ফটোসাংবাদিকতায় নারী
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২কাকলী প্রধান৷ বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক৷ কীভাবে এই পেশায় তিনি এলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে কাকলী শোনান তাঁর গল্প৷
‘‘শিশুকাল থেকেই সাংবাদিক হবার ইচ্ছে ছিলো আমার৷ মা-বাবাও চেয়েছিলেন আমি যেনো সাংবাদিক হই৷ তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হবার পর পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ শুরু করি আমি৷''
কাকলী শুরুটা করেছিলেন বটে, কিন্তু সাংবাদিকতায় থাকতে পারেন নি বেশি দিন৷ সাংবাদিকতায় থাকতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আমার পুরুষ সহকর্মীদের আচরণ খুবই অপমানকর ছিলো৷ সেই ১৯৯৩ সালের দিকে যখন আমি সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকায় কাজ করছিলাম, তখন আমার হাউস থেকেই আমাকে নিরুৎসাহিত করা হয়৷ ছেড়ে দিতে হয় আমার চাকরী৷''
নিরুৎসাহ হয়ে ও অপমানে মনে কষ্ট চেপে সাংবাদিকতা ছাড়লেন কাকলী৷ যোগ দিলেন একটি কলেজে৷ এর মধ্যে বিয়েও করলেন৷ কিন্তু তাঁর গল্পটা এখানেই শেষ নয়৷ বরং শুরু৷
জীবনের সেই নতুন আরম্ভের কথাটা কাকলী বলেন এভাবে, ‘‘সাংবাদিকতা ছেড়ে আমি খুব হতাশ ছিলাম৷ তখন আমার স্বামী, তিনিও একজন সাংবাদিক, তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি যেহেতু সাংবাদিকই হতে চাও তো আবার নতুন করে শুরু করো৷ ফটোগ্রাফিতে মাস্টার্স করে ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করো'৷''
কাকলী বলেন, ‘‘তার কথা মতো আমি শিক্ষকতা ছেড়ে আবার পড়ালেখা শুরু করি৷ তারপর ফটোগ্রাফিতে মাস্টার্স শেষ করে পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে শুরু করি আমার ফটোসাংবাদিক জীবন৷''
পড়ালেখা করে, পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়েই এবার পথে নেমেছেন কাকলী৷ কিন্তু তিনি বলছেন, এর পরেও পুরুষ সহকর্মীর কাছে যারপরনাই অপমান আর অবজ্ঞা পেতে হয়েছে বহুদিন৷
রাজধানী ঢাকায় যখন ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে এতো প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়, তখন মফস্বলের চিত্রটা কী? নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সে কথাই জানাচ্ছেন দৈনিক সবুজ সিলেট পত্রিকার জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক বিলকিস আক্তার সুমী৷
‘‘আমি যখন এই পেশায় আসি তখন কেউ আমাকে ভালো ভাবে নিতে পারে নাই৷ আমার পরিবার থেকে সমস্যা হয়েছে৷ অফিসের ছেলে সহকর্মীরা বলেছে যে, মেয়ে মানুষ আবার ফটোসাংবাদিক হয় না-কি! বাইরে ছবি তুলতে গেলে পুরুষেরা নানা কথা বলোছে৷ তাই প্রথম দুই তিনটা বছর খুব কষ্ট গেছে আমার৷ কিন্তু আমি হাল ছাড়ি নাই৷''
সহকর্মী হিসেবে নারী ফটোসাংবাদিকের প্রতি নেতিবাচক এই মনোভাব ছিলো অনেকের৷ তবে এখন সেটা অনেকটাই পাল্টেছে৷ এমনটাই মনে করেন বার্তাসংস্থা ফোকাস বাংলার প্রধান ইয়াসীন কবীর জয়৷
ইয়াসীন কবীর বলছেন, ‘‘মানুষের মনোভাব পাল্টেছে৷ আগে সিনিয়র সাংবাদিকরা মেয়েদেরকে ভালো ভাবে নিতে পারতো না৷ এখন আর সেরকম না৷''
তিনি আরো বলেন যে, ‘‘আমার প্রতিষ্ঠানেও বেশ ক'জন মেয়ে ফটোসাংবাদিক কাজ করেছে৷ নারী হিসেবে তারা যেমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয় নাই, তেমনি তারা কোনো বিশেষ সুবিধাও পায় নাই৷ মেয়েরা তাদের যোগ্যতা দিয়েই নিজেদের প্রমাণ করেছে৷''
কাকলী প্রধান বা বিলকিস আক্তার সুমীর মতো আরো অনেক নারীই বাংলাদেশে এসেছেন ফটোসাংবাদিকতায়৷ হরতাল, মিছিল মিটিং, মারামারির সময় ঘটনার কাছ থেকে তুলে আনছেন ছবি৷ এর পরও তাদের সংখ্যাটা বেশি নয় বলে মনে করছেন ইয়াসিন কবীর জয়৷
তিনি বলছেন যে, ‘‘বাংলাদেশে অনেক নারী ফটোগ্রাফার আছে ঠিকই, কিন্তু নারী ফটোসাংবাদিকতার সংখ্যা এখনো কম৷''
যদিও ফটোগ্রাফার হিসেবে অনেক নারীই কাজ করছেন বাংলাদেশে কিন্তু ফটো সাংবাদিকের সংখ্যা কম৷ তবে কাকলী প্রধান, বিলকিস আক্তার সুমী এবং ইয়াসীন কবীর জয়, সবাই বলছেন যে, সময় খুব দ্রুত পাল্টাচ্ছে৷ ফুল, পাখি, প্রকৃতি বা নির্ভেজাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ছবি নয়, বুলেট বা বোমার ভয় উপেক্ষা করে নারী ফটো সাংবাদিকরাও এখন তুলে আনছেন হরতাল ও মিছিলের খবর৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক