1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুঁসছে নারায়ণগঞ্জ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১ মে ২০১৪

অপহরণের পর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় শোকে, বিক্ষোভে উত্তাল নারায়ণগঞ্জ৷ শহরের অবস্থা থমথমে৷ হামলা হয়েছে সন্দেহভাজন আসামির কার্যালয়ে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি৷ রবিবার ডাকা হয়েছে হরতাল৷

https://p.dw.com/p/1Bs11
Bangladesch - Landesweiter Streik
ছবি: Getty Images

বুধবার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধারের পর, বৃহস্পতিবার নিহতদের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে৷ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের জানাজায় উপস্থিত হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ জানাজার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে৷ তারা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নূর হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ তারা একটি সরকারি অফিসেও হামলা চালায়৷ পরে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন৷ নূর হোসেন এই হত্যা মামলার একজন আসামি৷ তবে তিনি এখনও পলাতক আছেন৷

জানাজায় নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের ছেলে নাঈম ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘প্রকাশ্যে অপহরণ করে হত্যা করা হলো অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাঁচাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷ এটাই অনেক কিছু প্রমাণ করে৷''

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘নজরুল বেশ কিছুদিন ধরেই আতঙ্কে ভুগছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন যে, তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ আমরা দলীয় নেতা, পুলিশ, র‌্যাব – – সবাইকে জানিয়েছিলাম৷ তারা যদি ব্যবস্থা নিত, এই খুন হতো না৷''

বুধবার লাশ উদ্ধারের পর থেকেই ঢাকা-নারায়ণঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন৷ সেই অবরোধ অব্যাহত আছে এখনও৷ অবরোধকারীরা গাড়ি ভাঙচুর এবং গাড়িতে আগুন দেয়৷ বৃহস্পতিবার সারাদিনই নারায়ণগঞ্জ শহরে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল করে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়৷ তাদের অভযোগ, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের হাত রয়েছে৷'' বলা বাহুল্য, এরপর শামীম ওসমানের বাসার নিরপত্তা বাড়ানো হয়৷ এছাড়া তিনি নিজেও নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন বলে প্রকাশ৷

এদিকে নিহত সাতজনের মধ্যে চন্দন সরকার নামে একজন আইনজীবীও আছেন৷ নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার নারায়নগঞ্জ শহরে সকাল-সন্ধ্য হরতাল ডেকেছে৷ আইনজীবী সমিতির নেতা তৈমুর আলম খন্দকার জানিয়েছেন যে, আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে৷ পরিস্থিতি মেকাবেলায় শহরে র‌্যাব পুলিশের সঙ্গে বিজিবি-ও মোতায়েন করা হয়েছে৷

নারায়ণগঞ্জ থেকে গত রবিবার একসঙ্গে সাতজনকে অপহরণ করা হয়৷ তাঁরা হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দনকুমার সরকার ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ইব্রাহিম৷

Symbolbild Tatort
ছয়জনেরই পেট কাটা ছিল, বাঁধা ছিল চোখছবি: Getty Images

এর মধ্যে বুধবার দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়৷ অপর আরেক জনের লাশ উদ্ধার করা হয় বৃহস্পতিবার৷ উদ্ধার হওয়া প্রতিটি মরদেহের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল বড় বড় কংক্রিটের খণ্ড, যাতে করে মরদেহগুলো নদীতে ডুবে থাকে৷ শুধু তাই নয়, তাঁদের পেট কাটা ছিল, বাঁধা ছিল চোখ৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন এবং অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অপহরণ এবং হত্যার ধরণের মধ্যেই অনেক ইঙ্গিত আছে৷ তাঁদের প্রকাশ্যে অপহরণের এক ঘণ্টার মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে খবর চলে আসে৷ তারপরও অপহরণকারীরা নিবৃত্ত হয়নি এবং নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে গাড়িসহ অপহরণ করলেও পুলিশ তাঁদের উদ্ধারে তৎপর ছিল না বলেই মনে হয়৷ আর ড্রাইভারসহ সঙ্গিদের হত্যা প্রমাণ করে যে, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যাঁকে তারা পেয়েছে, তাঁকেই ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ তাঁর সঙ্গে আর কেউ থাকলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতো৷''

হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘এর মানে হলো, যারা অপহরণ এবং হত্যা করেছে তারা অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে এবং তাদের কাজে বাধা দেয়া সহজ ছিল না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য