1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব়্যাডিকাল ইসলাম মোকাবিলা এবং মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যৎ

গ্রেহেম লুকাস/এসবি১ জুন ২০১৫

আগামী ৩রা জুন জার্মানি সফরে আসছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাতাহ আল-সিসি৷ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছাড়াও চ্যান্সেলর ম্যার্কেল তাঁর কাছে মুসলিম ব্রাদারহুডের মোকাবিলা ও মানবাধিকার রেকর্ড সম্পর্কে জানতে চাইবেন৷

https://p.dw.com/p/1FaBF
Symbolbild islamistischer Kämpfer
ছবি: Fotolia/Oleg Zabielin

ব়্যাডিকাল ইসলাম মোকাবিলার কৌশল

মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাতাহ আল-সিসি ব়্যাডিকাল ইসলাম মোকাবিলার উদ্যোগ নিচ্ছেন, এ কথা সবাই জানে৷ মুসলিম ব্রাদারহুড যে ভাবে তাঁর দেশে বহু দশক ধরে হিংসা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে এসেছে, তার প্রেক্ষাপটে ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে সিসি মনে করেন, ব়্যাডিকাল ইসলাম তাঁর দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিশাল এক হুমকি৷ তিনি জানুয়ারি মাসে ধর্মীয় শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনায় ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তাঁদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়েছিলেন৷ সিসি বলেছিলেন, ‘‘ব়্যাডিকাল চিন্তা-ভাবনা বাকি বিশ্বের জন্য উদ্বেগ, বিপদ, হত্যা ও ধ্বংসলীলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷''

সিসি-র এই অবস্থান অবশ্যই শ্রদ্ধার দাবি করে৷ কারণ তিনিই মুসলিম-প্রধান দেশগুলির মধ্যে প্রথম নেতা যিনি শুধু মিশরে নয়, বিশ্বের অনেক দেশে ইসলামি উগ্রপন্থি মতবাদের চলমান হুমকি সম্পর্কে এত খোলামেলাভাবে কথা বলেছেন৷ এবং তিনি এর সমাধান সম্পর্কেও নিজের ধারণা তুলে ধরেছেন৷ মিশরের ইসলামি শিক্ষাবিদরা হিংসাত্মক জিহাদিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন, এটাই তাঁর প্রত্যাশা৷ অর্থাৎ স্কুল, মসজিদ ও সংবাদ মাধ্যমে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ ধর্মচর্চার মাধ্যমে তাঁরা ইসলামের সঠিক রূপ তুলে ধরতে পারেন৷ নিজেদের ধর্মের ব্যাখ্যার নিয়ন্ত্রণ মূল প্রবাহের মুসলিমদের নিজেদের হাতে তুলে নিতে হবে – এটাই হলো মূলমন্ত্র৷ পূর্বসূরি হোসনি মুবারকের পথে না গিয়ে সিসি বুঝতে পেরেছেন যে, ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে সঠিক যুক্তি দিয়ে মন জয় করতে হবে৷

Treffen der arabischen Liga in Ägypten
ব়্যাডিকাল ইসলাম মোকাবিলার উদ্যোগ নিচ্ছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসিছবি: Reuters/Dalsh

সঠিক দিশা, ভুল নেতৃত্ব

এই ক্ষেত্রে সিসির প্রশংসা করলেও বলতে হয়, তাঁর অবস্থানের মধ্যে গভীর ত্রুটি রয়েছে৷ ২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসিকে গদিচ্যুত করে সিসি ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রায় ১,৪০০ সদস্যের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়া পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে সিসি মুরসির অনুগামীদের কড়া হাতে দমন করেছেন৷ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলি বার বার তুলে ধরা হয়েছে৷ এমন সব ক্ষেত্রে এর ফলে শহিদের সৃষ্টি হয়, যার ফলে অস্থিরতা আরও বাড়ে৷ তাই অজ্ঞতামুক্ত এক ইসলাম ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে সিসি নেতৃত্বের আসনে বসতে পারেন না৷ কারণ ইসলাম ধর্মে ক্ষমার বিশাল গুরুত্ব রয়েছে৷ মিশরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ-এর স্পিকার নরবার্ট লামার্ট বার্লিনে সিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকার করেছেন৷

তা সত্ত্বেও বলতে হবে, প্রেসিডেন্ট সিসি যেভাবে মিশরের মুসলিম সমাজের নবীন প্রজন্মের হৃদয় জয় করার চেষ্টা করছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ৷ এ কাজে তিনি প্রায় হাজার বছরের পূর্ণ ও ইসলামি জগতের সবচেয়ে পরিচিত প্রতিষ্ঠান – আল-আজহার মসজিদের শিক্ষাবিদদের সাহায্য নিচ্ছেন৷ আল-আজহারে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ছাত্র অধ্যয়ন করেন৷ এশিয়া ও আফ্রিকা থেকেও ছাত্ররা সেখানে যান৷ সুন্নি বিশ্বে ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে এর কোনো জুড়ি নেই৷

DW 60 Jahre Grahame Lucas
গ্রেহেম লুকাস, ডয়চে ভেলেছবি: DW/M. Müller

মতাদর্শের লড়াই

এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ সাম্প্রতিক কালের জঘন্যতম সন্ত্রাসী হামলায় আল-কায়েদা, তালিবান বা ইসলামিক স্টেট-এর মতো যে সব গোষ্ঠী জড়িত ছিল, তাদের সবার সঙ্গে সুন্নি ইসলাম সম্প্রদায়ের সম্পর্ক রয়েছে৷ গত কয়েক দশকে এই সব গোষ্ঠী শুধু পশ্চিমা দেশগুলি ও তাদের সহযোগীদের লক্ষ্যবস্তু করেনি, শিয়া ও নানা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও তাদের হামলার শিকার হয়েছে৷ এই সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রেরণার উৎস ওয়াহাবি মতধারা – যা ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে চরমপন্থি ব্যাখ্যা প্রচার করে এবং যা সৌদি আরবের রাষ্ট্রধর্ম৷ যারাই এই মতবাদের সঙ্গে একমত নয়, তারাই হামলার লক্ষ্য হয়৷ স্বৈরাচারী লক্ষ্য পূরণের জন্য তারা এমনটা করতে প্রস্তুত৷ সৌদি দাতাদের কাছ থেকেই তারা বেশিরভাগ সময় অর্থসাহায্য পায়৷ ওসামা বিন লাদেন যে সৌদি নাগরিক ছিল, তা বারবার বলার প্রয়োজন রাখে না৷

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সিসির জ্বালাময়ী ভাষণের পর থেকে আল-আজহারের শিক্ষাবিদরা ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রচারণা ও তাদের ধর্মীয় অবস্থান বিশ্লেষণ করা শুরু করেছেন৷ স্কুলের পাঠ্য বইগুলি পরীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা৷ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি ইসলাম ধর্মের যে ব়্যাডিকাল ব্যাখ্যা করে থাকে, ধারাবাহিকভাবে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে চান তাঁরা৷ এই কাজ করতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে, সন্দেহ নেই৷ কিন্তু এটা একটা সূচনা তো বটে৷ এই সংগ্রাম শুধু মিশরে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না৷ অন্যান্য মুসলিম-প্রধান দেশের সমর্থনেরও প্রয়োজন হবে – যদিও সৌদি আরবের সমর্থনের আশা করা কঠিন৷ মুসলিম দেশগুলি এই সংগ্রামে পরাজয় শিকার করতে পারে না৷ সেই সংগ্রামের ফলাফল একবিংশ শতাব্দীতে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য