1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এগিয়ে চলেছেন নারীরা

১৯ এপ্রিল ২০১৩

মেডিক্যাল কলেজে লেকচার চলছে৷ শ্রোতার আসনের একেবারে শেষ কাতারে হাতে গোনা কয়েকজন ছেলে৷ বাকি সব মেয়ে৷ দেশটির নাম পাকিস্তান!

https://p.dw.com/p/18JG5
ছবি: TUJ

সেই দেশ যেখানে পরিবারের মর্যাদা রক্ষার নামে প্রতি বছর মেরে ফেলা হয় অসংখ্য মেয়েকে, যেখানে নারী নির্যাতন প্রতিদিনের গল্প, যেখানে মেয়েদের লেখাপড়ার অধিকারের কথা বলতে গিয়ে মালালা ইউসুফজাইর প্রাণনাশের চেষ্টা করতে হয় তালেবানকে৷ অথচ করাচির ডাও মেডিক্যাল কলেজে ক'দিন আগে নারী জাগরণের এই যে চিত্র দেখা গেল, তাতে কিন্তু মালালার অবদান নেই বললেই চলে৷ এই জাগরণের শুরু ১৯৯১ সালে৷ তার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানে মেডিক্যালে পড়ার ক্ষেত্রে ছিল এমন এক কোটাব্যবস্থা যা মেনে কোনো প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৮০ ভাগ ছেলের পাশে পড়ার সুযোগ পেতো মাত্র ২০ ভাগ মেয়ে৷ ৯১ সালে সুপ্রিম কোর্ট এ কোটাব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে রুল জারি করায় যোগ্যতাই হয়ে যায় ভর্তির সুযোগ পাওয়ার একমাত্র মাপকাঠি৷ মেয়েদের নজরে পড়ার মতো হারে এগিয়ে আসার শুরু তখন থেকেই৷ মালালার কিন্তু তখন জন্মই হয়নি!

করাচির ডাও মেডিক্যাল কলেজে এখন শতকরা ৭০ ভাগ মেয়ে আর ছেলে বাকি ৩০ ভাগ৷ পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কথা ভাবুন, সে দেশের মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সেখানে চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে যাঁরা লেখাপড়া করছেন, তাঁদের মধ্যে ৪৭ ভাগ মেয়ে আর বাকি ৫৩ ভাগই ছেলে!

Anschlag auf Polizeichef in Peshawar Pakistan
পাকিস্তানের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নারীরা তাদের জায়গা করে নিচ্ছেছবি: picture-alliance/dpa

নারীদের মধ্যে এমন জাগরণের চিত্র দেখে খুশি হওয়ার কারণ অবশ্যই আছে৷ তাই বলে আলোর পাশে আঁধারও যে আছে সেদিকে নজর না দিলে কিন্তু বাস্তব চিত্রটা পুরোপুরি দেখা হবে না৷ মেয়েরা ডাক্তার হচ্ছেন অনেক বেশি হারে – এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে তাঁদের অনেকেই আবার চাকরি করতে পারছেন না৷ ডাক্তার হলে ভালো বর পাওয়া যাবে বলে পরিবার ডাক্তারি পড়ার ব্যাপারে যতটা উৎসাহিত করে, লেখাপড়া শেষ করার পর চাকরি করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে ঠিক ততটাই৷ বিয়ের পর স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকেরাও সাধারণত চান না ঘরের বউ চাকরি করুক৷ তাই ডাক্তার হয়ে অনেক মেয়েকেই পড়ে থাকতে হয় স্বামীর ঘরে৷ ডাক্তারি পড়ে তাঁদের কী লাভ হয় বলুন!

সমাজেরও খুব একটা কাজে আসেন না তাঁরা৷ অথচ কত সাধ করেই না মেয়েরা মেডিক্যাল কলেজে যায় ডাক্তার হতে৷ ডাও কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আয়েশা সুলতান বলছিল, ‘‘আমি মানুষের সেবা করতে চাই৷ আমি মনে করি আমার জন্মই হয়েছে এ কারণে৷ সমাজে একটা অবস্থান তৈরি করার জন্য মেয়েরা অনেক কষ্ট করছে৷ এ কারণেই এখানে এত এত মেয়েকে দেখছেন৷''

মেয়েদের ডাক্তারি পড়ায় বেশি সুযোগ পাওয়ার আরেকটা কারণ ডাক্তারি পড়া শেষ করতে সময় লাগে বেশি৷ পরিবারের দায়িত্ব তাড়াতাড়ি নিতে হয় বলে অনেক ছেলে তাই এ পথ না মাড়িয়ে বেশি আয়ের সুযোগের হাতছানিতে চলে যায় তথ্য প্রযুক্তি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে৷ তো অনেকটাই যোগ্যতা আর বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ছেলেদের অনীহার কারণে স্বাধীন এবং উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ পেয়েও মেয়েরা কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনা৷ পরিবার, সমাজ এমন কি কর্মস্থলও দাঁড়িয়ে যায় তাঁদের বিপক্ষে৷ পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ২০১০ সালে৷ অনেক নারী ডাক্তারই চেয়েছিলেন দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে৷ অনেকেই সে সুযোগ পাননি৷ ডাও কলেজের যে ক'জন পেয়েছিলেন, তাঁদের আবার ছেলেদের মতো স্বাধীনতা দেয়া হয়নি৷ একটা বাসে তুলে কোনো এলাকায় নিয়ে যাওয়া হতো সকালে৷ রাত হবার আগেই ফিরতে হতো বাড়িতে৷ কত দূরে গিয়ে তাঁরা দুর্গতদের কতটুকু সেবা করতে পারতেন বুঝে নিন!

এসিবি/এসবি (এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য