1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনী ইশতেহারে কথার ফুলঝুরি

সাগর সরওয়ার৯ ডিসেম্বর ২০০৮

বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন জনগণের কাছে দেয়া তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই বাস্তবায়ন করেনি৷ যদিও এই প্রধান দুই দলের দাবি, তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছেন৷

https://p.dw.com/p/GCZI
ঘনিয়ে আসছে বাংলাদেশের নির্বাচনছবি: AP

কিন্তু সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করেন দুই দলের এই দাবি প্রশ্নবিদ্ধ৷

নির্বাচনী ইশতেহার হচ্ছে কোন একটি রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্র পরিচালনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা, নিজ দলের আদর্শিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা ও ভোটারদের তথা জনগণের প্রতি তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার৷ বাংলাদেশে সাধারণত প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলো প্রথাগতভাবে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে৷ এবারো শুরু হয়েছে এই ইশতেহার প্রকাশ করা৷ ইশতেহারগুলোতে অনেক ভালো কথা থাকে, থাকে অনেক প্রতিশ্রুতি৷

আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে, যার মধ্যে স্বচ্ছ, দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা; সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চয়তার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা; এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট ও অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা প্রতিহত করতে দুর্নীতি উচ্ছেদ কার্যক্রমের প্রতি অগ্রাধিকার প্রদান ছিল অন্যতম৷ এ ছাড়া সরকারি প্রচারমাধ্যমকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে স্বায়ত্তশাসন প্রদান, বিচার বিভাগকে পৃথক করে স্বাধীনতা দেয়া, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কায়েম, নারী ও শিশুর সার্বিক উন্নয়ন, বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনসহ দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি ছিল ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার৷

বিএনপির প্রতিশ্রুতি

২০০১ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ৩২টি বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করে৷ এতে বলা হয় যে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের প্রথম কাজ হবে দলমত-নির্বিশেষে সবার সমর্থন ও সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে জনগণের জান-মাল নিশ্চিত করা এবং দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা৷ সেই লক্ষ্যে সরকারের কাজ হবে যেকোনো মূল্যে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং হত্যা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস দমন করে দেশকে সর্বসাধারণের জন্য বাসযোগ্য করে তোলা৷ এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে যথার্থই প্রশিক্ষিত, যোগ্য, শক্তিশালী ও কার্যকর করা৷ প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জনগণকে শুধু শাসন করার জন্য নয়, সেবা করার কাজে লাগানো৷ এই ছিল বিএনপি-র বিভিন্ন নির্বাচনী অঙ্গীকার৷

যা থাকতে পারে ইশতেহারে

নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাওয়া উচিত বলে সচেতন নাগরিকরা মনে করেন সেগুলো হলো: দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন রোধ; কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা; কার্যকর সংসদ নিশ্চিতকরণ; কার্যকর প্রশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা; বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা; দারিদ্র্য দূরীকরণ; অর্থনৈতিক সুশাসন ও ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করা; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সমস্যা দূরীকরণ; নিরক্ষরতাবিরোধী আন্দোলন সৃষ্টি করা; জ্বালানির সংস্থান; নারী ও বঞ্চিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা; প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জাতীয় সম্পদের সংরক্ষণ; খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ; উগ্রবাদের বিস্তার রোধ ইত্যাদি৷

ক্ষমতায় যাওয়া বা বিরোধী দলে থাকা

সচেতন নাগরিকদের মতে, তারা আশা করছেন এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যে প্রতিশ্রুতিই দেয়া হোক না কেন তা যেন সরকারে গেলে বা বিরোধী দলে থাকলেও নিজ নিজ অবস৷তান থেকে পুরোপুরি বাস্তবায়িত করা হয়৷ রক্ষা করা হয় জনগণের কাছে দেয়া অঙ্গীকার৷