1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন রক্ষায় জাতিসংঘের কার্যসূচীর সফলতা নিয়ে প্রশ্ন

১১ মার্চ ২০১১

বনাঞ্চল রক্ষায় পরিবেশবাদীদের পাশাপাশি জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও উদ্যোগের কমতি নেই৷ কিন্তু সেগুলোর সাফল্য নিয়ে এখনও নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে৷ বিশ্বের বনাঞ্চলগুলো রক্ষায় জাতিসংঘের উদ্যোগেরও তেমন সাফল্য চোখে পড়ছে না এখন পর্যন্ত৷

https://p.dw.com/p/10XJC
বনাঞ্চল রক্ষায় জাতিসংঘের উদ্যোগছবি: picture-alliance / HB-Verlag

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবের এক পঞ্চমাংশের কারণ হলো গাছ কেটে বনাঞ্চল ধ্বংস করে ফেলা, যা আমাদের গোটা পৃথিবীর পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলছে৷ গোটা বিশ্বে প্রতি মিনিটে যে পরিমাণ বনাঞ্চল উজাড় করে ফেলা হচ্ছে তা আটটি ফুটবল মাঠের সমান৷ এভাবে চলতে থাকলে অতি দ্রুতই আমাদের এই সবুজ ধরণী ধ্বংসের মুখোমুখি হবে৷

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর বনাঞ্চল বাঁচাতে কাজ করে চলেছে জাতিসংঘের আরইডিডি বা রেড নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন৷ বিগত কানকুন জলবায়ু সম্মেলনে এই বনাঞ্চলকে রক্ষা করতে রেড কার্যসূচীর ব্যাপারে একমত হয় সদস্য দেশগুলো৷ কিন্তু কেবল এই কার্যসূচী দিয়েই কি বিশ্বের বনাঞ্চলকে রক্ষা করা সম্ভব? ইতিমধ্যে সেই প্রশ্ন উঠেছে৷

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখন প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের পরিমাণ কমে আসছে৷ শিল্পায়নের আগ্রাসনের শিকার হয়ে এই সবুজ প্রাকৃতিক বনাঞ্চলগুলো বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ সঙ্গে বিপন্ন হচ্ছে এই বনাঞ্চলে শতশত বছর ধরে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর জীবনও৷

Waldroden im Regenwald Brasilien
বনাঞ্চলের পরিমাণ কমে আসছেছবি: AP

এ প্রসঙ্গে নরওয়ের রেইন ফরেস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক লার্স ল্যোফল্ড বলেন, ‘‘যাদের কারণে আজ আমরা বনাঞ্চলগুলোকে এই অবস্থায় পাচ্ছি, যারা এটাকে শত শত বছর ধরে সংরক্ষণ করে এসেছে তাদেরকে আমাদের পুরস্কৃত করা উচিত৷ কিন্তু তার পরিবর্তে যারা এই বনকে ধ্বংস করছে তাদেরকেই আমরা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি এবং শিল্পোন্নত দেশগুলো এই সুযোগটিকেই লুফে নিচ্ছে৷''

বিশ্বের নানা দেশের লাখ লাখ হেক্টর বন উজাড় করে বিভিন্ন কোম্পানি ব্যাপক মুনাফা অর্জন করছে৷ একদিকে তারা মূল্যবান কাঠের ব্যবসা করছে, অন্যদিকে আবাস নির্মাণ কোম্পানিগুলোও তাদের ব্যবসা আরও বাড়িয়ে তুলছে৷ কিন্তু এর ফলে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃতি এবং সেসব বনাঞ্চলের ওপর নির্ভর করে জীবিকা আহরণ করে আসা মানুষগুলো৷ রেড সেসব বনাঞ্চলকে রক্ষা করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে নিয়েও কাজ করছে, জানালেন লার্স ল্যোফল্ড৷

ল্যোফল্ড'এর কথায়, ‘‘এখন পর্যন্ত যারা এভাবে গাছ কাটছে এবং বন ধ্বংস করছে তাদেরকেই পুরস্কৃত করা হচ্ছে৷ কারণ তারা এই জন্য কেবল সামান্য কিছু অর্থ দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু এই ক্ষয়ক্ষতির মূল্য তারা দিচ্ছে না৷ রেড একটি উপায় খোঁজার চেষ্টা করছে যার মাধ্যমে বন ধ্বংসকারীদের শাস্তি দেওয়া যায় এবং যারা এই বনাঞ্চলকে রক্ষা করেছে তাদের পুরস্কৃত করা যায়৷''

উল্লেখ্য, বিগত ২০০৭ সালে বালি জলবায়ু সম্মেলনে রেড কার্যসূচী নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ এর বিষয় ছিল এমন – যেসব দেশ বেশিরভাগ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী, তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বনাঞ্চল তৈরির জন্য অর্থ দেবে৷ এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ বাড়াবে, যাতে করে পৃথিবীতে কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমে আসে৷

তবে অনেক পরিবেশবাদী সংগঠনের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলো এই প্রক্রিয়ার সুযোগ নিতে পারে৷ যেমন, যেসব দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বনায়নের জন্য অর্থায়নের মাধ্যমে কার্বন নির্গমনের অধিকার কিনে নিয়েছে, তারা এই সুযোগে অনেক জ্বালানি কয়লা প্রকল্প অব্যাহত রেখেছে৷ এসব জ্বালানি কয়লা কেন্দ্রে কার্বন নিঃসরণের যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না৷ এবং এর ফলে পরিবেশ ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে বলে জানালেন পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠন গ্রিনপিস এর কর্মকর্তা ক্রিস্টফ টিস৷ তিনি বলেন, ‘‘এরকম যদি হয়, তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে খারাপ এবং এই ধরণের কাজ যে কোনভাবে ঠেকাতে হবে৷ এই ব্যাপারে একটি স্পষ্ট আর্থিক নিয়ম থাকতে হবে যাতে এই হিসাবও থাকবে কতটুকু কয়লা পোড়ানো যাবে এবং কতটুকু কয়লা ব্যবহার করা যাবে৷''

গত কানকুন জলবায়ু সম্মেলনে জাতিসংঘের রেড কার্যসূচীকে বেশ কিছু বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কিংবা জীব বৈচিত্র বিষয়ক জাতিসংঘের চুক্তির কোনটিতেই বনাঞ্চল এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি৷ ফলে বিশ্বের বনাঞ্চল রক্ষায় রেড এর কার্যসূচী মূলত একটি বিধিগত বাধার মুখে পড়ে গেছে৷ কারণ একদেশের কাছে যেটা বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে না সেটি অন্য দেশের কাছে বনাঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে৷ এইসব কারণে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের বনাঞ্চল রক্ষার উদ্যোগে তেমন কোন ফলাফল চোখে পড়ছে না৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন