1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিবেকের স্মার্টফোন

আন্দ্রেস বেকার/এসএসটি২৭ জানুয়ারি ২০১৩

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা বিলিয়ন ডলারের মুনাফা লাভ করলেও, যাঁরা এই ফোন ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মী – তাঁদের খবর খুব কমই রাখেন৷ শ্রমিকদের দুরাবস্থা তাঁদেরকে স্পর্শ করে না৷ একটি ডাচ প্রতিষ্ঠান এই অবস্থা বদলাতে চাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/17SEr
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan

কঙ্গোর গৃহযুদ্ধের সঙ্গে মুঠোফোন নির্মাণের সম্পর্ক কি? কেউ কেউ হয়ত এই প্রশ্ন অবান্তর বলে মনে করতে পারেন৷ কিন্তু ‘ফেয়ারফোন' নামক মুঠোফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্তারা মনে করেন, সম্পর্ক অনেক৷

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি ফোন তৈরি করছে, যেটি শুধু কারিগরি দিক থেকেই অনন্য নয়, বরং ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক নীতি মেনে তৈরি৷ যার অর্থ হচ্ছে, ফোনটি টেকসই হতে হবে এবং যেসব কারখানা ও খনি থেকে এই ফোনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আসবে, সেগুলোর কর্মপরিবেশ ভালো হতে হবে৷ এবং এমন জায়গা থেকে যন্ত্রাংশ আনা হবে, যেখানকার পরিবেশ সুরক্ষিত৷

বলাবাহুল্য, একটি স্মার্টফোন তৈরিতে অসংখ্য বিরল খনিজ পদার্থের প্রয়োজন হয়৷ এগুলোকে অনেক সময় বলা হয় ‘সংঘাত ধাতু'৷ এটা বলার কারণ হচ্ছে, যেসব অঞ্চল থেকে এসব পদার্থ সংগ্রহ করা হয়, সেখানে গৃহযুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিত্যদিনের ব্যাপার৷ অনেক ‘রেয়ার আর্থ' পদার্থ সংগ্রহ করা হয় ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি) থেকে৷ সেখানকার শ্রমিকরা, বিশেষ করে শিশুরা, অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে৷ এছাড়া, সেখানকার বিরল খনিজ পদার্থ বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থ ব্যয় করা হয় সশস্ত্র সেনাদলের জন্য অস্ত্র কেনার পেছনে৷

তবে পৃথিবীতে বিরল খনিজ পদার্থের সবচেয়ে বড় উৎপাদক হচ্ছে চীন৷ কূপ থেকে বিরল খনিজ পদার্থ সংগ্রহের সময় সেটি পরিষ্কার করে আলাদা করতে অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ ফলে কূপের কাদা বিষাক্ত হয়ে যায়৷ আর সেই বিষ ছড়িয়ে পড়ে কূপ বা খনি সংলগ্ন এলাকায়৷

প্রশ্ন হচ্ছে, রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজ পদার্থ সংগ্রহের ফলে শ্রমিক এবং পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার দায়ভার কে নেবে? স্মার্টফোন নির্মাতারা এই দায় নিতে চান না, কেননা তাদের কথা হচ্ছে, ঠিক কোথা থেকে কিভাবে খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করা সম্ভব নয়৷

তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এই যুক্তি মানতে রাজি নন ইওহানা কুশ৷ জার্মান ওয়াচের এই কর্মকর্তা মুঠোফোন শিল্প কতটা সামাজিক দায় মেটাচ্ছে সেদিকে নিবিড়ভাবে লক্ষ্য রাখেন৷ তিনি বলেন,‘‘মুঠোফোন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক উপাদান কোথা থেকে আসে সেটা শনাক্ত সম্ভব নয় বলে যে দাবি তারা (বিভিন্ন নির্মাতা) করছে, তা ঠিক নয়৷ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো খনিতে সংগৃহিত বিরল উপাদান, কাদের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে সেটা শনাক্ত করা সম্ভব৷ এটা আর অনেক আগের মতো জটিল কোনো বিষয় নয়৷''

Kongo Flüchtlinge
স্মার্টফোন ব্যবহারের দামটা যারা দেয়: কঙ্গো থেকে পলায়নপর মানুষছবি: picture-alliance/dpa

ইওহানা মনে করেন, এই তথ্য জানার জন্য জরুরি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছা৷ খানিকটা চাপ প্রয়োগ করলেই সরবরাহকারীদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা সম্ভব৷ আর ‘ফেয়ারফোন' তৈরির মাধ্যমে এই কাজটিই করছেন ডাচ উদ্যোক্তা বাস ফান আডেল৷ তাদের তৈরি প্রথম ফোনটি আগামী শরৎকাল নাগাদ বাজারে আসবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিভাবে ইলেকট্রনিক্স তৈরি করছি সেটা আবারো ভাবা উচিত৷ বিশেষ করে আমরা কোন পরিবেশে এসব বানাচ্ছি তা দেখতে হবে৷ ‘ফেয়ারফোন' তৈরির ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আমি লক্ষ্য করছি৷ এই ফোন সচেতন ক্রেতাদের জন্য একটি বিকল্প৷ তবে একইসঙ্গে এই উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতকে ভিন্নভাবে কাজ করতে উৎসাহ প্রদানের এক চেষ্টাও৷''

এখন পর্যন্ত ডাচ মুঠোফোন সেবাদাতা সংস্থা কেপিএন ফেয়ারফোন কেনার অর্ডার দিয়েছে৷ তাদের অর্ডার চার সংখ্যার একটি পরিমাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ৷ বাৎসরিক চুক্তির বাইরে একেকটি ফোনের দাম পড়বে আড়াইশো থেকে তিনশো ইউরোর মধ্যে৷

এখানে বলা প্রয়োজন, চীনে শ্রমিকদের বাজে কর্মপরিবেশ নিয়ে নিয়মিতই বিভিন্ন সংবাদ শোনা যায়৷ তা সত্ত্বেও অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানের আইফোন তৈরি হচ্ছে চীনে৷ ফেয়ারফোনও সেখানে একটি উৎপাদন কেন্দ্র চালু করেছে৷ ফান আডেলের কথা হচ্ছে, কোনো সমস্যার সমাধান করতে চাইলে সেটার উৎস ধরে আগাতে হবে৷ আমরা সেটাই করছি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য