অভিনব উদ্যোগ
৫ মে ২০১২দুর্ঘটনা বা অসুখ-বিসুখে অহরহ মানুষের হাড়গোড় ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে৷ তবে শৈল্য চিকিত্সকরা আজকাল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনায়াসে জোড়া লাগাতে পারেন ভাঙা হাড়৷ এজন্য সাধারণত নিকেল বা টাইটেনিয়ামের পাত ব্যবহার করেন তাঁরা৷ তবে এই পদ্ধতির একটা নেতিবাচক দিক হল, হাড় জোড়া লেগে গেলে ধাতুর পাতটি অনেক ক্ষেত্রেই শরীর থেকে আবার বের করে নিতে হয়৷ তার মানে, রোগীকে আবারো অপারেশনের সম্মুখীন হতে হয়৷ এই ধরনের কাটাছেঁড়ায় ঝুঁকিও কম নয়৷ এ কারণে চিকিত্সকরা হাড় জোড়া লাগানোর জন্য ম্যাগনেশিয়াম থেকে তৈরি এক হালকা ধাতুর ব্যাবহার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷ এই ধাতু আপনা আপনি ক্ষয় হয়ে শরীরে মিশে যায়, বলেন হানোফার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ফ্রাঙ্ক ভিটে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এক দিকে ভাঙা হাড় যাতে শক্তপোক্তভাবে জোড়া লাগে, সে দিকে সচেষ্ট থাকতে হয়, অন্যদিকে হাড় জোড়া লেগে গেলে আবার যাতে অপারেশনের ধকল পোহাতে না হয়, সেই চিন্তাটাও মাথায় রাখতে হয়৷ জোড়া লাগানোর জন্য মাগনেশিয়ামের সঙ্গে খাদ মিশিয়ে পাত তৈরি করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে আমাদের ধারণা, যেমন কনুই-এর নীচের অংশ ভেঙে গেলে৷''
বিশুদ্ধ ম্যাগনেশিয়ামে সমস্যা
ইমপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে মাগনেশিয়ামের ব্যবহার অবশ্য একেবারে সমস্যামুক্ত নয়৷ হালকা এই ধাতু ক্ষয় হয়ে শরীরে মিশে যেতে কত দিন লাগবে, তা আগে থেকে বলা যায় না৷ এর পর এই বস্তুটি হাড় বা পেশিতে মিশে থাকতে পারে, অথবা মূত্রের সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে৷ গবেষক ফ্রাঙ্ক ভিটে এ কারণে খাদযুক্ত ম্যাগনেশিয়াম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷ মিশ্রিত পদার্থটি দ্রুত গলে যায় না এবং সহজে ভেঙেও পড়ে না৷ ভাঙা হাড়গোড় জোড়া লাগার সময় পায়৷ ফ্রাঙ্ক ভিটে বলেন, ‘‘আমরা ম্যগনেশিয়ামের সঙ্গে মেশানোর জন্য খাদ নিয়ে গবেষণা করেছি, যাতে বিরল এক ধরনের মাটি রয়েছে৷ এটা ম্যাগনেশিয়ামের সঙ্গে মিলে এক ধরনের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে৷ এর ফলে পদার্থটি দেহে প্রতিস্থাপন করলে ক্ষয় হওয়ার প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে৷''
মিশ্রণে ভাল ফল
ভাঙা হাড়ের প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ম্যাগনেশিয়ামের এই মিশ্রণটি বেশ কার্যকর বলে মনে করা হচ্ছে৷ কেননা এটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ক্ষয় হয়ে শরীরে মিশে যায় অথবা বের হয়ে যায় মূত্রের সঙ্গে৷ জীবজন্তুর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল দেখা গেছে ইতিমধ্যেই৷ তুর্কি গবেষকরা ভেড়ার ওপর ম্যাগনেশিয়াম ইমপ্ল্যান্ট করে সাফল্য লক্ষ্য করেছেন৷ গবেষক ফ্রাঙ্ক ভিটে জানান, গবেষণাগারে আমরা দেখাতে পেরেছি, হালকা এই ধাতু হাড়ের গঠনকে ত্বরান্বিত করে৷ এর একটা কারণ হল, ম্যাগনেশিয়ামের সঙ্গে ক্যালশিয়ামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে৷ আর হাড়ের সারপদার্থ ক্যালশিয়াম থেকে তৈরি ৷
এছাড়া ফ্রাঙ্ক ভিটের গবেষণাগারে আর একটি ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করা গেছে৷ ম্যাগনেশিয়াম বায়ু বা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে ম্যাগনেশিয়াম-হাইড্রোক্সাইড তৈরি হয়৷ এই পদার্থটি ভাঙা হাড়ের জোড়া লাগার কাজটিকে সহায়তা করে৷ ড. ফ্রাঙ্ক ভিটে জানান, ‘‘ম্যাগনেশিয়াম-হাইড্রোক্সাইড পাউডার হিসাবে হাড়ে প্রতিস্থাপন করে আমরা প্রথম চার সপ্তাহে স্পষ্টতই ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করেছি৷''
আরো কিছু গবেষণা করলে বোঝা যাবে, রোগীরা এই ইমপ্ল্যান্ট কতটা সহ্য করতে পারেন৷ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষায় খাদযুক্ত ম্যাগনেশিয়ামের সুফল দেখা গেলে খুব শিগগিরই এই পদার্থ প্রতিস্থাপন চিকিত্সায় রুটিনে পরিণত হবে৷ রোগীরা ইমপ্ল্যান্টের পাত বের করার জন্য আরেকটি অপারেশনের হাত থেকে রেহাই পাবেন৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ