1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বার্লিন প্রাচীরের পতন - ৯ নভেম্বর ১৯৮৯

৩ নভেম্বর ২০০৯

১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বরের সন্ধ্যা৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি এসইডি-এর পলিটব্যুরোর সদস্য গ্যুনটার শাবোভস্কি এক সংবাদ সম্মলনে ঘোষণা দেন, পূর্ব জার্মান নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়া হবে৷

https://p.dw.com/p/KC1Y
ছবি: picture-alliance/ dpa

আর সাথে সাথেই যেন জনতার এক উত্তাল স্রোত বয়ে যায়৷ পূর্ব জার্মানির হাজার হাজার মানুষ সীমানা অতিক্রম করে পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশ করেন৷ জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বা জিডিআর-এর পতনের শুরুটা সেই থেকে৷

প্রতিদিনের মত ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭ টায় সবাই উন্মুখ হয়ে টেলিভিশনের সংবাদ দেখছিলেন৷ বেশ কিছুদিন ধরেই কমিউনিস্ট পূর্বজার্মানি বা জিডিআর-এর অভ্যন্তরীণ ঘটনা সংবাদ শিরোনামে স্থান পাচ্ছিল৷ গণতন্ত্র, ভ্রমণের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছিলেন তৎকালীন পূর্বজার্মানির মানুষ৷ দ্রুত ঘটে যাচ্ছিল ঘটনা৷ এর আগে ১৮ অক্টবর সরকার ও পার্টি প্রধান এরিশ হনেকার এগোন ক্রেন্সের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন৷ কিন্তু নতুন সরকার প্রধানও মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেননি৷ বরং জনতার আন্দোলন আরো জোরদার হচ্ছিল৷ অনেকটা পশ্চিমি কায়দায় সরকারি মুখপাত্র গ্যুনটার শাবোভস্কি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন ডাকছিলেন৷ খুব একটা গুরুত্ব না দিয়েই ভ্রমণের ব্যাপারে নতুন আইনের কথা বলেন তিনি৷

ইটালির একজন সাংবাদিক যখন তাঁকে প্রশ্ন করেন, কবে থেকে নতুন এই আইন চালু হতে যাচ্ছে৷ তখন তিনি ঠিক মত না জেনেই উত্তর দেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে৷' কয়েক মিনিটের মধ্যে ছড়িয়ে যায় চাঞ্চল্যকর এই খবর৷ আর ঘটে যায় ঐতিহাসিক এক ঘটনা৷ নির্মাণের ২৮ বছর পর বার্লিন প্রাচীর খুলে দেয়া হয়৷ পূর্ব জার্মানির জনসাধারণ প্রথমবারের মত কোনো কারণ না দেখিয়ে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে প্রবেশ করতে পারলেন৷ খররটা শুনেই ছুটলেন অনেকে ব্রান্ডেনবুর্গ গেট ও অন্যান্য সীমানা পার হওয়ার স্থানের দিকে৷ সীমান্তরক্ষীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন৷ সীমানা খুলে দেয়ার ব্যাপারে কোনো নির্দেশ তো তারা পাননি৷ কিন্তু মানুষের স্রোত আর কমেনা৷ দেয়ালের এপারে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলেও লোকের ভিড়৷ অবশেষে হাল ছেড়ে দেয় সীমান্ত কর্মীরা৷ ভেঙে যায় প্রতিরোধ৷

মধ্যরাতের কিছু পরে পূর্ব জার্মানি থেকে প্রথম যারা পশ্চিম জার্মানির মাটি স্পর্শ করেন, সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয় তাদের৷ একদম অপরিচিত মানুষেরা জড়িয়ে ধরেন তাদের৷ আনন্দে কেঁদে ফেলেন কেউ কেউ৷ ‘সত্যি পাগল করা এই রাত', এই কথাটি শোনা গেছে সেই রাতে বার বার৷ সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে একজন বলেন, ‘‘আমরা দারুণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলাম৷ এ যেন এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার৷ প্রাচীর আর নেই ৷ প্রাচীর আর নেই!''

বছরের পর বছর জিডিআর-প্রশাসন নাগরিকঅধিকার আন্দোলন দমিয়ে রেখেছিল এবং মানুষের দাবিদাওয়াকে গুরুত্ব দেয়নি৷ চৌঠা নভেম্বর বিরোধীদল ‘নতুন ফোরাম'-এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিলের জন্য মিলিত হয় ক্ষুব্ধ মানুষ পূর্ব বার্লিনের আলেক্সান্ডারপ্লাৎস-এ৷ ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সেদিন৷ এর মধ্যে ছিলেন অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বও৷ যেমন এসেছিলেন অভিনেতা ইয়ান ইওজেফ লিফার্স৷ তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পার্টি ও সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যেন জনতার প্রতিবাদ, মিছিল নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে না পারে৷ রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তারা যে তারাই, একথা যেন বলতে না পারে৷''

তৎকালীন পশ্চিম জার্মান সরকার পূর্ব জার্মানির দ্রুত ঘটে যাওয়া এই সব ঘটনায় হতচকিত হয়ে যায়৷ আর জার্মানির পূর্বাঞ্চলের জনগণ খুব শিগগিরই দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের ব্যাপারে চাপ দিতে থাকে৷ পশ্চিম জার্মানি বা ফেডারেল রিপাবলিক জার্মানির প্রাক্তন চ্যান্সেলর ভিলি ব্রান্ট- এর এক মন্তব্যে তাদের মনে এই আশা আগেই জেগেছিল৷ চ্যান্সেলর ব্রান্ট বলেছিলেন, ‘‘যা অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ, তা এক সঙ্গেই বেড়ে উঠবে''৷

১৯৮৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর, পশ্চিম জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর হেলমুট কোল জিডিআর-এর নতুন সরকার প্রধান হান্স মোড্র-এর সঙ্গে দেখা করার জন্য ড্রেসডেন শহরে যান৷ সেখানে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়৷ হেলমুট কোল সন্ধায় ড্রেসডেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিদ্ধস্ত হয়ে যাওয়া বিখ্যাত গির্জা ফ্রাউয়েনকির্শের সামনে এক বক্তৃতা দেন৷ আর তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে দু জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের সূচনারেখা আঁকা হয়ে যায়৷ চ্যান্সেলর হেলমুট কোল বলেন, ‘‘আমার লক্ষ্য হল - যদি সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটা এসে যায় - আমাদের জাতির একত্রীকরণ৷ আমাদের আবাস জার্মানির স্থান হবে ইউরোপীয় ছাদের নীচে৷ এটাই আমাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত৷'' চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের বক্তৃতার মাত্র ১০ মাস পরে ১৯৯০ সালের ৩ অক্টবর জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়৷

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক