1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বুনিয়াদি বাকস্বাধীনতা

গ্রেহেম লুকাস/এসি৯ জানুয়ারি ২০১৫

শার্লি এব্দো হত্যাকাণ্ড আবার প্রমাণ করে যে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে পশ্চিমি দুনিয়া এবং ইসলামি বিশ্বের একাংশের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা৷ গ্রেহেম লুকাস-এর সংবাদভাষ্য৷

https://p.dw.com/p/1EHwh
Gedenken Anschlag Paris Charlie Hebdo Rue Nicola Appert t
ছবি: DW/Bernd Riegert

বাকস্বাধীনতা এমন একটি অধিকার, যা পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্তরে প্রোথিত৷ ইউরোপের স্কুল-কলেজে শেখানো হয়, সাহসী নারী-পুরুষেরা কী ভাবে শত শত বছর ধরে স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আমাদের এই বাকস্বাধীনতা এবং অপরাপর নাগরিক অধিকার এনে দিয়েছেন৷ এই সব অধিকার আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ভিত্তি, যা আমাদের যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে৷

ইউরোপে বাকস্বাধীনতা এতোটা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এর ফলে সংবাদমাধ্যমগুলি সরকারের কার্যকলাপের উপর নজর রাখার এবং প্রয়োজনে তা চ্যালেঞ্জ করার অধিকার পায়৷ পশ্চিমে মিডিয়ার এই ‘ওয়াচডগ' বা ‘গণতন্ত্রের প্রহরী' ভূমিকার সেরা দৃষ্টান্ত হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তথাকথিত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি, যার কারণে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন-কে পদত্যাগ করতে হয়৷ সেটা ১৯৭৪ সালের ঘটনা৷ ১৯৬২ সালে জার্মানিতেও একটি অনুরূপ ঘটনা ঘটে: তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্রানৎস ইয়োসেফ স্ট্রাউস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, কেননা তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর নীতি ও কর্মপন্থার প্রতি সমালোচনা-প্রবণ একটি পত্রিকাকে বন্ধ করে দেন এবং পরে সে বিষয়ে মিথ্যাভাষণ করেন৷

Bildergalerie Lateinamerikanische Karrikaturen zum Anschlag auf Charlie Hebdo
দক্ষিণ অ্যামেরিকা থেকে শার্লি এব্দোর স্মরণে ব্যঙ্গচিত্রছবি: MalaImagen

ব্যক্তি পর্যায়েও বাকস্বাধীনতা সমপরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ, নয়তো কোনো সাধারণ নাগরিকের পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা সম্ভব হতো না৷ রাজনৈতিক মতপ্রকাশ অথবা ধর্মমত প্রচারও সম্ভব হতো না৷ মানবাধিকার সংক্রান্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হল এই বাকস্বাধীনতা৷ কাজেই সঙ্গত কারণেই বাকস্বাধীনতাকে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর বলা হয়৷

ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের ১৯৭৬ সালের একটি রায়ে বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে: বাকস্বাধীনতা হল ‘‘একটি (গণতান্ত্রিক) সমাজের অত্যাবশ্যক ভিত্তি, সমাজের প্রগতি এবং ব্যক্তির বিকাশের একটি বুনিয়াদি শর্ত৷ (...) যে সব ‘তথ্য' বা ‘ধ্যানধারণা' অনুমোদিত কিংবা অবমাননাকর নয় বলে গণ্য, অথবা মামুলি, শুধু তাদের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য নয়, বরং যে সব তথ্য রাষ্ট্র তথা জনসাধারণের কোনো অংশের কাছে অপ্রিয় বা অপমানজনক বলে মনে হতে পারে, তাদের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য৷ বহুত্ববাদ, সহিষ্ণুতা এবং উদারতার দাবিই হল তাই, যা ছাড়া কোনো ‘গণতান্ত্রিক সমাজ' চলতে পারে না৷''

ধর্মের সমালোচনা এবং ধর্মমতের ব্যঙ্গাত্মক চিত্রায়নও এর মধ্যে পড়বে৷ এক্ষেত্রে খ্রিষ্টান ধর্ম বহুকাল ধরে ব্যঙ্গচিত্রীদের উপহাসের লক্ষ্য৷ খ্রিষ্টানরা তাতে ক্ষুব্ধ হলেও, তাদের কিছু করার উপায় নেই, কেননা সমালোচনা ও ব্যঙ্গ প্রকাশ্য আলাপ-আলোচনার অঙ্গ৷

Frankreich Anschlag auf Charlie Hebdo Karikatur
সান ফ্রান্সিস্কো’য় শর্লি এব্দোর স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলিছবি: Reuters/S. Lam

এই ধরনের রায় ও মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমি দুনিয়া এবং ইসলামি বিশ্বের কিছু কিছু অংশের মধ্যে আগেও বিরোধ দেখা দিয়েছে৷ ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদি-র ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস'' বইটিকে কেন্দ্র করে ইরানের আয়াতোল্লাহ খোমেনি রুশদি-র উপর ফতোয়া জারি করেছিলেন, যে কারণে রুশদি-কে বহুদিন পুলিশি নিরাপত্তায় থাকতে হয়েছিল৷ ২০০৬ সালে ডেনমার্কের একটি পত্রিকায় হজরত মহম্মদের ব্যঙ্গচিত্র ছাপা নিয়ে হত্যার হুমকি থেকে বাস্তবিক হত্যার প্রচেষ্টা, সব কিছু ঘটে গেছে৷ এবার ঘটল ব্যঙ্গপত্রিকা শার্লি এব্দো-র অফিসে হত্যাকাণ্ড৷

কিন্তু এই সংঘাতের সমাধান ঘটা সম্ভব, বলে আমার পূর্বাপর বিশ্বাস৷ এই প্রসঙ্গে আমরা মিশরের প্রেসিডেন্ট আস-সিসি যা বলেছেন তা স্মরণ করতে পারি: আস-সিসি ইসলামধর্মে একটি ইতিবাচক বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, এবং মুসলিম নেতাদের উগ্র মতবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছিলেন৷

সবশেষে আমরা জার্মানির মুসলিম পরিষদের এক প্রতিনিধির বক্তব্য তুলে ধরতে পারি৷ তিনি লিখেছেন: এই ‘‘পাশবিক কার্য'' ইসলাম এবং মহানবীকে ব্যঙ্গ ও অপমান করেছে; ‘‘এই আক্রমণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুগপৎ ইসলামের মূল্যবোধের উপর আক্রমণ৷'' এর পর আর কিছু বলার থাকে না৷

আমি অপরের ধর্মবিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করি বটে, কিন্তু বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সার্বভৌম হয়ে থাকবে৷ জ্য-সুই-শার্লি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য