1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রান্সে মুসলমানরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে

আব্দুল্লাহ আল-ফারুক২৫ জুলাই ২০০৮

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ফ্রান্সে আনুমাণিক ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ইদানিং তাদের মনে এই ভাবনা জোর পাচ্ছে যে ফরাসী সরকারের দিক থেকে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/Ejse
ফ্রান্সে মুসলমানরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেছবি: AP

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফ্রান্সে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মুসলমান বাস করে৷ তবে পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য কোন পরিসংখ্যান এখনও নেই৷ ফ্রান্সে জাতিগত ও ধর্মীয় বিচারে পরিসংখ্যান তৈরি করা নিষিদ্ধ৷ এই পরিস্থিতির কারণে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অভিবাসীদের ফরাসী সমাজের মূলধারায় পুরোপুরি সম্পৃক্ত করার কাজটি হয়ে ওঠে দূরূহ৷

Islamisches Burger-Restaurant in Clichy-sous-Bois
ধর্মীয় পোশাকে কাজ করছেন একজন মুসলিম নারীছবি: dpa - Report

ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়ের অভিযোগ, মসজিদের সংখ্যা সেখানে খুবই কম৷ তাদের দাবি, রাষ্ট্র বিভিন্ন ধর্মের সমানাধিকারের বিষয়টিকে যদি সত্য সত্যই গুরুত্ব দেয় তাহলে মসজিদ তৈরির জন্য তাকে অর্থ সাহায্য দিতে হবে৷ কিন্তু সমস্যা হল ধর্মের ব্যাপারে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতার শর্তটি ১৯০১ সালে ফরাসী সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে৷ ফলে রাষ্ট্র কোন ধর্মকে আর্থিক সমর্থন দিতে পারবে না৷

প্যারিসের বেলভিল এলাকার রু জঁ-পিয়ের টিমবো বেশ প্রাচীন এক রাস্তা৷ একের পর এক বাড়িগুলো গা-ঘেঁষে দাঁড়ানো৷ বহু ছোট ছোট দোকান আর কাফে ঐ রাস্তায়৷ গত দু দশকে অবশ্য এখানকার নগরচিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে৷ আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা মাথায় হিজাব অথব চাদর পরা মেয়েদের উপস্থিতি এখানে এখন স্বাভাবিক ব্যাপার৷ দোকানের জানালায় জিনিসপত্রের দাম প্রায়শই আরবিতে লেখা৷

এই রাস্তার ৭৯ নম্বর বাড়িখানা দেখতে একটু জীর্ণ, মলিন৷ সেখান থেকে বেরিয়ে আসছেন তিন জন৷ গালে দাড়ি৷ পরনে লম্বা জোব্বা - আরবরা যাকে বলে জেলাবা৷ বাড়ির সাইনবোর্ডে আরবি লেখা৷ আরবি পড়তে পারে যারা তারাই বুঝতে পারবে যে এ হল একটা মসজিদ - ওমর মসজিদ৷ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা তিন ব্যক্তি রাস্তা পার হয়ে ঢুকলেন সামনের কফির দোকানে৷ এই কাফের নাম লে ফিডেল৷ ফরাসী নাম৷ অর্থ বিশ্বাসী৷

Kopftuch Demonstration in Paris
মুসলমানদের ব্যাপারে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের মাত্রাটা খুব বেশিছবি: AP

এই কাফে মুসলমান পুরুষদের দেখা সাক্ষাতের জায়গা৷ তাদের অনেকেই নিয়মিত নামাজ পড়েন ওমর মসজিদে৷ লামিন টুরে মালির লোক৷ কুড়ি বছর আগে স্থায়ীভাবে চলে আসেন ফ্রান্সে৷ তাঁর বয়স এখন ৪১৷ দিলখোলা মানুষ৷ ফরাসী বলেন৷ ফ্রান্সে ধর্মভীরু মুসলমানদের জীবন সম্পর্কে কিছু কথা বলতে রাজি হলেন তিনি৷ তাঁর অভিমত হল, ফ্রান্সে ঠিকঠাক ধর্ম পালন করা মুসলমানদের জন্য কঠিন হচ্ছে৷ যথেষ্ট মসজিদ এমনকি প্যারিসেও নেই৷ তাছাড়া অল্প যে-কয়েকটি মসজিদ আছে সেগুলোও বড্ড ছোট৷ প্রায়ই দেখা যায় মেয়েদের জন্য কোন ঘর নেই৷ আসল মসজিদও আছে কিছু৷ কিন্তু সেখানে ভীষণ ভিড়৷ শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় মসজিদ ওমরও একেবারে ভরে যায়৷ বাইরে ফুটপাথের ওপর নামাজ পড়তে হয় অনেককে৷

এই পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতে বদলে যাবে এমন আশা করেন না লামিন টুরে৷ মুসলমানদের ব্যাপারে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের মাত্রাটা খুব বেশি৷ বহু ফরাসী যেন এক ধরনের হুমকি অনুভব করে থাকে তাদের দিক থেকে, মনে করেন প্যারিসবাসী এই মুসলিম৷

নিকোলাস সারকোজি অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হবার আগে মসজিদ তৈরির জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ তা হবে ফরাসী সমাজে মুসলমানদের আরো অনেক ভালভাবে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ৷ সারকোজি তখন বলেছিলেন, জীর্ণ সেলার আর গ্যারেজ-এ কোনরকমে দাঁড় করানো নামাজঘর থেকে ফ্রান্সের মুসলমানদের বের করে আনতে হবে৷ উগ্র ইসলামপন্থীদের বিদ্বেষ আর ঘৃণায় ভরা ধর্মীয় প্রচারণা আর নয়৷ বরং গড়ে উঠুক শোভন মসজিদ৷ সেখানে শিক্ষিত ফরাসী ইমামরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার মাঝে জুম্মার নামাজ পরিচালনা করুন৷ আর এই লক্ষ্য অর্জনে দরকার হলে সরকারকে সংবিধানে বিধিবদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য না দেওয়ার শর্ত সংশোধন করতে হবে৷

কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হবার পর সারকোজি তাঁর নীতি অবস্থান বদলে ফেলেছেন৷ ফরাসী সংবিধান সংশোধন করার বিষয়টি আর উঠছে না৷ কেননা ফরাসী সমাজে ফরাসী প্রজাতন্ত্রের মৌল মূল্যবোধগুলো খর্ব করার বিরুদ্ধে বিরোধিতা অত্যন্ত প্রবল৷ এই বিরোধিতা যারা করছেন তারা মনে করেন, রাষ্ট্র আর ধর্মের মধ্যকার বিভাজন মসজিদ তৈরির যূপকাষ্ঠে বলি দিলে চলবে না৷

Frankreichs präsident Sarkozy mit dem Präsident der EU-Kommission Barroso
কথা রাখেননি সারকোজিছবি: AP

লাজ থামি ব্রেজ মরক্কোর মুসলমান৷ ফরাসী ইসলামী সংগঠন ইউনিয়নের তিনি সভাপতি৷ ব্রেজ অবশ্য আশাবাদী৷ সদিচ্ছাটা এখনও রয়েছে৷ তবে জোর সমালোচনার কারণেই প্রেসিডেন্ট সারকোজি গড়িমসি করছেন৷ কিন্তু প্যারিসের ওমর মসজিদের সামনের কাফেতে বসে থাকা তরুণ মুসলিমরা তা মনে করে না৷ ফরাসী পাসপোর্টধারী তাদেরই একজন মনে করে, সারকোজি এ সব কথা বলেছেন কেননা মুসলমানদের ভোট তাঁর প্রয়োজন ছিল৷ নির্বাচনের পর তিনি সে কথা ভুলে গেছেন৷

ফ্রান্সে জন্ম নেয়া এরকম বহু মুসলমান তরুণ হতাশার শিকার৷ তাদের কথায় উপচে পড়ে ক্ষোভ আর তিক্ততা৷ তারা মনে করে ফরাসী মূলধারার সমাজ তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে দেখে এবং তাদের উত্‌স আর ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সমাজের সর্বত্র তাদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে৷ ফ্রান্সের তরুণ মুসলমানদের এই ক্ষোভ যে কতটা বিস্ফোরণের রসদ ধারণ করে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে অতীতে ফরাসী বড় বড় শহরের উপকন্ঠে অভিবাসী তরুণদের ব্যাপক অসন্তোষের হিংসাত্মক প্রকাশে৷ এরকম বিস্ফোরণযে আবার যে কোন সময় ঘটতে পারে, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই৷