1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বর্ণবাদী হত্যার রায় ১৮ বছর পর

৪ জানুয়ারি ২০১২

প্রায় দুই দশক পর লন্ডনে দুই ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হল৷ ১৯৯৩ সালে গ্যারি ডবসন এবং ডেভিড নোরিস ১৮ বছর বয়সের স্টিফেন লরেন্সকে ছুরি মেরে হত্যা করেছিল৷

https://p.dw.com/p/13dqi
সাজাপ্রাপ্ত দুই শ্বেতাঙ্গছবি: Reuters

শ্বেতাঙ্গ ‘ব্রিটিশ গ্যাঙ' তখন অত্যন্ত ক্ষমতাশালী৷ তারা নিরীহ বিদেশি এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর কারণে অকারণে চড়াও হত৷

ঘটনা

১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বে এলথাম শহরে এক বাস স্টপে ১৮ বছর বয়সি স্টিফেন লরেন্সের ওপর চড়াও হয় পাঁচ জন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ৷ তারা স্টিফেনকে ছুরি দিয়ে গুরুতর আঘাত করে পালিয়ে যায়৷ এ ছিল বর্ণবাদী আচরণের এক নগ্ন প্রকাশ৷ এই হত্যা নিয়ে মামলা করা হয়৷ মামলা চলে প্রায় ১৮ বছর ধরে৷ এবার লন্ডনের ওল্ড বেইলি ফৌজদারি আদালতের জুরিছেমণ্ডলী লরেন্স হত্যার সঙ্গে জড়িত দুই জনকে দোষী সাব্যস্ত করে৷

সাড়া জাগানো এই রায়ের মধ্য দিয়ে ব্রিটেনে বর্ণ ও জাতিগত সম্পর্কের সমস্যাটি নতুন করে উন্মোচিত হল৷ পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের পুলিশের অযোগ্যতা এবং বৈষম্যমূলক আচরণও এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে৷ একই কথা জানান স্টিফেন লরেন্সের মা ডোরিন লরেন্স৷ তিনি বলেন,‘‘পুলিশ যদি তাদের কাজ ঠিকমত করতো তাহলে গত ১৮ বছর ধরে আমি আমার ছেলের জন্য শোক প্রাকাশ করতামনা৷ ন্যায় বিচারের জন্য আদালত এবং পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি করতাম না৷''

Verhandlung um Mord an Stephen Lawrence Großbritannien
নিহত লরেন্সছবি: Reuters

ব্রিটিশ পত্রিকাগুলোর প্রতিক্রিয়া

ব্রিটেনের ‘দ্যা টাইম্স নিউজপেপার' আদালয়ের এই সিদ্ধান্তকে নাগরিক মুল্যবোধের এক বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছে৷ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বল হয়, সেই সময় অর্থাৎ ১৯৯৩ সালের ঘটনা এমন ধারণা দিয়েছিল যে ব্রিটেনে যে কোন কৃষ্ণাঙ্গকে কোন কারণ ছাড়াই হত্যা করে যেতে পারে, এবংতাতে পারও পাওয়া যাবে৷

স্টিফেন লরেন্সের বাবা নেভিল লরেন্স দাবি জানান, ঐ কুখ্যাত গ্যাং-এর সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও ধরা হোক৷ বুধবার সান পত্রিকা নেভিল লরেন্সের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইটেলে লেখে,‘‘বাকিদেরও ধরা হোক''৷

কতদিন শাস্তি

যে দুই জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তারা হল ৩৬ বছর বয়স্ক গ্যারি ডবসন এবং ৩৫ বছর বয়স্ক ডেভিড নোরিস৷ ১৯৯৩ সালে দুই জনেই ছিল টীনএজার৷ শুরু থেকেই তারা দুই জন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছিল৷ দুজনেই বলে আসছিল যে তারা কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না৷ আদালত তাদেরকে অবশ্য কড়াভাবে প্রশ্ন করেছিল, ‘কেন তারা মিথ্যে কথা বলেছে৷' এর কোন সদুত্তর নোরিস বা ডেভিড কেউই দিতে পারেনি৷

গ্যারি ডবসনকে ১৫ বছর দুই মাস ডেভিড নোরিসকে ১৪ বছর এবং তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়৷ রায়ের শুনানির সময় দুই আসামীর পরিবারও আদালতে উপস্থিত ছিল৷

লরেন্সকে হত্যার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই ‘গ্যাঙ'-এর পাঁচ সদস্যকে আটক করা হয়৷ কিন্তু বিবাদী পক্ষের আইনজীবী যুক্তি দেখান যে প্রমাণাদির সাহায্যে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং মামলা সাজানো হয়েছে তা যথেষ্ট নয়৷ অন্ততপক্ষে নোরিস এবং ডেভিডের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আনা যাবে না৷ সেই সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়৷ পুলিশ অদক্ষ, গুরুত্বসহকারে স্টিফেন হত্যা মামলা দেখা হয়নি – এসব নিয়ে আলোচনা চলেছে দীর্ঘদিন৷

১৯৯৯ সালে এই অভিযোগুলোর সত্যতা প্রমাণ হয় একটি আইনি প্রতিবেদনে৷ সেখানে স্পষ্টভাবে বর্ণবৈষম্যের প্রাতিষ্ঠানিক রূপকে তুলে ধরা হয়৷ লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যর্থতা, অদক্ষতার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক