1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাইজেরীয় পতিতা জার্মানির রাস্তায়

১১ ডিসেম্বর ২০১০

ইদানিং জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরে নাইজেরিয়ার তরুণীদের দেখা যাচ্ছে৷ পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য তাদের জার্মানিতে পাচার করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/QVqz
জার্মানি, নাইজেরিয়া, তরুণী, পতিতাবৃত্তি, পাচার, ভুডু, যৌন কর্মী, যৌন ব্যবসা, বিদেশি, Germany, Nigeria, Sex work, Prostitute, Prostitution
নাইজেরিয়ার তরুণীছবি: Alamode Film

ইউরোপের পতিতালয়ে বিদেশি মেয়েদের পাচার করে আনা হচ্ছে – এ রকমের ঘটনা নতুন নয়৷ পূর্ব ইউরোপের মেয়েদের পতিতা হিসেবে রাস্তায় দেখা যায় সবচেয়ে বেশি৷

নাইজেরিয়ার মেয়ে রিথা একওয়াজা জানাল, ‘‘সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এসব অভিজ্ঞতার কথা বলা যায় না৷ এত সহজ নয়৷ প্রথমে আমাদের বলা হয়েছিল সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে৷ বেশ ভালমত আমাদের দিন কাটবে৷ কিন্তু সব ছিল মিথ্যে৷ প্রথম দিন থেকেই আমরা তা টের পাই৷ আমাদের দিয়ে যা করানো হয়েছে তা বলে বোঝানোর মত নয়৷ আমরা গরিব, ঠিক মত খেতে পেতাম না – সেই সুযোগ নিয়েছিল এরা৷''

আফ্রিকার নানা দেশে এক ধরণের সম্মোহনী যাদুবিদ্যা প্রচলিত - যার নাম ‘ভুডু'৷ রিথা একওয়েজা সেই ‘ভুডু'-র শিকার৷ ২০০৭ সালে তাকে পাচার করে জার্মানিতে আনা হয়৷ সে অবৈধ পতিতা হিসেবে কাজ শুরু করে৷ ফ্রাঙ্কফুর্টের একটি আদালতে রিথা জানায় – কে তাকে জার্মানিতে নিয়ে এসেছে, কাদের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ কাঁদতে, কাঁদতে রিথা বলেছিল তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা৷

জার্মানিতে পাচার হওয়া মেয়ের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে গেছে৷ বিশেষ করে আফ্রিকার মেয়েদের রাস্তার কোনায় কোনায় দেখা যাচ্ছে বেশি৷ পাঁচ বছর আগেও যা সহজে চোখে পড়তো না৷ এদের সবাইকে পাচার করে জার্মানিতে আনা হয়েছে এবং জোর করে পতিতালয়ে কাজ করানো হচ্ছে৷ জার্মানির পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রায় ৬০০ বিভিন্ন পতিতালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৭০ জন নাইজেরিয় মহিলাকে উদ্ধার করে৷ এরা সবাই অবৈধভাবে পতিতা হিসেবে কাজ করছে৷ এদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনকে মিথ্যে কথা বলে পাচার করে আনা হয়েছে জার্মানিতে৷

জার্মানি, নাইজেরিয়া, তরুণী, পতিতাবৃত্তি, পাচার, ভুডু, যৌন কর্মী, যৌন ব্যবসা, বিদেশি, Germany, Nigeria, Sex work, Prostitute, Prostitution
হাইতির ‘ভুডু’ উৎসবছবি: AP

মূল আস্তানা ফ্রাঙ্কফুর্ট

ফ্রাঙ্কফুর্টের সেন্ট্রাল স্টেশন৷ এ শহরের বেশিরভাগ পতিতালয়গুলো স্টেশনেরই আশপাশে৷ এখানে পুলিশ অফিসার মার্কুস স্টাইনারের গাড়ি সারাক্ষণই টহল দিচ্ছে৷ একটি লাল বাড়ির সামনে গাড়িটি এসে থামলো৷ দুটি নগ্ন মহিলার ছবি বড় করে আঁকা বাড়ির দেয়ালে৷ সামনে পার্কিং প্লেসে অনেক দামি গাড়ি পার্ক করা রয়েছে৷ বেশ কিছু ভদ্রলোক একের পর এক বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজ নিজ গাড়িতে উঠছে৷ কেউ কেউ বাড়িতে ঢুকছে৷ প্রায় ১৪০ জন পতিতা এই বাড়িতে থাকে, কাজ করে৷ স্টেশনের কাছে অনেকগুলো পতিতালয়৷ সবমিলে প্রায় ৫০০ পতিতা কাজ করে এখানে৷ কথাগুলো জানান পুলিশ অফিসার স্টাইনার৷ বাড়ির পেছনে বেশ কিছু লোক বসে গল্প করছে৷ কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এরা আগ্রহী নয়৷ বাড়ির দরজার কাছে একটি একটি লোক উচ্চস্বরে ঝগড়া করছে একটি মহিলার সঙ্গে৷ পরিবেশটা এরকমই৷

অফিসার স্টাইনার বললেন, ‘‘এখানেই বেশির ভাগ মেয়ে কাজ করে৷ নাইজেরিয়া থেকে মেয়েদের এনে এখানেই তোলা হয়৷ সবই গ্রামের মেয়ে৷ এরা জার্মান জানে না৷ এখানকার সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সম্পর্কে এদের কোন ধারণা নেই৷ যে পরিবেশ থেকে এরা এসেছে সেই পরিবেশে গলা উঁচু করে কথা বলতে, ঝগড়া করতে এরা অভ্যস্ত৷''

পতিতালয়ের পাশেই একটি বার৷ একটি লোক বারে বসে আছে৷ সে মহিলার কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করেছে৷ বাড়িটি তাঁর৷ পুলিশ বেশ কিছু পতিতালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে৷ তবে কোন অবৈধ পতিতাকে তাঁরা খুঁজে বের করতে পারেনি৷ আজ যাদের পাওয়া গেছে তারা সবাই পূর্ব ইউরোপের৷ স্টাইনার আরো জানান, ‘‘আমার মনে হয় কোন আফ্রিকান বা নাইজেরিয় যৌন কর্মীকে খুঁজে পাবো না৷ তবে ফ্রাঙ্কফুর্টে কোন নাইজেরিয় মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর মানে এই নয় যে এরা নেই৷ এদের হয়তো অন্য শহরে পাচার করা হয়েছে৷ হামবুর্গ, হানোফার, স্টুটগার্ট, মিউনিখ অথবা অন্য কোন শহরে৷''

নারী এবং শিশু পাচার বন্ধ করতে জাতিসংঘের প্রটোকল যে সব দেশ সই করেছে নাইজেরিয়া তাদের অন্যতম৷ কিন্তু তারপরেও ১৫ বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে ৪৫ বছরের মহিলাদের অবৈধভাবে নাইজেরিয়া থেকে জার্মানিতে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাচার করা হচ্ছে৷

ভুডুর কবলে মেয়েরা

নাইজেরিয়ায় যারা এসব পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত তারা স্থানীয় যাদুবিদ্যা ‘ভুডু'-র আশ্রয় নিয়ে এই কুকর্মগুলো করে যাচ্ছে৷ কীভাবে ‘ভুডু' সাহায্য করে? ইন্সপেক্টর স্টাইনার জানান, যেসব মেয়েদের তারা আটক করেছে তাদের কাছ থেকেই জেনেছেন তিনি৷ ইন্সপেক্টর স্টাইনার বললেন, ‘‘প্রথম যখন একটি মহিলাকে ফ্রাঙ্কফুর্টে আটক করা হয় তখন তিনি জানান, অত্যন্ত সৌভাগ্যবতীদের তিনি একজন৷ কারণ তিনি জার্মানিতে এসে পৌঁছেছেন৷ অর্থাৎ ‘ভুডু' সুফল এনে দিয়েছে৷ অনেক বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি করানো গেছে৷ আমরা এখন অনেক কিছু জানতে পারবো, মহিলাকে সাহায্য করতে পারবো৷ আমরা এটুকু পরিষ্কার বুঝেছি কোন অবস্থাতেই মহিলাটি নাইজেরিয়ায় ফিরে যেতে পারবে না৷''

পুলিশ কর্তৃপক্ষ খুব ভাল করেই জানে নাইজেরিয়ায় ফিরে গেলে এসব মহিলার পরিণতি কী হবে৷ সে কারণে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ আশ্রয়প্রার্থী হয়ে এসব মেয়ে জার্মানিতে থাকার সুযোগ পাচ্ছে৷ কিন্তু তারপরেও এসব মেয়ে সব কিছু খুলে বলতে ভয় পায়৷ কারণ ‘ভুডু'র মাধ্যমে তারা প্রতিজ্ঞা করেছে কোন অবস্থাতেই তারা মুখ খুলবে না৷ তারা ‘ভুডু' গুরুর কথা মত কাজ করবে৷

একই ভয়ে আতঙ্কিত ছিল রিথা একওয়েজা৷ রিথা এখন করছে একটি বিউটি পার্লারে৷ তাকে বলা হয়েছিল ইউরোপ পর্যন্ত তাকে আনতে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার ইউরো৷ যেভাবেই হোক এই অর্থ তাকে ফেরত দিতে হবে৷ তবে রিথা এখন জেনে গেছে যে, এসব তথ্য ঠিক নয়৷ রিথার আর কোন ভয় নেই৷ অশুভ ‘ভুডু'র প্রভাব থেকে তাকে মুক্ত করা গেছে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান