পাখির মতো ‘ডানা মেলে’ ওড়ার স্বপ্নপূরণ
৪ অক্টোবর ২০১০কিন্তু সেটাতো আর ডানা মেলে অর্থাৎ পাখি যেভাবে নিজের ডানায় ঝাপটি মেরে উড়ে বেড়ায়, সেরকম হলনা৷ তবে সম্প্রতি সেটিই করে দেখিয়েছেন ক্যানাডার একজন৷
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি৷ আমরা সবাই চিনি তাঁকে৷ ‘মোনালিসা' ছবির জন্য বিখ্যাত ইটালীয় এই চিত্রশিল্পী৷ তবে এর বাইরেও বেশ কিছু পরিচয় আছে তাঁর৷ একাধারে তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী, স্থপতি, আবার উদ্ভাবকও৷ তিনিই স্বপ্ন দেখেছিলেন পাখির মতো ডানা ঝাপটে মানুষ আকাশে উড়ছে৷ এর নাম দিয়েছিলেন তিনি ‘অর্নিথপ্টার'৷ ভিঞ্চি যখন তাঁর স্বপ্নের কথা বলেন, সেটা ছিল ১৪৮৫ সাল৷ এরপর কেটে গেছে ৫২৫ বছর৷ সম্প্রতি তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন টড রাইশার্ট৷ ক্যানাডার টোরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি'র ছাত্র তিনি৷
টড তাঁর অর্নিথপ্টারের নাম রেখেছেন ‘স্নোবার্ড'৷ এর পাখার দৈর্ঘ্য ছিল ৩২ মিটার৷ যেটা স্বল্প দূরত্বে চলাচলকারী ‘বোয়িং ৭৩৭' বিমানের ডানার সমান৷ তবে ওজন মাত্র ৪৩ কেজি৷ কারণ তিনি ব্যবহার করেছেন ‘বালসা' কাঠ৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই কাঠ বিশ্বের সবচেয়ে হালকা কাঠগুলোর একটি৷ ব়্যাংকিং করলে হালকাতম'র দিক থেকে তৃতীয়৷ তবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যে কাঠ, সেগুলো দিয়ে কোনো কিছু তৈরি করা সম্ভব নয়৷ তাই বলা যায় ব্যবহারযোগ্য কাঠের মধ্যে বালসাই সবচেয়ে হালকা৷
এছাড়া টড আরও ব্যবহার করেছেন কার্বন ফাইবার আর ফোম৷ অর্থাৎ উপকরণগুলো ছিল খুবই হালকা ধরণের৷ শুধু তাই নয়, ভূমি থেকে উপরে ওঠার জন্য বিমানে যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেধরণের কোনোকিছু তিনি রাখেননি তাঁর স্নোবার্ডে৷ তাহলে কীভাবে আকাশে উড়লো টডের স্নোবার্ড? উত্তর, গাড়ির সাহায্যে৷ ব্যাপারটা এরকম – একটি গাড়ির পেছনে শিকল দিয়ে স্নোবার্ডটি আটকানো ছিল৷ তারপর গাড়িটি দ্রুতগতিতে চলতে থাকলো৷ এভাবেই একসময় স্নোবার্ডটি ভূমি থেকে উপরে উঠে যায়৷ এতকিছুর পরও স্নোবার্ডের ওজন কমাতে টড নিজের ওজন কমিয়েছিলেন প্রায় আট কেজি৷
এত সাধনার পর তৈরি হওয়া স্নোবার্ড অবশেষে আকাশে ওড়ে৷ এবং সেটা আকাশে থাকে ১৯.৩ সেকেন্ড৷ দূরত্ব অতিক্রম করে ১৪৫ মিটার৷ আর গতি ছিল ২৫.৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা৷
প্রথমে বলেছি স্নোবার্ড কীভাবে আকাশে ওঠে৷ এবার বলছি আকাশে যে এটি এতক্ষণ থাকলো, সেটা কীভাবে সম্ভব হল৷ সেসময় টড একটা কাঠে পা দিয়ে পাম্প করতে থাকেন৷ ফলে স্নোবার্ডের বিশালদেহী পাখাটা একেবারে ঠিক পাখির মতোই ঝাপটা মারতে থাকে৷ এবং স্নোবার্ড আকাশে উড়তে থাকে৷ পা দিয়ে পাম্প করা ব্যাপারটা অনেকটা সাইকেলের প্যাডেল ঘোরানোর মত৷ তার মানে টড দৈহিক পরিশ্রম করে স্নোবার্ডের ডানায় পাখির মতো ঝাপটা মারতে সহায়তা করেছেন৷ আর এই ব্যাপারটাই টডকে অন্যান্যদের কাছ থেকে আলাদা করে দিচ্ছে৷ কারণ ১৯৭৭ সালে ‘গোসামের কন্ডর' নামের আরেকটি এয়ারক্রাফটের কথা জানা যায়, যেটাকে বিশ্বের সর্বপ্রথম মনুষ্য চালিত এয়ারক্রাফট বলা হয়৷ কিন্তু তার সাথে স্নোবার্ডের পার্থক্য হলো সেটা পাখির মতো ডানায় ঝাপটা মারেনি৷ অর্থাৎ একেবারে দেখতে পাখির মতো মনে হয়নি ঐ গোসামের কন্ডরকে৷ কিন্তু স্নোবার্ডের ওড়াটা দেখলে ঠিক পাখির কথাই মনে পড়ে যায়৷ মনে হয় বিশালদেহী এক পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে৷
কিন্তু এত কষ্ট করে এই অর্নিথপ্টারটা বানানোর কারণ কী? ভবিষ্যতে কী মানুষ এভাবে চলাচল করতে পারবে? এর উত্তর... হতেও পারে৷ কারণ ১৯০৩ সালে রাইট ভাইয়েরা যখন প্রথম বিমান বানিয়েছিল, সেটা প্রথমবার আকাশে ছিল মাত্র ১২ সেকেন্ড৷ তবে টড এত আলোচনার মধ্যে যাননি৷ তিনি শুধু বলেছেন, তাঁর এই আবিষ্কার মানুষকে তাঁর শরীরের পুরো শক্তি ব্যবহার করতে এবং মনের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে উৎসাহিত করবে৷
স্নোবার্ডের উড্ডয়নের সময় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব অ্যায়ারোনটিক ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তা৷ ওড়াউড়ির ক্ষেত্রে যে কোন ধরণের রেকর্ডের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে এই সংস্থাটি৷ তারাই বলেছে, টডের আবিষ্কারকে তারা রেকর্ডের স্বীকৃতি দেবে এবং সেটা এই মাসেই৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন