1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানে নারীদের যৌন শিক্ষা

২ মার্চ ২০১৪

পাকিস্তানে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা এত বেড়ে গেছে যে বহির্বিশ্বে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ কিন্তু এই প্রথম দেশটির কয়েকটি গ্রামে নারীদের এমন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, যার ফলে তারা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতন হতে পারে৷

https://p.dw.com/p/1BHvV
Sexualkundeunterricht
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa

পাকিস্তানের একটি গ্রামের মেয়েদের স্কুলে পড়াচ্ছেন শিক্ষিকা৷ তাদের প্রশ্ন করলেন, কোনো অচেনা ব্যক্তি যদি তোমায় স্পর্শ করে, কী করবে তুমি? এক ছাত্রী বলল, আমি চিৎকার করব, অন্যজনের জবাব, কামড়ে দেব, আর একজন বলল, নখ দিয়ে আঁচড়ে দেব৷ আপনি অবাক হতেই পারেন, এটা কী ধরনের শিক্ষা!

হ্যাঁ এটাই যৌন শিক্ষা, যা দেয়া হচ্ছে পাকিস্তানের মেয়েদের স্কুলে৷ পশ্চিমা বিশ্বে যৌন শিক্ষা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার৷ কিন্তু রক্ষণশীল পাকিস্তানে এ ধরনের শিক্ষা আসলেই এক অভাবনীয় ব্যাপার৷

Symbolbild Ehrenmorde Gewalt gegen Frauen
এই শিক্ষায় মেয়েদের বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কেও জানানো হয় (প্রতীকী ছবি)ছবি: picture-alliance/dpa

প্রকাশ্যে আলোচনার উপর নিষেধাজ্ঞা

পাকিস্তানে প্রকাশ্যে যৌন শিক্ষা বা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার উপরই একধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ এমনকি কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তাকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেয়া হতে পারে৷ কোনো কোনো স্থানে একটি মেয়ে প্রকাশ্যে কোন বিয়েতে নাচলে বা জানালা দিয়ে তাকালে তার গর্দান কাটা হয়, অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয় বা অন্য কোনো কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়৷

অভিভাবকদের সমর্থন

দারিদ্র্য পীড়িত সিন্ধু প্রদেশে অবশ্য চিত্রটা ভিন্ন৷ সেখানকার গ্রাম জোহি-র শিক্ষকরা জানালেন, পরিবারের সদস্যরা নারীদের যৌন শিক্ষার বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই সমর্থন করছেন৷ ‘গ্রাম শাদাবাদ সংগঠন' স্থানীয় ৮টি স্কুলের অন্তত ৭০০ ছাত্রীকে এই শিক্ষার আওতায় এনেছে৷

কী ধরনের শিক্ষা?

আট বছর বয়স থেকে ছাত্রীদের এই শিক্ষা দেয়া হচ্ছে৷ জানানো হচ্ছে, কখন তাদের শরীরে কী কী ধরনের পরিবর্তন হয়, কোন ধরনের স্পর্শ খারাপ এবং কীভাবে তারা তা প্রতিরোধ করবে৷ নারীদের অধিকার সম্পর্কেও শিক্ষা দেয়া হচ্ছে৷

সংগঠনের প্রধান আকবর লাসারি জানালেন, ‘‘আমরা জানি এই বিষয়টি নিয়ে কোনো মানুষ কথা বলতে চায় না৷ কিন্তু এটাও তো তারা অস্বীকার করতে পারে না যে এটা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷'' তিনি জানালেন, এ সব গ্রামের বেশির ভাগ মেয়েই জানে না ‘রজস্রাব' কী, কখন হয়, হলে কী কী করতে হবে, এমনটি যখন তাদের বিয়ে হয় তখনও তাদের অনেকেই শারীরিক যৌন সম্পর্ক বিষয়টি জানা থাকে না৷

এই শিক্ষায় মেয়েদের বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কেও জানানো হয়৷ পাকিস্তানে স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে সঙ্গমে বাধ্য করাটা অপরাধের মধ্যে পড়ে না৷ লাসিরি জানালেন, তারা শিক্ষা দেন যে তাদের ইচ্ছা না থাকলে স্বামী তাদের সঙ্গমে বাধ্য করতে পারে না৷

স্বাভাবিক শিক্ষার মধ্যেই প্রতিটি শ্রেণিতে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ লাসিরি জানালেন, এখন পর্যন্ত কোন অভিভাবক এ শিক্ষার বিপক্ষে মত দেননি৷ সবাইকে জানিয়েই এটি শুরু করা হয়েছে এবং সবাই এতে সমর্থন দিয়েছেন৷ শুনলে অবাক হতে হয়, একটি অস্ট্রেলীয় কোম্পানি এটিতে অর্থ সহায়তা করলেও পরিকল্পনাটা গ্রামবাসীদের৷

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

১০ বছর বয়সি শিক্ষার্থী উজমা পানওয়ার জানালো, ‘আমার শরীর কেবল আমার এবং এতে আমার অধিকার সম্পূর্ণ৷ কেউ যদি আমার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে আমি তাকে কামড়ে দিব বা থাপ্পড় দিব৷'

১৬ বছরের সাজিদা বেলুচ জানাল, ‘আমাদের শিক্ষকরা জানান, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কী কী ধরনের সম্পর্ক হয়৷ তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান৷ এখন আমরা জানি, আমাদের কী করা উচিত আর কী উচিত নয়৷'

Symbolbild Gewalt gegen Frauen
পাকিস্তানে স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে সঙ্গমে বাধ্য করাটা অপরাধের মধ্যে পড়ে না (প্রতীকী ছবি)ছবি: Fotolia/Miriam Dörr

সরকারি সমর্থন

এটা ঠিক যে পাকিস্তানের প্রত্যেকেই এ বিষয়টিকে সমর্থন করছে না৷ কেননা পাকিস্তানে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যৌন সম্পর্ক খুব বিরল ব্যাপার৷ এ কারণে সম্প্রতি লাহোরের গ্রামার স্কুলে যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচি থেকে বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷

অল পাকিস্তান প্রাইভেট স্কুলস ফেডারেশন এর সভাপতি মির্জা কাসিফ আলী জানালেন, ‘‘যৌন শিক্ষা আমাদের সংবিধান এবং ধর্মের পরিপন্থি৷'' এই ফেডারেশন কর্তৃক পরিচালিত ১ লাখ ৫২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাকিস্তানে৷ কাসিফ-এর বক্তব্য হল – যে বিষয়টির সাথে তারা এই বয়সে যুক্ত হচ্ছে না, সেটির বিষয়ে শিক্ষার প্রয়োজনটা কী?

অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে বেশিরভাগ সরকারি স্কুলের পাঠ্যসূচিতে যৌন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ কিন্তু পাকিস্তানের সরকারি স্কুল গুলোতে এমন কোনো পরিকল্পনা নেই৷

তবে পাকিস্তানের উলেমা কাউন্সিলের প্রধান তাহির আশরাফি এই শিক্ষাকে সমর্থন করেন৷ তিনি জানালেন, সব শিক্ষক যদি নারী হয়, শরিয়া মেনে নারীদের শিক্ষা দেয় তবে এটা সমর্থন না করার কিছু নেই৷

এপিবি/এসবি (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য