1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষা নিয়ে বড় সমস্যায় ভারত

৬ সেপ্টেম্বর ২০১২

ভারত এগিয়ে চলেছে, হতে চলেছে নতুন সুপার পাওয়ার৷ এ বাস্তবতা, এ সম্ভাবনার কথা জানেন সবাই৷ তবে সুপার পাওয়ার হওয়ার পথে প্রাথমিক শিক্ষাই যে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটা কিন্তু তেমন একটা নজরে আসছে না৷

https://p.dw.com/p/16417
ছবি: AP

ভদ্রমহিলা ভীষণ হতাশ৷ একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন বড়সড় খাতাটার দিকে৷ বড় বড় নাম সেখানে৷ তাঁদের দায়িত্বও খুব বড়৷ ভবিষ্যৎ নাগরিক গড়ে তোলা৷ কিন্তু উত্তর প্রদেশের বাঘপত জেলার ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি সে দায়িত্ব পালন করছেন? করছেন না বলেই তো প্রধান শিক্ষিকা হতাশ৷ তাঁর সহকর্মীদের অনেকে যে নিয়মিত স্কুলের পথই মাড়ান না!

অথচ ভারত স্বপ্ন দেখছে সুপার পাওয়ার হবার৷ এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব শুধু আজ যারা শিশু তাদের অধিকাংশ ভবিষ্যতের সুদক্ষ, সুনাগরিক হয়ে উঠলেই৷ কিন্তু রাজ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণই মনে হয়৷ ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার কম, শিক্ষকদের অনেকে স্কুলে আসতে অনিচ্ছুক৷ এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্য পূরণ হবে কী করে! অথচ সরকারের উদ্যোগে যে ঘাটতি আছে এমনও নয়৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা বরং বলছিলেন সরকার রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা খাতে যে অর্থ ব্যয় করছে তার সদ্ব্যবহার হলে খুব বড় কিছুই আশা করা যেতো, ‘‘সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের বই, ইউনিফর্ম আর দুপুরের খাবার দিচ্ছে বিনা পয়সায়৷ কিন্তু এত করেও লাভ হচ্ছে না৷ হবে কী করে, শিক্ষকরা মন দিয়ে কাজ করলেই তো কেবল শিক্ষার্থীরা এগোতে পারবে৷ এখানে শিক্ষকরা স্কুলেই আসেন না, আর তাই সরকারের টাকাগুলো যায় জলে৷''

Indien Bildung für alle
ছবি: AP

ভারতে বিভিন্ন রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক অনুপস্থিতির চিত্রটা সত্যিই ভয়াবহ৷ অনেকের যোগ্যতা আর সততাও প্রশ্নবিদ্ধ৷এই কিছুদিন আগেই ঘটে গেছে বড় রকমের এক কেলেঙ্কারি৷ তাতে এক সঙ্গে চাকরি হারিয়েছেন ৭৭ জন শিক্ষক৷ তাঁদের প্রত্যকেই চাকরি নিয়েছিলেন জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে৷

এমন পরিস্থিতিতে খুব আশাবাদী থাকা মুশকিল৷ কিন্তু শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘প্রথম'-এর রুকমিনী ব্যানার্জী আলোকিত সম্ভাবনার দিকটাই তুলে ধরে বলছেন, ‘আমাদের তো অনেক শিশু, যারা যোগ্যও৷ তবে আমরা যদি তাদের দশ বছরের মধ্যে একুশ শতকের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই তাহলে কাজ শুরু করতে হবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে৷ তা না করতে পারলে আমরা বিশাল এক সুযোগ হারাবো৷'

ভারত সরকার অবশ্য চেষ্টার ত্রুটি করছে না৷ প্রজাতন্ত্র দিবসে সে কথাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং৷ ৫১ হাজার নতুন স্কুল খোলা হয়েছে, নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাত লাখ শিক্ষক -- নিজের ভাষণে গত দু বছরে নেয়া এসব পদক্ষেপের উল্লেখ করে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভারতকেই তুলে ধরেন তিনি৷ কিন্তু কার্ত্তিক মুরালিধরন খুব আশা করার মতো কিছু দেখছেন না৷ দেখার কথাও নয়, তিনি যে গবেষণা করে দেখেছেন রাজ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা কতটা কর্মবিমুখ৷ বছরের বেশির ভাগ সময় ছুটিতেই থাকেন অনেকে৷ ২০০৩ সালে শতকরা ২৫ ভাগ শিক্ষক কোনো না কোনো সময় স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন৷ ২০১০ সালে অবস্থার কিছুটা উন্নতি চোখে পড়ে৷ সে বছর অনুপস্থিতির হার ছিল ২৩ দশমিক ৭ ভাগ৷ তবে উত্তর প্রদেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ সেখানে শিক্ষক অনুপস্থিতির হার ত্রিশেরও বেশি৷ অনুপস্থিতির কারণ অনেক৷ অসুস্থতা, মাতৃত্বকালীন বা সন্তান লালন-পালনের ছুটির ব্যাপারস্যাপার তো আছেই, আছে ছলে-বলে কাজ ফাঁকি দেয়ার ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত৷ শতকরা ৬০ ভাগ শিক্ষকই অনুপস্থিত থাকেন অন্যায়ভাবে৷ কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঢুকে পড়েন অন্য চাকরিতে৷ তাহলে স্কুল? স্কুল চলে দু'চারজন সৎ শিক্ষককে নিয়ে৷ অন্য চাকরি যারা করেন তাঁরা অবশ্য স্কুল পরিদর্শকদের পকেটে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে স্কুলের বেতনটাও তুলে নেন ঠিকই!

এসি / জেডএইচ (এএফপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য