1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুত্র সন্তানের দিকে নজর রাখতে বললেন মোদী

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১৫ আগস্ট ২০১৪

শুক্রবার ভারতের ৬৮ তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী দিল্লির লালকেল্লা থেকে দেয়া তাঁর প্রথম ভাষণে দেশবাসীর সামনে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন৷

https://p.dw.com/p/1CvNB
Indiens Premierminister Modi Feier des Unabhängigkeitstags 15.08.2014
ছবি: Prakash Singh/AFP/Getty Images

পায়ে পায়ে পেরিয়ে গেল ভারতের স্বাধীনতার ৬৭টি বছর৷ ৬৮ তম স্বাধীনতা দিবস চিরাচরিত উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়৷ দিল্লির লালকেল্লা থেকে প্রথাগত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রথম ভাষণ দেন কোনো স্ক্রিপ্ট হাতে না নিয়েই৷ ঘণ্টা খানেকের ভাষণে পাঁচটি নতুন সংস্কারের এক নিজস্ব পথনির্দেশিকা তুলে ধরেন তিনি৷ তাতে ছিল প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক সংস্কার, কর্মসংস্কৃতি ও দক্ষতা বাড়ানোর কথা৷ তুলে ধরেন অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত, প্রতিরক্ষা, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, গাড়ি থেকে সাবমেরিন সবকিছু তৈরির জন্য বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা৷ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া' ব্র্যান্ডে তাদের পণ্যসামগ্রী বিদেশের যে-কোনো দেশে রপ্তানি করতে পারবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী৷

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, জাতপাত ও সামাজিক উত্তেজনা বর্জনে দেশের যুবসমাজের ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপালে মাওবাদী জঙ্গিরা হিংসা পথ ত্যাগ করে সাংবিধানিক মূল স্রোতে ফিরে এসেছে৷ দেশে শান্তির পরিবেশ না থাকলে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প সফল হতে পারে না৷ মোদী হয়ত বজরং দল ও সঙ্ঘপরিবারে কট্টর দক্ষিণপন্থিদের বার্তা দিতে চেয়েছেন, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক হিংসা বর্জন করে উন্নয়নের পথ সুগম করতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার৷ তবে এই প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মোদীর এই আর্থিক দর্শন তাঁর পথপ্রদর্শক সঙ্ঘপরিবার সমর্থন করে কিনা সেটাই এখন দেখার৷ কারণ ভারত খুচরো ব্যবসা, প্রতিরক্ষা খাতে এবং জেনেটিক্যালি মডিফায়েড শস্য উৎপাদনে বিদেশি লগ্নির বিরোধী৷

আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংস্কারের কথা বলেছেন মোদী তাঁর ভাষণে৷ সেটি হলো পরিকল্পনা কমিশন তুলে তার জায়গায় গঠন করা হবে এক নতুন ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক' প্রতিষ্ঠান যাতে উন্নয়ন পরিকল্পনায় নতুন চিন্তাধারার আগমন ঘটে৷ নেহেরু সরকারের আমল থেকে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে দেশ গঠনের লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন৷

মহিলাদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ধর্ষণের ঘটনাকে দেশের লজ্জা বলে অভিহিত করেন মোদী৷ তিনি বলেন, এর বিহিত করতে হবে ঘরে বাইরে৷ তারজন্য পরিবারকে পুত্র সন্তানের দিকে কড়া নজর রাখতে হবে৷ মেয়েদের প্রতি পরিবারের এবং সমাজের দায়বদ্ধতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি৷ কন্যাভ্রুণ হত্যা বন্ধ করতে তিনি চিকিৎসক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান৷

নির্বাচিত বিধায়কদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ, তাঁরা যেন তাঁদের নির্বাচিত কেন্দ্রের অন্তত একটি গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলেন৷ প্রতিটি গরিব পরিবারের জন্য এক লাখ টাকার জীবন বিমা এবং তারসঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার৷

প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ সম্পর্কে বিরোধী কংগ্রেস দলের প্রতিক্রিয়া, মোদীর ভাষণের বাস্তব প্রভাব শূন্য৷ এতে না আছে কোন দিশা, না আছে কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা, না আছে কোন নতুন উদ্যোগ৷ স্রেফ বিক্ষিপ্ত কিছু কথার ফুলঝুরি৷ গরিবদের ব্যাঙ্ক খোলার ব্যবস্থা তো কংগ্রেস সরকারই করেছে মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিমে৷ এতে নতুন কি আছে ?

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গোটা দিল্লি ছিল নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দি৷ প্রায় ৩০ হাজার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ লালকেল্লার চারপাশ ছিল ‘নো-ফ্লাই জোন'৷ রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড৷ গোয়েন্দা সূত্রের খবর আল-কায়দার জঙ্গিরা সরকারি ভবন এবং সংসদ ভবনের ওপর হামলা চালাতে পারে৷ সাদা পোশাকের পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় নজর রাখে৷

আম নাগরিকদের প্রশ্ন, গত সাত দশক ধরে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রীরা যে স্বপ্ন ফেরি করেন, সমাজের নীচুতলার কাছে তার কতটুকু পৌঁছয় ? না পৌঁছয় না৷ যদিও জিডিপির মাপকাঠিতে ভারতের স্থান দশম৷ জনসংখ্যা ১২৫ কোটির বেশি৷ ক্রয়ক্ষমতার বিচারে বিশ্বে তৃতীয়৷ বৈদেশিক বাণিজ্যে বিশ্বের ২০টি দেশের অন্যতম ভারত৷ তবু প্রদীপের নীচে অন্ধকার৷ ৩০শতাংশ মানুষ গরিবি রেখার নীচে৷ জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৭টি দেশের তালিকায় ভারতের স্থান ১৩৭৷ রাষ্ট্র নেতাদের সার্বিক প্রবৃদ্ধির বাণী তাই প্রহসনের মত শোনায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য