1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যক্তিগত উদ্যোগের সুফল

২৬ জুলাই ২০১৩

সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে নিজের পরিবার ও গোটা গ্রামের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে যে উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব, তার প্রমাণ দিয়েছেন আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার এক ব্যক্তি৷ মিলছে সরকারি সহায়তাও৷

https://p.dw.com/p/19Dj1
Global Ideas
ছবি: DW/Julia Henrichmann

রুয়ান্ডার নাশো গ্রামের মানুষজনের কাছে আনাস্তাসে তাবারো একজন হিরো৷ তিনি গ্রামে বিদ্যুৎ এনেছেন৷ তিন মাস আগে এই মানুষটি নিজের গ্রামে একটি ছোট্ট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করেন৷ সে যাবৎ আনাস্তাসে এই প্রথমবার গাঁয়ে ফিরেছেন৷ ৬০ বছরের মানুষটি দাঁড়িয়ে দেখছেন, সব ঠিকমতো কাজ করছে কিনা৷ উজানেই কাজ শুরু হয়েছিল৷ তিনি বললেন, ‘‘আমার স্ত্রী প্রথমে ভেবেছিলেন, আমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছি৷ প্রতিবেশিরা তাকে বিবাহবিচ্ছেদের পরামর্শও দিয়েছিল৷ পরে ও দেখতে পেয়েছে, জলবিদ্যুৎ থেকে ভালো রোজগার করা যায়৷ প্রতিবেশীরাও হঠাৎ এসে বিদ্যুৎ চাইতে শুরু করে৷''

কীভাবে জেনারেটরটা তৈরি হল, পানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলো, সে এক আশ্চর্য কাহিনি৷ সবই আনাস্তাসের নিজের হাতে করা৷ সবকিছু নিজেই শিখে নিয়েছেন৷ গাঁয়ে বিদ্যুৎ ছিল না৷ আনাস্তাসে তাঁর নয় সন্তানের জন্য বাসায় বিদ্যুতের আলো আনতে চেয়েছিলেন৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা ছিলাম গরীব৷ পয়সা রোজগার করতে চেয়েছিলাম, আর গাঁয়ের জন্য অবেশেষে বিদ্যুৎ আনতে চেয়েছিলাম৷ আমাদের কিছুই তো ছিলো না! তাই আমরা ডিজেল জেনারেটর আর পেট্রোল ব্যবহার করতাম৷ আমি ভাবলাম, পানির শক্তি ব্যবহার করলে কেমন হয়? তাতে আমাদের জীবন হয়তো কিছুটা সহজ হতে পারে৷''

নাশো গ্রামের দুশো পরিবার এখন বিদ্যুতের আলো পায়৷ পরিবারগুলি আনাস্তাসে-কে সে জন্য টাকা দেয়৷ এই প্রত্যন্ত প্রদেশে এর আগে বিদ্যুতের কনেকশান পর্যন্ত ছিল না৷ জীবিকার উৎস ছিল চাষবাস আর জঙ্গলের সম্পদ৷

এ ধরনের ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলির সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে৷ তাই রুয়ান্ডার পরিবেশ কর্তৃপক্ষ সাহায্য করে থাকেন৷ ইভ তুইশিমে গাঁয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরিতে আনাস্তাসে-কে সাহায্য করতে এসেছেন৷ রুয়ান্ডা সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে চায়৷ তিনি বললেন, ‘‘পানির শক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করলে পরিবেশ সুরক্ষার কাজ হয়৷ কাঠ, কয়লা বা খনিজ তেলের উপর নির্ভরতা কমে৷ কাজেই আমরা এ ধরনের প্রকল্পে সাহায্য করে থাকি৷ কার্বন নির্গমন নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আনাস্তাসের পরিকল্পনাটা অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা, সেটাই দেখতে এসেছি৷ তাহলে তা থেকেই এর খরচ মেটানো যাবে৷''

আগে এখানে একটা দোকান পর্যন্ত ছিল না৷ আজ এরিক মুঞ্জানেজা-র মতো তরুণরা গাঁয়েই থাকে, এখানেই জীবিকা চালায়৷ বিশ বছরের এরিক একটা চুল কাটার সেলুন চালায়৷ তিনি বললেন, ‘‘আগে ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার করতাম৷ তার খরচ বেশি৷ আছে ধোঁয়া, দুর্গন্ধ৷ পানির শক্তি তার চেয়ে অনেক ভালো৷ আমি তো আরো লোক রেখেছি, যাতে সব খদ্দেরের চুল কাটা হয়৷ সেলুনের সামনে কখনো-সখনো লাইন পড়ে যায়৷''

আনাস্তাসে তাবারো আজ নাশো গ্রাম ছেড়ে বাড়ি ফিরবেন – সে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে৷ রুয়ান্ডার জন্য তাঁর একটা স্বপ্ন আছে৷ তিনি বললেন, ‘‘আমার বয়স হয়েছে৷ পরের প্রজন্মকে দেখাতে চাই, কীভাবে এমন ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করতে হয়৷ আমি চাই, তারা আমার স্বপ্নকে সার্থক করবে, গোটা রুয়ান্ডা পানির শক্তি ব্যবহার করতে শিখবে৷''

বাসামুখো যাত্রা শুরু করার আগে আনাস্তাসে আরো একবার তাঁর প্লান্ট-টিকে দেখে নিলেন, একটা ছবিও তোলা হল৷ এবার তিনি ভিনগাঁয়ে গিয়ে দেখাবেন, তাঁর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প কীভাবে কাজ করে৷

এসি / এসবি