1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাঁচা-মরার দোলাচলে বুড়িগঙ্গা

২৩ আগস্ট ২০১০

এক সময় প্রশ্ন করা হতো ঢাকা কোন নদীর তীরে অবস্থিত? উত্তর বুড়িগঙ্গা৷ এই বুড়িগঙ্গা নদী আজ মৃত্যুর মুখোমুখি৷ ‘ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে...তোমার নেই কি চলার শেষ..’- এ গানটি এখন আর বুড়িগঙ্গা নদীর জন্য প্রযোজ্য নয়৷

https://p.dw.com/p/OthS
Buriganga channel on the outskirts of Dhaka
পানির ওপর নৌকা চলছে, বিশ্বাস হয়?ছবি: AP

সোয়ারি ঘাট৷ মাছ আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে৷ মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি৷ পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাট৷ এখানে থেকেই যাবো আঁটি-পাঁচদোনা৷ ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি এলাকা৷ কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নয়, এমনই ঘোরাঘুরি৷ বুড়িগঙ্গা নদীতে একটু বাতাস খাওয়া আর কি! মাছের বাজারের হালচাল আর হাল্লাপাল্লাকে পিছনে ফেলে চলতে শুরু করলো আমাদের লঞ্চটি৷ কিন্তু কোথায় নদীর সুন্দর বিশুদ্ধ বাতাস? আমার গায়ে এসে ঝাপসা লাগছে পুতি দুর্গন্ধময় বাতাস!

পাশেই কামরাঙ্গীর চর৷ ভোরের আলোতে এখানে বুড়িগঙ্গার তীরে গেলে যে কেউ ভাববে এটি হয়তো খাল নয়তো নর্দমা৷ সীমানা সংকীর্ণ, দখলদারদের প্রভুত্ব তীর জুড়ে, কুচকুচে কালো দূষিত পানি, চারদিকে ভীষণ দুর্গন্ধ৷ ফলে একে নদী বলার দৃশ্যমান কোন কারণ যেন নেই৷

জানা আছে অনেক কিছু৷ কিন্তু সেই জানার বাহুল্যে বুড়িগঙ্গাকে মানুষ করা যায়নি৷ আর এ জন্য অবশ্যই দায়ী নগরবাসী৷ মৃতপ্রায় এই বুড়িগঙ্গা নদীকে বাঁচাতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছেন পরিবেশবাদীরা৷ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক সংগঠন৷ এখন বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর আন্দোলন ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে৷ এই তো কিছুদিন আগে সরকার এই নদীকে দখল মুক্ত করতে এবং এই নদী থেকে সকল আবর্জনা ছেঁকে তুলে নিয়ে একে পরিষ্কার করতে চেয়েছে৷ এজন্য অভিযান এবং কাজও হয়েছে৷ কিন্তু চিত্র যা ছিল তার কিন্তু কোন পরিবর্তন হয়নি৷

Buriganga river in Dhaka
ক্রমশ: ছোট হয়ে আসছে বুড়িগঙ্গা নগীছবি: AP

আর তাই এবার বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানো আহ্বান ২০জন বয়ঃবৃদ্ধার৷ তারা একসঙ্গে আগামী ডিসেম্বর মাসে নগ্নপায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে মানব বন্ধন করবেন৷ ইতিমধ্যে তাদের ভাষ্য বিভিন্ন স্থানে প্রচার করা হচ্ছে৷ এরা বলছেন, আমরা মরে যাবো, কিন্তু বুড়িগঙ্গাকে মেরো না৷

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নামের একটি সংগঠন ২০ বয়ঃবৃদ্ধার এই কর্মসূচির আয়োজক৷ এই সংগঠনের নেতা গাজী খালেদ ইবনে মোহাম্মদ যাকে সকলে চেনেন গাজী তোড়ন নামে৷ তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিলো এই বিষয়টি নিয়েই৷ তিনিই জানালেন এটা একটা প্রতীকি আয়োজন৷

লঞ্চে যেতে যেতে বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে দেখলাম নানা স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান৷ শিল্প প্রতিষ্ঠান, কারখানা, দোকান, বসত বাড়ি, এমনকি মসজিদ মাদ্রাসা৷ দেখতে পেলাম বুড়িগঙ্গা নদীর ঠিক সীমানায় অনেকেই নিজের জমি দাবি করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে৷ কেউ নদীর পানিতেই লাগিয়েছে দখলের নিশানা৷ বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি ভর্তি ইঞ্জিন নৌকা বুড়িগঙ্গা মাটি ফেলছে, ভরাট করছে৷ চরম অত্যাচারের শিকার এই নদী৷

নদী বাঁচলে ঢাকা বাঁচবে৷ ঢাকাকে বাঁচানোর পদক্ষেপগুলো ফলপ্রসূ হওয়া চাই বলেই মনে করেন অনেকে৷ এ ব্যাপারে স্থানীয় জনসাধারণের দায়িত্বও কিন্তু কম নয়৷ তাই ঢাকাকে বাঁচাতে মৃতপ্রায় নদীগুলো বাঁচাতে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে, বলছেন গাজী তোড়ন৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন