1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাবা হত্যার বিচার চায় কন্যা

আন্দ্রেয়া গ্রুনাও / এসি২ এপ্রিল ২০১৩

নব্য-নাৎসিদের তথাকথিত ‘সুইকাউয়ার সেল’এর হাতে যেসব বিদেশি-বহিরাগত প্রাণ হারান, তাদের মধ্যে ছিলেন জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত তুর্কি কুর্দ মেহমেত কুবাসিক৷ তাঁর কন্যা বিচার প্রক্রিয়ার আগে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/1887N
ছবি: DW/A. Grunau

‘‘এই মাটি করেছে৷ এবার মেয়েটাও সব কিছু জানতে পারবে৷'' ঠিক এই কথাগুলোই শুনেছিলেন গামজে কুবাসিক ২০০৬ সালের চৌঠা এপ্রিল দুপুর নাগাদ বাবার ছোট্ট দোকানে যাবার সময়৷ বাবার বদলে মেয়ের কিছুক্ষণ দোকান সামলানোর কথা৷ গিয়ে দেখেন, দোকানের সামনে অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি৷ ডর্টমুন্ড শহরের উত্তরাঞ্চলে মালিংকরড স্ট্রিটের চার লেনের রাস্তা৷ সেখানেই গামজে'র বাবার দোকান৷ পুলিশ গামজে'কে দোকানে ঢুকতে দিতে চায়নি৷

সেই মঙ্গলবার সকালে ২০ বছর বয়সি গামজে বাবার ঘুম ভাঙিয়ে বলেছিলেন, রামজে তাঁর ছোট ভাই মার্ট'কে কিন্ডারগার্টেনে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন৷ বাবা আরো খানিকক্ষণ ঘুমাতে পারেন৷ বাবা ঘুমভাঙা গলায় বলেছিলেন: ঠিক আছে৷ বাবাকে গামজের সেই শেষ দেখা৷

১৫ বছর ধরে জার্মানিতে বাস করছিলেন মেহমেত কুবাসিক৷ তুরস্ক থেকে আগত এক কুর্দ, ধর্মবিশ্বাসে আলাওয়াইট৷ আশির দশকের শেষে আনাতোলিয়া থেকে জার্মানির ডর্টমুন্ডে এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন৷ ২০০৩ সালে তাঁর আবেদন গৃহীত হয়, কুবাসিক জার্মান নাগরিকত্ব পান৷ রামজে'র স্মৃতিচারণে: ‘‘এ দেশ তাঁকে বলেছিল, জার্মানি একটি গণতান্ত্রিক দেশ৷ আমার বাবাও ঠিক সেইরকম ছিলেন৷''

Gedenkstein für NSU-Opfer in Dortmund
মেহমেত কুবাসিকের আত্মীয় স্বজনদের কান্নাছবি: picture-alliance/dpa

চেস্কা পিস্তলের গুলিতে প্রাণ হারান মেহমেত

খুনি দুপুর বারোটা থেকে একটার মধ্যে মেহমেতের দোকানে ঢোকে৷ যে চেস্কা পিস্তল দিয়ে এর আগে আরো সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে, ঠিক সেই পিস্তল থেকেই মেহমেতের দিকে একাধিকবার গুলি ছোঁড়া হয়৷ মেহমেত কাউন্টারের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ তাঁর মাথায় দু'টি গুলি লাগে৷ মেহমেত তাঁর পিছনের তাকগুলির উপর পড়ে যান৷ এ'সবই পুলিশ খতিয়ানে নথিবদ্ধ৷

সাত বছর আগের সেই ঘটনার ছায়া আজও কুবাসিক পরিবারকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে ফিরছে৷ মাত্র কয়েকদিন আগে রামজে'র মা এলিফ তাঁর এক বান্ধবীর সঙ্গে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন: তখন নাকি দুজন পুরুষ তাঁদের অনুসরণ করছিল৷ তাদের নব্য-নাৎসি বলেই এলিফের মনে হয়েছে৷ তিনি প্রথমে ভয় পান, পরে সেটা আতঙ্কে পর্যবসিত হয় – কেননা তাঁর স্বামীর হত্যাকাণ্ডের আগেও দুজন লোক নাকি দোকানটার উপর নজর রেখেছিল৷ এবার কি তবে তাঁর পালা?

বিচার শুরু হচ্ছে

তিনি নিজেও মাঝেমধ্যে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তবে আবার নিজেকে সামলে নেন, ডয়চে ভেলে'কে বলেছেন গামজে কুবাসিক৷ ‘‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক গুপ্তপ্রতিরোধ'' বা এনএসইউ নামধারী যে নব-নাৎসি ত্রয়ী তাঁর বাবা মেহমেত কুবাসিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী, তাদের মদতকারীদের বিচার শুরু হচ্ছে মিউনিখের আদালতে৷ এনএসইউ ত্রয়ীর একমাত্র জীবিত সদস্য – এবং একমাত্র মহিলা – বেয়াটে শেপে ও অন্যান্য অভিযুক্তদের মুখোমুখি দেখতে পাবেন রামজে কুবাসিক এও তাঁর মতো আরো প্রায় ৭০ জন ভাগ্যাহত৷ ‘‘তারা যদি মানুষ হয়, তবে তারা আমাদের মুখের দিকে চাইতে পারবে না,'' বলেছেন রামজে৷

Gamze Kubasik Tochter des NSU Mordopfers Mehmet Kubasik
নিজের দোকানে মেহমেত কুবাসিকছবি: privat

এবং সেটা হয়তো আরো অনেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ মেহমেত কুবাসিককে যে নব্য-নাৎসিরা হত্যা করেছে, সে সত্য প্রকাশ পেতে বহুদিন লেগে যায়৷ সে পর্যন্ত কুবাসিক পরিবারকেও সন্দেহভাজনদের মধ্যে বিবেচনা করা হচ্ছিল৷ হত্যাকাণ্ডের পরদিন গামজে ও তাঁর মা এলিফ'কে ছ'ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়: তাঁর বাবা ড্রাগস নিতেন কিনা, ড্রাগস বেচতেন কিনা৷ মাফিয়া কিংবা নিষিদ্ধকৃত কুর্দ প্রতিরোধ গোষ্ঠী পিকেকে'র সঙ্গে মেহমেতের কোনো সংযোগ ছিল কিনা৷ কুবাসিকদের ফ্ল্যাটে পুলিশ কুকুর এনে শোঁকানো হয়, মেহমেতের গাড়ি ভেঙে-খুলে দেখা হয়, তাঁর তিন সন্তানের থুথু পরীক্ষা করানো হয়৷ কিছুই পাওয়া যায় না৷ এমনকি গামজে কুবাসিক যখন বলেন, নব-নাৎসিরা তাঁর বাবাকে খুন করেছে বলে তাঁর ধারণা, তখন তাঁকে বলা হয়, সে ধরনের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই৷

অন্যায় সন্দেহ

মেহমেত কুবাসিককে হত্যার ঠিক দু'দিন পরে কাসেল'এ ২১ বছর বয়সি হালিত ইয়োজগাট'কে ঠিক ঐ একই অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়৷ পুলিশ তখনও বলছে, হত্যাকাণ্ডের শিকারের হয়তো কোনো অপরাধীচক্রের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল – জার্মান গণমাধ্যমও সেই ধুয়ো ধরে৷ ডর্টমুন্ডে কুবাসিকদের পরিচিত, অপরিচিত সকলেরই যে ঐ ধারণা, গামজে সেটা বুঝতে পেরেছিলেন৷

এই অবস্থায় কুবাসিকরা কাসেলের ইয়োজগাট পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ ২০০৬ সালের মে মাসে কাসেলে একটি প্রতিবাদ মিছিল আয়োজিত হয় যার স্লোগান ছিল: ‘কোনো দশম হত্যাকাণ্ড ঘটতে দেওয়া চলবে না'৷ দু'হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল সেই মিছিলে৷ গামজের সব সন্দেহ, গ্লানি, সংশয়ের অন্ত ঘটে ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে, যখন এনএসইউ'এর দু'জন পুরুষ সদস্যের আত্মহত্যার খবর আসে টেলিভিশনে৷ কিন্তু কাহিনির সেখানেই শেষ নয়৷

Gedenkstein für NSU Opfer Mehmet Kubasik in Dortmund
মেহমেত কুবাসিক স্মরণে স্থাপিত স্মৃতিস্মারকছবি: picture-alliance/dpa

এনএসইউ হত্যাকাণ্ড পর্যায়ের তদন্তে যে নানা ধরনের ভুল-ভ্রান্তি ও বিভ্রাট ঘটেছে, তাতে রামজে ক্ষুব্ধ, রুষ্ট৷ শেষ কেলেঙ্কারি: মিউনিখের আদালতকক্ষ এতোই ছোট যে, সেখানে তুর্কি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের স্থান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ রামজের মনেও সন্দেহ জেগেছে যে, গোটা বিচার প্রক্রিয়াটিকে হয়তো ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে৷

আজ ২৭ বছরের রামজে তাঁর বিয়ের পর এক বছর তুরস্ক'য় ছিলেন, তারপর জার্মানিতে ফিরে আসেন কেননা ‘‘জার্মানিই আমার স্বদেশ, আমি জার্মান৷ আমি সেটাকে নষ্ট হতে দেব না - আমার পরিবারও নয়৷ এ' দেশ আমাদের সকলের, এ' দেশ নাৎসিদের নয়৷''