১

রাশিয়া থেকে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতে বাল্টিক সাগরের নীচে বসানো হচ্ছে বিশাল পাইপলাইন৷ তবে এই প্রকল্পকে ঘিরে বিতর্ক কম নেই৷

https://p.dw.com/p/138ek
---
ঠিক এভাবেই বাল্টিক সাগরের নীচে বসানো হচ্ছে বিশাল পাইপলাইনটি

জ্বালানি নিয়ে রাজনীতি

জ্বালানির চাহিদা বেড়ে চলার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে জ্বালানিকে ঘিরে রাজনীতি৷ বেসরকারি সংস্থাগুলি জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে যত সম্ভব কম ব্যয় করে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করতেই ব্যস্ত৷ অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের সরকার বাণিজ্যিক সাফল্য উপেক্ষা করে নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতে অবাস্তব কিছু পদক্ষেপও নিয়ে থাকে৷ রাশিয়া থেকে জার্মানিতে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ করতে সমুদ্রের তলা দিয়ে পাইপলাইন তৈরির যে প্রকল্প চলছে, সেক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না৷ এই পাইপলাইন সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক হওয়া সত্ত্বেও এই প্রকল্পের পদে পদে রাজনীতির ছাপ দেখা যায়৷ যেমন ট্রানজিট মাশুল এড়াতে সমুদ্রের তলা দিয়ে পাইপলাইন তৈরির ব্যয় এত বেশি, যে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার সুফল পেতে বহু বছর লেগে যাবে৷

প্রাকৃতিক গ্যাস বনাম বিকল্প জ্বালানি

শুরু থেকেই এমন এক পাইপলাইন'এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ বিশেষ করে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর ঘোষিত উদ্যোগের সঙ্গে এত ঘটা করে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে আসার অর্থ আছে কি? পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখেছে৷ তাদের হিসেব অনুযায়ী আগামী দুই থেকে তিন দশক ধরে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রয়োজন ও চাহিদা থাকবে৷ ২০৪৫ সালের মধ্যে সব চাহিদাই বিকল্প জ্বালানির মাধ্যমে মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ বার্লিনে সংস্থার রাজনৈতিক দপ্তরের উপ-প্রধান টোবিয়াস ম্যুনশমায়ার এপ্রসঙ্গে বললেন, ‘‘দুই দেশের মধ্যে একটা পাইপলাইন ট্রানজিট মাশুলের বিনিময়ে অন্য কোনো দেশের উপর দিয়ে পাতা হলো, নাকি সমুদ্রের তলায় পাইপলাইন বসানো হলো – গ্রিনপিস'এর দৃষ্টিভঙ্গিতে এতে কিছুই এসে যায় না৷ পরিবেশের যতটা সম্ভব কম ক্ষতি করে এমন পাইপলাইন পাতা হচ্ছে কি না, সেটাই আসল বিষয়৷''

ভুল থেকে শিক্ষা

প্রকল্পের শুরুর দিকে সমুদ্রের তলায় পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কায় বিস্তর হইচই হয়েছিল৷ বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল৷ ওয়ার্লড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড'এর প্রতিনিধি ইয়খেন লাম্প এবিষয়ে বললেন, ‘‘জার্মানিতে আমরা যে সমস্যাটি চিহ্নিত করেছিলাম, সেটা হলো যে সমুদ্রের তলায় পাইপলাইন বসানোর আগে যে খাল কাটা হয়, সেসময়ে নরম মাটির স্তর তুলে ফেলতে হয়৷ তারপর জলের মধ্যেই তা সাময়িকভাবে জমা করা হয়৷ মাটির সেই কণা চারিদিকে ভাসতে থাকে, যার ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু হয়৷ ২০১০ সালের শুরুতে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বলেছিলাম, জলের তলায় সেই মাটি রাখা চলবে না৷''

পরে অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় গ্রিনপিস৷ সংস্থার প্রতিনিধি ম্যুনশমায়ার জানালেন, পাইপলাইন তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর দেখা গেল যে গাসপ্রম সহ যেসব সংস্থা এই প্রকল্পের অংশীদার, তারা বাস্তব পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিতে প্রস্তুত এবং আগ্রহী৷ এমনকী পরিবেশবাদীদের সমালোচনা বা তাদের সংশয়ের কারণগুলিও খতিয়ে দেখে তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে৷ ফলে অন্যান্য অনেক প্রকল্পের তুলনায় এক্ষেত্রে পরিবেশের ততটা ক্ষতি হচ্ছে না৷

Wochenrückblick Kalenderwoche 2011 45 Deutschland Russland Gas Logo der Firma Nord Stream in Lubmin
পাইপলাইন নির্মাণে বা তার পর কোনো কারণে যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তার পরিণাম সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন হবে...ছবি: picture-alliance/dpa

বিকল্প পথ

প্রকল্পের শুরুতে পাইপলাইনের গতিপথ নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল৷ গ্রিনপিস চেয়েছিল, আগেই যেসব পাইপলাইন রয়েছে, ঠিক তার পাশে গ্যাসের নতুন পাইপলাইন বসানো হোক, যাতে নতুন করে পরিবেশের তেমন ক্ষয়ক্ষতি না ঘটে৷ অর্থাৎ রাশিয়া থেকে বেলারুশ ও পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে জার্মানি পর্যন্ত এই পাইপলাইন গড়ে তোলা যেত৷ ইউক্রেনের মধ্য দিয়েও এমন পাইপলাইন যেতে পারতো৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমুদ্রের তলা দিয়েই পাইপলাইন বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো৷ আশেপাশের দেশগুলিও তাদের অনুমতি দিয়ে দিল৷

রাশিয়ার পরিবেশবাদীরা অন্য একটি কারণে এই পাইপলাইনের গতিপথ নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাল্টিক সাগরে বেশ কিছু রাসায়নিক অস্ত্র ডুবে গিয়েছিল৷ তাদের সতর্কতাবাণী শুনে নির্মাতারা ভালো করে বিষয়টি খতিয়ে দেখেছিল৷ প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার ঘুরে গবেষণা জাহাজ সেই সব এলাকা চিহ্নিত করে৷ আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পাইপলাইনের গতিপথে প্রায় ৩,০০০ ধাতব বস্তু সনাক্ত করা গেছে৷ প্রায় ৮০টি মাইন নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে৷ অন্য কোনো বিপদের কারণ ঘটে নি৷ তবে পাইপলাইন নির্মাণ বা তার পর কোনো কারণে যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তার পরিণাম সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন হবে বলে রাশিয়ার পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন৷ তবে নির্মাতারা এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বড়জোর মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে পৌঁছতে পারবে৷ এছাড়া অন্য কোনো ক্ষতি হবে না৷

প্রতিবেদন: ভিয়াচেস্লাভ ইউরিন / সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান