1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে জঙ্গি তত্‍পরতা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৭ অক্টোবর ২০১৪

বাংলাদেশে জঙ্গি তত্‍পরতা গত দুই দশকে নানা ধরণের প্রতিরোধ এবং অভিযানের মুখোমুখি হলেও তা নির্মূল করা যায়নি৷ বরং নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠনের উদ্ভব হয়েছে৷ আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাজের কৌশলে এসেছে পরবির্তন৷

https://p.dw.com/p/1DRXx
Propagandabild IS-Kämpfer ARCHIV
ছবি: picture-alliance/abaca/Yaghobzadeh Rafael

এর সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নেতৃত্ব৷ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের উত্থান-পতনের সঙ্গেও বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর যোগাযোগের পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে কৌশলের৷

পশ্চিমবঙ্গে তৎপর জেএমবি?

সর্বশেষ খবর হলো, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় বোমা বানাতে গিয়ে নিহত শাকিল আহমেদ ও সুবহান বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র সদস্য বলে সেখানকার পুলিশ দাবি করেছে৷ প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার তারা নিহত হয়৷

এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ এই সীমান্ত বন্ধেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে মঙ্গলবার৷ তবে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে নিহত ঐ দুই জঙ্গির ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বাংলাদেশের জঙ্গিদের ব্যাপারে আমাদের কাছে যেসব তথ্য এবং তালিকা আছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দাবি সঠিক বলে প্রতীয়মান হয় না৷''

Bombenanschläge in Bangladesh
বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশই...ছবি: AP

বাংলাদেশে জেএমবি-র কার্যকলাপ

২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট বাংলাদেশের মোট ৬৪ জেলার ৬৩টিতেই একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের শক্তির জানান দিয়েছিল জেএমবি৷ তাছাড়া ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সেই সময়ের বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ হামলায় শেখ হাসিনা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান৷ তবে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন৷ জানা যায়, এই হামলা চালায় মুফতি হান্নানের হরকাতুল জিহাদ৷ এর আগেও ঢাকার রমনা বটমুল এবং যশোরে উদীচী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ৷

জেএমবি ১৭ই আগস্টের পর সারাদেশে একের পর এক আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন জনকে হত্যা করে৷ ২০০৫ সালের ১৪ই নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় তখনকার জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ছয়জন জঙ্গির ফাঁসি হয়৷ ১৭ই আগস্টের বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে মোট ১৫৯টি মামলা হয়৷ এর মধ্যে ৯১টি মামলার বিচার শেষে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, ১১২ জনের যাবজ্জীবন এবং ১০১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ পলাতক আছে ফাঁসির তিন আসামিসহ ৭৪ জন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি৷

অন্যদিকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এবং ২৪ জনকে হত্যার মামলা এখনো বিচারাধীন৷ তবে প্রধান আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ অধিকাংশ আসামি এখন কারাগারে৷ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্‍ফুজ্জামান বাবরও এই মামলার আসামি৷

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা

শেখ হাসিনাকে জঙ্গিরা একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছে৷ কোটালিপাড়ায় তাঁর জনসমাবেশ স্থলেও বোমা পেতে তাঁকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়৷ গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত জঙ্গিরা তাঁকে অন্তত ১৪ বার হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে৷ এ ব্যাপারে তাঁকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও সতর্ক করা হয়েছে৷ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সব সময়েই জঙ্গিদের ‘টার্গেট'-এ রয়েছেন৷

গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান হয়েছে৷ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে দেড় হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ অবশ্য এ সবে তারা দুর্বল হলেও শেষ হয়ে যায়নি৷ বরং তারা নতুন নামে সংগঠিত হয়েছে৷ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছে৷ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট অুনযায়ী নিজেদের অবস্থান ও কৌশল পরিবর্তন করেছে তারা৷''

তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পর তারা তদন্ত ও অনুসন্ধানে অধিকাংশ জঙ্গি সংগঠনের পেছনে কিছু প্রকাশ্য রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছেন৷ এ কারণেই জঙ্গিদেও নির্মূল করা কঠিন হয়ে পড়ে৷ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোশকতাতেই নতুন জঙ্গি দল গড়ে ওঠে৷''

বাংলাদেশে নতুন জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে এখন উল্লেখযোগ্য হলো, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জাদিদ আল-কায়েদা৷ এর মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ব্লগারদের ওপর হামলায় জড়িত৷ এছাড়া নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরির সবচেয়ে বেশি সক্রিয়৷ তারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে কাজ করছে৷ তাদের তত্‍পরতা প্রায়ই চোখে পড়ে৷

Bangladesch Aktivist Hizb-ut-Tahrir Dhaka Zusammenstöße Polizei
সম্প্রতি আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশছবি: Reuters

বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলি

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে৷ এগুলো হলো: জেএমবি, জেএমজেবি, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরির এবং শাহাদত্‍ ই আল-হিকমা৷ এরমধ্যে সবগুলোই নিষিদ্ধ অবস্থায় তত্‍পর রয়েছে৷ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘সর্বশেষ ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন ওরফে ইবনে হামদান ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক আইএস-এর সঙ্গে জড়িত ৷ সে বাংলাদেশে আইএস-এর সদস্য এবং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার কাজে নিয়োজিত ছিল৷ সে সিরিয়ায় আইএস-এর সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেছে৷ আর বাংলাদেশে সে দুই জেএমবি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এসেছিল৷'

এর আগে মো. আসিফ আদনান ও মো. ফজলে এলাহী তানজিল নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা ‘জিহাদে' অংশ নিতে তুরস্ক ও সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল৷ তারাও জেএমবি-র সদস্য৷

গত ১৯শে সেপ্টেম্বর জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল-তাসনিম ওরফে নাহিদসহ সাতজনকে আটক করেন৷ তারাও আইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল বলে গ্রেপ্তারের পর সংবাদমাধ্যমকে জানান গোয়েন্দারা৷

গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বাংলাদেশে আইসিসি অথবা আইএস-এর অনুসারীদের তত্‍পরতা আমাদের নজরে আসছে৷ কোণঠাসা হয়ে যাওয়া জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা ইরাক এবং সিরিয়ার ঘটনায় নতুন করে আইএস-এর দিকে ঝুকছে, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে৷ একই সঙ্গে তারা তাদের সদস্যদেরও চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য