1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার

সমীর কুমার দে, ঢাকা৫ নভেম্বর ২০১৩

রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে এক বিদ্রোহের মাধ্যমে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৫২ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে একসঙ্গে এত মানুষের ফাঁসির আদেশ আর কখনও হয়নি৷

https://p.dw.com/p/1ABix
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

এই মামলায় আসামি ছিলেন ৮৫০ জন৷ এর মধ্যে বিচার চলাকালে মারা গেছেন ৪ জন৷ বাকি ৮৪৬ জনের মধ্যে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৭১ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে৷ বাকি ২৬২ জনকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷

ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আখতারুজ্জামান মঙ্গলবার দুপুরে এই আদেশ দেন৷

রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা ও নবকুমার ইনস্টিটিউট মাঠে স্থাপিত জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়৷ রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে আদালত ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন৷ তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী শামীম সরদার জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন৷ এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন৷

Bangladesh verschwundene Offiziere nach Meuterei
আদালতের পর্যবেক্ষণ: ‘অপারেশন ডাল-ভাত' একটি বড় কারণছবি: DW / Kumar Dey

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন উপ-সহকারি পরিচালক তৌহিদুর রহমান৷ তার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত৷ এছাড়া এই মামলায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নেতা তোরাব আলীও আসামি ছিলেন৷ তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে৷ অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছে৷ তবে ফাঁসির রায় হওয়া ১৫২ জনের সবাই বিডিআর জওয়ান৷

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়৷ নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পর আদালতের কার্যক্রম শুরু করায় বিচারক আখতারুজ্জামান শুরুতেই দুঃখপ্রকাশ করেন৷ এরপর তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণ দেয়া শুরু করেন৷ ঘটনার ব্যাপারে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘অপারেশন ডাল-ভাত' কর্মসূচি একটি বড় কারণ৷ কোনো শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী যেমন সেনাবাহিনী বা আধা সামরিক বাহিনী বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে অপারেশন ডাল-ভাতের মতো কাজে যুক্ত রাখা উচিত নয়৷ পিলখানার ভেতরে স্কুলগুলোতে বিডিআর জওয়ানদের সন্তানদের ভর্তি করতে পারার বিষয়ে আরও ছাড় দেওয়া প্রয়োজন৷ প্রয়োজনে আরও স্কুল তৈরি করা যায় কি না, তা কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত৷ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মতো বিডিআর সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো যায় কি না, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ভেবে দেখতে পারেন৷

Bangladesh verschwundene Offiziere nach Meuterei
৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়ছবি: DW / Kumar Dey

প্রথম দফায় ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ হওয়ার পর এজলাসে চিৎকার শুরু করেন আসামিরা৷ কেউ বলেন, ‘আল্লাহর দরবারে বিচার হবে৷' আবার কেউ বলেন, ‘এ দেশে কোনো বিচার নাই৷' এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম মাইক্রোফোনে এই ১৬১ জনের উদ্দেশে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা কেউ কথা বলবেন না৷ আমি আপনাদের হয়ে লড়েছি৷ আপনাদের ওপর আমার অধিকার আছে৷ এরপর আরও আদালত আছে৷ আমরা সেখানে আপিল করব৷ দয়া করে কেউ কথা বলবেন না৷' কিন্তু তাঁর কথা কানে না তুলে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে চিৎকার করতে থাকেন৷ এর মধ্যেই আদেশ পড়েন আদালত৷

আদালতের আদেশের পর বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট৷' যারা বেকসুর খালাস পেয়েছেন তাদের ব্যাপারে কি করা হবে বা তারা চাকরি ফিরে পাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইনজীবী প্যানেল এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আর এই হত্যা মামলার বাইরেও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা রয়েছে৷ এছাড়া বিদ্রোহের মামলার বিচারও শেষ হয়েছে৷ সবগুলো আদালত মিলিয়ে কেউ নির্দোষ হলে অবশ্যই তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়া হবে৷ তবে এই মুহূর্তে বিচারের রায়ে আমরা খুশি৷'

BDR Schießerei
ছবি: picture alliance / Photoshot

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটেছিল এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড৷ এ ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান৷ বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৮৫০ জনকে৷ আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা৷ বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল দরবার হল থেকে৷ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের বক্তব্যের সময় দুজন সিপাহী অতর্কিতে মঞ্চে প্রবেশ করেন৷ এরপর জওয়ানেরা দুই দিন ধরে বিডিআর মহা পরিচালকসহ ৭৪ জনকে হত্যা করেন৷ কর্মকর্তাদের বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর চালান৷ সরকারি নথিপত্রেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ বিদ্রোহ শুরুর ৩৩ ঘণ্টা পর শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান হয়৷ এ ঘটনায় লালবাগ থানার একটি হত্যা মামলা করা হয়৷ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ মামলাটি তদন্ত করেন৷ তাঁকে সহযোগিতা করেন ২০০ কর্মকর্তা৷ ৫০০ দিন তদন্তের পর ২০১০ সালের ১২ জুলাই এ আদালতে হত্যা এবং অস্ত্র-বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দু'টি অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি৷ হত্যা মামলার আসামি করা ৮৫০ জন৷ বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার আসামি ৭৮৭ জন৷ আর বিদ্রোহের মামলার আসামি ছয় হাজার ৪৬ জন৷ বিদ্রোহের বিচার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য