1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচন আছে, আমেজ নেই

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৯ ডিসেম্বর ২০১৩

আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন৷ মাত্র ১৬ দিন আগে যেখানে সারাদেশ উৎসবমুখর থাকার কথা, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা আর জনসংযোগে যেখানে প্রার্থীদের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার কথা, সেখানে অধিকাংশ প্রার্থী যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/1AcZ2
Blockade Leiden Bangladesch
১৬দিন পর নির্বাচন, সারাদেশ উৎসবমুখর থাকার কথা কিন্তু তেমনটা নেইছবি: DW/Mustafiz Mamun

বিরোধী দল নির্বাচনে না থাকায় আসন ভাগাভাগি করে ইতিমধ্যেই ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ ফলে ৩০০ আসনের ১৪৬টিতে এখন নির্বাচন হবে৷ কিন্তু সেসব আসনেও নেই আওয়ামী লীগের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী৷

তাই একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই৷ ধানমন্ডির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলি হোসেনের কাছে জানতে চাই, তিনি ভোট দেবেন কিনা৷ এক গাল হেসে বললেন, ‘‘ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সুযোগ নেই৷'' কারণ এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ আর এই এলাকার আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন নেতা আব্দুস সোবহান এখন যেন বেকার সময় কাটাচ্ছেন৷ কয়েকদিন আগেও নির্বাচনের তোড়জোড় নিয়ে বেজায় ব্যস্ত ছিলেন৷ এখন সময় কাটান চায়ের দোকানে আড্ডা আর বিরোধী দলের আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি হতাশার সুরে বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস করে যাওয়ায় নেতাকে এখন আর তেমন পাওয়া যায় না৷ আশা করেছিলেন নির্বাচনে কর্মীদের নিয়ে বেশ খরচ করবেন৷ সে আশায়ও গুড়ে বালি৷

ঢাকা মহানগরীর অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ বাকি আসনে প্রচার প্রচারণা নেই৷ দেয়ালে শুধু পোস্টার দেখা যায়৷

খুলনারও একই অবস্থা৷ সেখানেও প্রায় অর্ধেক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছেন৷ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি রকিব উদ্দিন পান্নু ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সাংবাদিকরা খবর দিলে প্রার্থীরা কাভারেজের জন্য জনসংযোগের আয়োজন করেন৷ এমনিতে জনসংযোগ নেই৷'' তিনি কয়েকজন প্রার্থীকে রীতিমত অনুরোধ করে জনসংযোগের ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন৷ সাংবাদিক পান্নু জানান যেসব আসনে এখানো নির্বাচন হবে সেগুলোরও সমঝোতা হয়ে গেছে৷ ‘‘মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রার্থী নেই৷ তাই তারা বলতে গেলে নিশ্চিন্তে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন৷ অযথা জনসংযোগ আর পয়সা খরচ করতে চানান না তারা৷ নেতারা তাই ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পার করার অপেক্ষায় আছেন৷''

চট্টগ্রামের চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়৷ সাংবাদিক নাসির উদ্দিন তোতা ডয়চে ভেলেকে বলেন, যেসব আসনে নির্বাচন হবে সেখানে কিছু পোস্টার ছাড়া কোনো নির্বাচনি তৎপরতা দেখা যায় না৷ কারণ সেসব আসনে প্রার্থী একাধিক থাকলেও সমঝোতা হয়ে গেছে৷

ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়৷ দু'একটি আসন যেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছে অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শক্তিশালী, সেখানে নির্বাচনি প্রচাররণা চলছে পুরোদমে৷ নির্বাচনি উৎসবের আমেজও পাওয়া যাচ্ছে পুরো মাত্রায়৷ যেমন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার হোসেন৷ তাঁর বিপরীতে আছেন সাবেক বিএনপি নেতা এবং সাবেক সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলি ফরাজি৷ তাই দু'জনের মধ্যে নির্বাচনি লড়াই জমে উঠেছে বলে জানান সেখানকার সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজু৷ ঐ আসনে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা উৎসবের আমেজ নিয়ে এসেছে৷

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে জানান, দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ লাখ৷ ১৫৪ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এবার ৫ কোটির মতো ভোটার ভোট দিতে পারবে না, মানে তাদের ভোট দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না৷ তিনি জানান এরই মধ্যে হিসাব করে দেখা গেছে ৫টি জেলায় কোনো নির্বাচন হবে না৷ ১৫টি জেলায় একটি করে আসনে নির্বাচন হবে৷ ৩৪ টি জেলায় নির্বাচন হবে আংশিক৷ মাত্র ১০টি জেলার সব আসনে নির্বাচন হবে৷ বাংলাদেশে নির্বাচনের এই চিত্র আগে কখনো দেখা যায়নি৷

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যে নির্বাচনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা নাই সেই নির্বাচনে উৎসবের আমেজ আসবে কীভাবে৷ নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দলও নেই৷ তাই একতরফা নির্বাচনে সরকার ছাড়া আর কারোর আগ্রহ দেখা যায় না৷ সাধারণ মানুষ এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না৷ তিনি বলেন সরকার এই নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে না, ক্ষমতায় টিকে থাকবে৷

আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের একজন এমপি ইস্রাফিল আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হওয়াই সবচেয়ে বেশি সম্মানের৷ কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকলে কিইবা করার আছে৷