1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুটবলে ‘জার্মান যুগের’ সূচনা

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী২৫ এপ্রিল ২০১৩

বায়ার্ন বার্সাকে ৪-০ গোলে হারানোর পর ডর্টমুন্ড রেয়ালকে হারাল ৪-১ গোলে৷ ঘটনাটা কি ঘটল, সেটা কেউ মুখ খুলে হয়ত বলতে সাহস পাচ্ছেন না, কিন্তু ভাবছেন অনেকেই৷ ফুটবলে যে জার্মানির যুগ শুরু হতে চলেছে৷

https://p.dw.com/p/18N6c
Dortmund supporters cheer prior to the UEFA Champions League semi final first leg football match Borussia Dortmund vs Real Madrid on April 24, 2013 in Dortmund, western Germany. AFP PHOTO / PIERRE-PHILIPPE MARCOU (Photo credit should read PIERRE-PHILIPPE MARCOU/AFP/Getty Images)
ছবি: PIERRE-PHILIPPE MARCOU/AFP/Getty Images

বার্সা এবং রেয়াল, রেয়াল এবং বার্সা৷ তারপরই আসে স্পেনের জাতীয় দলের কথা৷ সেই জাতীয় দলের জনা দশেক খেলোয়াড় রেয়ালের কোচ মুরিনহো সঙ্গে করেই এনেছিলেন৷ সেই সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো নামের ফুটবলের এক ব্রহ্মাস্ত্র৷ সব অস্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেল৷ কিসে? সেটাই তো প্রশ্ন!

বার্সার শর্ট পাসিংয়ের টিকি-টাকা, লা মাসিয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে উঠে আসা তরুণ প্রতিভারা – এসব কি এক ধাক্কায় তামাদি হয়ে গেল? তা নয়৷ ফুটবল যদি শিল্পকলা হয়, তাহলে ফুটবলের এই শৈলী যে কী ধরনের সাফল্য এনে দিতে পারে এবং অতীতে এনেও দিয়েছে, তা ভোলার নয়৷ সেই সাফল্য বার্সার, সেই সাফল্য স্পেনের৷

Dortmund's Polish striker Robert Lewandowski (L) celebrates scoring 3:1 during the UEFA Champions League semi final first leg football match between Borussia Dortmund and Real Madrid on April 24, 2013 in Dortmund, western Germany. AFP PHOTO / PATRIK STOLLARZ (Photo credit should read PATRIK STOLLARZ/AFP/Getty Images)
রবার্ট লেভান্ডোভস্কিছবি: PATRIK STOLLARZ/AFP/Getty Images

তরুণের স্বপ্ন

বলতে কি, যেন স্পেনীয় ফুটবলের সেই মহিরুহর ছত্রছায়াতেই যে কখন জার্মান ফুটবলের তরুণ, সতেজ, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ধারাটি গজিয়ে উঠেছে, সেটা যেন কেউ খেয়াল করেনি৷ জার্মানরাও নয়৷ বার্সার বিপক্ষে বায়ার্নের জয়ের পর ক্লাবের সাম্মানিক প্রেসিডেন্ট কার্ল-হাইনৎস রুমেনিগেকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘এটা অবিশ্বাস্য, এটা একটা স্বপ্ন৷'' রেয়ালের বিপক্ষে ডর্টমু্ন্ডের খেলার আগে আত্মপ্রত্যয় যদি কিছু বেশি হয়ে থাকে, তবে সেটা রেয়ালের সঙ্গে দু'টি হালের মোলাকাতের উপর ভিত্তি করে৷

চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগ থেকে যুগান্তরের কথা বলা যায় কিনা জানিনা৷ কিন্তু মঙ্গলবার এবং বুধবারের ম্যাচ দুটির ফলাফল ফুটবলে এক পালাবদলের পালার সাক্ষী হয়ে থাকবে বলেই বিশ্বাস৷ ইংরিজিতে যাকে বলে ‘চেঞ্জিং অফ দ্য গার্ড'৷ টেনিস থেকে পাওয়ার টেনিসে উত্তরণ, তারও আগে ধ্যানচাঁদের আমলের হকি থেকে আধুনিক ফিল্ড হকিতে আসা, এসব যাদের স্মরণে আছে, তারা হয়ত দেখতে পাবেন ‘দ্য সাইন অফ দ্য টাইমস'৷

জার্মান জাতীয় একাদশে হঠাৎ তরুণ খেলোয়াড়দের আনা এবং তার ফলে সেই দল ও তার খেলার ভোল পাল্টে যাওয়া থেকেই হয়ত এসবের সূচনা হয়েছিল৷ যার জন্য অবশ্যই জাতীয় দলের কোচ ইওয়াখিম ল্যোভকে ধন্যবাদ জানাতে হয়৷ জাতীয় একাদশ থেকে এই তারুণ্যের ছোঁয়া কখন যে সারা বুন্ডেসলিগায় ছড়িয়ে পড়ে, সেটা হয়ত ফুটবল বিশেষজ্ঞরা খেয়াল করেছেন৷ তবে ডর্টমুন্ডের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ যে একটি তরুণ দল গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিলেন, সেটা সুবিদিত৷

বারো আনা ফারাক

দ্বিতীয়ত, বুন্ডেসলিগার জার্মান ক্লাবগুলো কখনোই স্টার সিস্টেমে বিশ্বাস করেনি এবং আজও করে না, যাবতীয় রবেন-রিবেরি সত্ত্বেও৷ ইংল্যান্ড, ইটালি কিংবা স্পেনের ক্লাবগুলোর মতো বিপুল খরচে নামকরা খেলোয়াড়দের এনে একদিকে ট্রফি জেতা, অন্যদিকে জার্সি বেচার যে রথ-দেখা-কলা-বেচার মহাজনপন্থা, জার্মান ক্লাগুলো তা কোনোদিনই অনুসরণ করেনি৷ জার্মান ক্লাবগুলো আবার হিসেবীও: তারা কাপড় মেপে কোট কাটায় বিশ্বাসী৷

লোকের কাছে তা কিপ্টেমি বলেও মনে হতে পারে! অথচ সেই ‘কিপ্টেমি'-র কারণেই জার্মানিতে তরুণ প্রতিভারা বুন্ডেসলিগার ক্লাবগুলো থেকে জাতীয় দলে উঠে আসে৷ জার্মান ফুটবল সমিতি ডিএফবি বেশ কয়েক বছর ধরে ক্লাবগুলোকে যুব-কিশোর পর্যায়ে প্রতিভা খোঁজার কাজে নিবদ্ধ করেছে৷ মজার কথা, এসবই কিন্তু স্পেনের অনুকরণে৷ যেমন ফুটবলার হিসেবে আজকের জার্মান খেলোয়াড়রা যে সব স্কিল বা দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করে ফেলেছে, সেগুলোর উৎপত্তিও এক হিসেবে স্পেনে৷

Real Madrid's Cristiano Ronaldo (L) shoots a free kick against Borussia Dortmund during their Champions League semi-final first leg soccer match in Dortmund April 24, 2013. REUTERS/Wolfgang Rattay (GERMANY - Tags: SPORT SOCCER)
ডর্টমুন্ড রেয়ালকে হারাল ৪-১ গোলেছবি: Reuters

জার্মান উপাদান

সঙ্গে বিশেষভাবে যে জার্মান উপাদানগুলো যুক্ত হয়েছে, সেগুলি হলো শারীরিক শক্তি ও ক্ষিপ্রতা; শৃঙ্খলা, যা কিনা জার্মান স্বভাব-প্রকৃতি; সেই সঙ্গে নাছোড়বান্দা মনোভাব, যার ফলে খেলোয়াড়রা নব্বই মিনিট দৌড়ে যেতে পারে, লড়ে যেতে পারে৷ জার্মানরা কখনো হাল ছাড়ে না৷

ওদিকে জার্মানরা কখনো ডিফেন্স বা রক্ষণাত্মক খেলাকেও অবহেলা করে না, তা তাদের আক্রমনভাগ যতই শক্তিশালী হোক না কেন৷ জার্মান গোলরক্ষক অনেকের মতেই এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা৷ বিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়ের পিছনে জোঁকের মতো লেগে থেকে তার জীবনটা দুর্বিষহ করে তোলা, তাকে সম্পূর্ণ অকেজো করে দেওয়া – এই কৌশলের উদ্ভাবন ইংল্যান্ডে হলেও, জার্মানরাই আজ এর ওস্তাদ৷ বুধবার রেয়ালের বিপক্ষে ডর্টমুন্ডের পিসেক কিন্তু এ কৌশলেই রোনাল্ডোকে প্রায় সত্তর ভাগ নিষ্ক্রিয় রেখেছিলেন৷

শেষমেশ এটুকু না বললে অন্যায় হবে যে, ডর্টমুন্ডের হয়ে রেয়ালের বিপক্ষে যে একাই চার গোল করেছেন, সেই রবার্ট লেভান্ডোভস্কি আসলে পোল্যান্ডের জাতীয় দলের খেলোয়াড়৷ এছাড়া ডর্টমুন্ড দলে পিসেক কিংবা ব্লাজিকোভস্কির উপস্থিতিও এ কথাই বলছে যে, আমরা শুধু জার্মান ফুটবলের নয়, বস্তুত এক মধ্য ইউরোপীয় ফুটবল সংস্কৃতির উত্থান দেখছি৷ খেয়াল করবেন, সংস্কৃতি, শৈলী নয়৷

এ ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হলো কি ভুল হলো, তার হেস্তনেস্ত হবে ব্রাজিলে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য