1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার দায়ে একজনের ফাঁসির আদেশ

২৮ নভেম্বর ২০১০

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার দায়ে ৪৫ বছর বয়সি এক মহিলাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার খবরটা পুরোনো৷ তবে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে৷ আর দেশটির বিতর্কিত ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত আইনটি আবারো আলোচনায় উঠেছে৷

https://p.dw.com/p/QKGX
Family, members, Asia Bibi, a Pakistani, Christian, minority, women, court, blasphemy, পাকিস্তান, ধর্ম অবমাননা, আসিয়া বিবি
পরিবারের সদস্যদের সাথে আসিয়া বিবিছবি: picture alliance/dpa

নাম তার আসিয়া বিবি৷ তিনি একজন খ্রিষ্টান৷ বয়স ৪৫৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ধর্ম অবমাননা করেছেন তিনি৷ পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত এই আইনটি থাকবে, না এটি প্রত্যাহার করা হবে, নাকি এই আইনটি সংশোধন করা হবে, এই নিয়ে নীতি নির্ধারকদের মধ্যেও চলছে তুমুল উত্তপ্ত বিতর্ক৷

গত জুন মাসে আসিয়া বিবিকে গ্রেপ্তার করা হয়, আর তারপর থেকেই পাকিস্তানের ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত এই আইনটি নিয়ে মানুষের মুখে মুখে উত্তপ্ত আলোচনা৷ আসিয়া বিবি ইসলাম ধর্মের মহানবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন, তাঁর প্রতিবেশীরা এরকম অভিযোগ করার পরই গ্রেপ্তার করা হয় আসিয়া বিবিকে৷

ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা সম্পর্কিত আইনটিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, ইসলাম এবং নবী সম্পর্কে কোন খারাপ মন্তব্য করা হলেই তার শাস্তি অবধারিত মৃত্যু৷ যদিও এর আগেও বহু মানুষ ধর্ম অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন৷ তবে এপর্যন্ত কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি৷ যারা এর আগে অভিযুক্ত হয়েছেন, আপিল করার পরে তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে৷ তবে নবীকে অবমাননা করে চিঠি লেখার অভিযোগে চলতি বছরের জুলাই মাসে দুইজন খ্রিস্টান ব্রাদারকে ফয়সালাবাদে গুলি করে হত্যা করা হয়৷

জামাত ই ইসলামি মুসলিম আন্দোলনের ফরিদ আহমেদ প্রাচা ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত এই আইনটির ঘোর সমর্থক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে ভুয়া হত্যা মামলা হয়, তৈরী করা হয় ভুয়া সাক্ষী এবং একটি ভুল মামলা হওয়াও সম্ভব৷ আমরা শুধু বলতে চাই যে আইনটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে, এই আইনে কোন পরিবর্তন আনা উচিৎ হবে না, আমরা তা সহ্য করবো না এবং সমর্থনও করবো না৷কেউ যদি সামান্য পরিবর্তন করতে চায় তাহলে তাকে অনেকগুলো পরিবর্তন করতে হবে, আর কখনও এই মামলা করা যাবে না এবং এই মামলার অধীনে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না৷''

Supporters, All Pakistan Minority Alliance (APMA), slogans, release, Asia Bibi, Pakistani, Christian
আসিয়ার মুক্তির দাবিতে সর্ব পাকিস্তানি সংখ্যালঘু জোটের বিক্ষোভছবি: picture alliance/dpa

আসিয়া বিবিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের রায়, দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আবারো এক প্রশ্ন তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে৷ আসিয়া বিবি নিজেও প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ থাকায় তার প্রতিবেশীরা তার কথার ভুল উপস্থাপন করেছে৷ আসিয়া বিবি বলেন, মাঠে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করার সময়ে একই গামলা থেকে পানি খাওয়াকে কেন্দ্র করে কয়েকজনের সঙ্গে তার তিক্ততার সৃষ্টি হয়৷ আসিয়া বিবি বলেন, আমি মুসলমান নই বলে, তারা এক গামলা থেকে পানি খেতে অস্বীকার করে৷ পরে তাকে মারধোর করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন৷

পাকিস্তানের একাধিক রাজনীতিবিদও আসিয়া বিবিকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্যে প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন৷ পাঁচ সন্তানের জননী এই খ্রিস্টান মহিলাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্যে আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে৷ পোপ ষোড়স বেনেডিক্ট আসিয়া বিবির মুক্তির জন্যে আবেদন জানিয়েছেন৷

পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিষয়ক মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টিকে খোদ প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বিষয়টির তদন্ত করতে বলেছেন৷ তিনি বলেন, ঘটনাটি ছিল ব্যক্তিগত শত্রুতা৷ আসিয়া বিবি ধর্মের অবমাননাকর কিছু বলেননি৷ শাহবাজ ভাট্টি নিজেও একজন খ্রিস্টান৷ তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান এই বিতর্কিত ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত আইনটি প্রত্যাহার করবে না৷ যদিও এটি বিবেচনাধীন রয়েছে৷ আমরা বিবেচনা করছি, এই আইনটির অপব্যাবহার রোধে আইনটিতে যেন কিছুটা সংশোধন করা হয়৷''

পাকিস্তানের কট্টর মুসলিমরা অবশ্য আসিয়া বিবিকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিরোধিতা করছে৷ এই নিয়ে প্রায় ২৫০ জন কট্টর মুসলিম লাহোরে বিক্ষোভও প্রদর্শন করেছে৷ এছাড়া আসিয়া বিবির পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ প্রাণের ভয়ে তার পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপন করেছেন৷

এদিকে পাকিস্তানের একজন স্থানীয় খ্রিস্টান নেতা সিসাল চৌধুরী সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের ওপরে এই ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘বহু নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ এমন কি যাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি তারাও৷ কী ভাবে আপনি এটা বন্ধ করবেন? এসবের একমাত্র সমাধান, এই আইনটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে৷ বহু মানুষ কষ্ট ভোগ করছেন৷ অনেকে ১০ অথবা ১২ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন৷ এটা বলা ভুল যে,এই আইনের কারণে এখন পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে কেউ নিহত হননি৷ এখনতো ওরা ফাঁস দেয়ার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে৷ কিন্তু আসলে বহু আগে থেকেই এই আইনের ওজরে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷''

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক