1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পৃথিবীর ওজোনস্তরের ফুটো দিন দিন বড় হচ্ছে

২১ মে ২০১০

পৃথিবীর রক্ষা বলয় বা ওজোনস্তরের ফুটো দিন দিন বড় হচ্ছে৷ অবস্থা শোচনীয়৷ তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন বিশ্ব নেতারা৷ প্রয়োজন সমন্বিত সিদ্ধান্ত৷ কারণ পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে সূর্যের 'অতিবেগুনি রশ্মি'র হাত থেকে৷

https://p.dw.com/p/NTXi
ছবি: AP

আকাশের নিলাভ রঙ-ই হচ্ছে ওজোন স্তরের রং৷ ওজোন অক্সিজেনের একটি রূপভেদ৷ যার রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর একত্রিকরণ৷ সূর্যের 'অতিবেগুনি রশ্মি' এই ওজোন স্তর শোষণ করে নেয়, যার জন্য সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে পৃথিবীর প্রাণীসহ উদ্ভিদজগতের বেঁচে থাকা সম্ভব হয়েছে৷

পৃথিবীর পরিবেশ ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে, তাপমাত্রা যাচ্ছে বেড়ে, বাড়ছে পরিবেশগত অসামঞ্জস্য অবস্থা৷ আর এই অসামঞ্জস্যের অন্যতম প্রধান কারণ পৃথিবীকে ঘিরে থাকা ওজোনস্তরের ক্ষয় এবং এর মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি৷ যে ওজোনস্তর অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে৷

আজ থেকে ২৫ বছর আগে এক দল আবহাওয়া বিজ্ঞানী যখন অ্যান্টার্কটিকায় গবেষণা চালাচ্ছিলেন, তখনই তাদের সুক্ষ্ন আকাশ পর্যবেক্ষক যন্ত্রে ভেসে ওঠে এক ফুটো৷ যার আকার দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে৷ আর এর মাধ্যমেই সূর্যের 'অতিবেগুনি রশ্মি' এসে পৌঁছাচ্ছে পৃথিবীতে৷ বিজ্ঞানীরা যখন তাদের এই আবিস্কারের কথা প্রকাশ করলেন, তখন থেকে সারা বিশ্বে এটি একটি প্রধান আলোচ্য বিষয়৷

২৫ বছর আগে যে বিজ্ঞানীর দল এই ফুটো আবিস্কার করেছিলেন তাদের নেতা ড. জো ফারম্যান৷ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি জানালেন, অবস্থা দিন দিন আরও শোচনীয় হচ্ছে৷ আর এ জন্য বিশ্ব নেতাদের কার্যকর এবং অতি শিগগিরই কোন ব্যবস্থা নিতে হবে৷

Bucht von Sidari auf Korfu Griechenland
ছবি: picture-alliance / OKAPIA

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ২০০৮ সালে ওজোনস্তরের এই ফাটলের পরিমাণ ছিল ২৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার৷ আর ২০০৬ সালে ছিল ২৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার৷ ২০০৯ সালে এই পরিমাণটি একটু কম হলেও তা কোন ভাবেই আশঙ্কার বাইরে নয়৷ ২০০৯ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারে৷

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গিয়ার ব্রাথেন কয়েকদিন আগে সংবাদ সংস্থাগুলোকে বলছেন, 'শীত ও গ্রীষ্মে তাপের তারতম্যের কারণে দুই মেরুর ওজোনস্তরে বছরের পর বছর ধরে বেশ পরিবর্তন লক্ষণীয়৷ সুমেরুর ওজোনস্তর কুমেরুর চেয়ে বেশি পরিবর্তনশীল হলেও পৃথিবীর তাপমাত্রা তথা সামগ্রিক পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য কুমেরুর ওজোনস্তর বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷'

১৯২০ সালের পর থেকে সিএফসিসহ কলকারখানার বিভিন্ন গ্যাসের কারণে পৃথিবীর পরিবেশগত প্রাকৃতিক ধারা বদলে যেতে থাকে৷ বিপর্যস্ত হতে থাকে পরিবেশ৷ যখন আমাদের টনক নড়ে তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল৷ এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা তৈরি হয় এবং ১৯৮৭ সালে সিএফসি ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের ব্যবহার-সংক্রান্ত মন্ট্রিল চুক্তি সম্পাদিত হয়৷ এরই ফলস্বরূপ বিজ্ঞানীরা দেখতে পান কিছুটা উন্নতি৷

কুমেরুর ওজোনস্তরে ক্ষয়ের সাম্প্রতিক কয়েক বছরের তথ্য সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে৷ এ সমস্যা মোকাবিলার জরুরি সমাধান খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা৷ ভয়াবহ এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই৷ ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি দেশের সরকারকে৷ আর কাজটি করা যেহেতু কোনো একটি দেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, এ জন্য দরকার সারা বিশ্বের ঐকমত্য৷ সে লক্ষ্যে নানা উপলক্ষে দফায় দফায় বিশ্বনেতারা বসছেন, প্রতিজ্ঞা আর চুক্তি করছেন৷ কিন্তু এর কতটুকু সত্যিকারের উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা, সে ব্যাপারে বিতর্ক আছে ঢের৷ আর এত কিছুর মধ্যেও বিজ্ঞানীরা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন সামনের ভয়াবহ দিনের কথা৷

প্রতিবেদন: সাগর সওয়ার

সসম্পাদনা: দেবারতি গুহ