1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধন্যবাদ খালেদা জিয়া

আশীষ চক্রবর্ত্তী২২ মার্চ ২০১৩

অনেক দেশে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা৷ কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির প্রতি বিরোধী দলের নেত্রীর শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়াটা বিশাল কিছু৷ খালেদা জিয়া তাই ইতিবাচক কারণেই স্থান পেয়েছেন সব খবরের শীর্ষে৷ ধন্যবাদ খালেদা জিয়া!

https://p.dw.com/p/182GI
ছবি: DW

সিঙ্গাপুরে মারা গেছেন বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান৷ সরকার এবং সরকারবিরোধী প্রায় সবার কাছেই শ্রদ্ধেয় এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নামবে এটাই স্বাভাবিক৷ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার৷ কিন্তু প্রথম দিনেই যে দেশজুড়ে একটা খুশির ঝিরি ঝিরি হাওয়াও বয়ে গেছে, তা এই দূরদেশে বসেও অনুমান করতে কষ্ট হচ্ছেনা৷ চিরকাল আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করে যাওয়া জিল্লুর রহমানকে প্রাপ্য মর্যাদা দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন – গত কয়েকদিনের ঘটনার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা কোন মানুষটি ভেবেছিলেন এমনও হতে পারে? কিছু বিস্ময় মনে পুলক জাগায়৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি এবং এ দাবির বীভৎস বিরোধিতার বাতাবরণে এ এক অবর্ণনীয় সুখানুভূতির উৎস৷ এমন উপহারের জন্য খালেদা জিয়ার ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য৷

দুর্ভাগ্য হলো, স্বাধীনতার পর থেকে প্রাপ্য অনেক কিছুর বদলে শুধু প্রতিহিংসা, জিঘাংসা, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, প্রতিপক্ষকে ছোট করতে গিয়ে নিজেকে তো বটেই, জাতিকেও ছোট করার অসংখ্য নজির দেখেছে বাংলাদেশ৷ খুব বড় বড় অর্জনও গৌণ হয়ে গেছে তাতে৷ বাঙালির ভাষার অহঙ্কারের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তাই বহির্বিশ্ব খুব কমই জানে৷ নোবেল কিংবা গিনেস বুকের স্বীকৃতি প্রসঙ্গ জোর করে না তুললে বিদেশিদের বোঝানো যায়না প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর রাজনৈতিক হানাহানি বাইরে ভালো অনেক কিছুই আছে বাংলাদেশের৷ অথচ সুস্থ রাজনীতি পথ না হারালে দীর্ঘ সংগ্রামের সুফল হিসেবে পাওয়া এ দেশ আজ কোথায় থাকতো!

Bangladesch Premierministerin Sheikh Hasina Trauerfeier für Zillur Rahman
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপার্সনছবি: Reuters

জনগণের ভোটই কোনো সরকারের জন্য শেষ কথা – গণতন্ত্রের সহজ, প্রতিষ্ঠিত এ সত্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করা, সেই হত্যার বিচারের পথ চিরতরে রুদ্ধ করতে সংসদে ইনডেমনিটি পাশ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হয়ে কাজ করা শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করা, যু্দ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের মন্ত্রীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে ‘সম্মানিত' করা, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিবসে খুব ঘটা করে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন – এমন কিছু ঘটনার কারণে আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি আর যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু৷

দু দলের সম্পর্ককে ‘বিরোধিতা' না বলে ‘শত্রুতা' বললে বোধহয় সত্যের অপলাপই হয়৷ নইলে জীবদ্দশায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু' বললেও সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কেন রাষ্ট্রপতি হয়েই ‘বঙ্গবন্ধু' শব্দটিকেই বর্জন করবেন! বিএনপি এখনো সেই ধারাতেই চলছে৷ দীর্ঘ হানাহানির মাঝে একটা দুটো সুস্থ, স্বাভাবিক আচরণ যে দেখা যায়নি তা নয়, তবে সেগুলো অনুল্লেখ্য হয়ে গেছে হানাহানির পৌনঃপুনিকতায় ফেরায়৷

বৃহস্পতিবার দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়ে দরবার হলে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন, বিরোধী দলনেত্রী খালেদা জিয়া৷ আওয়ামী লিগ সরকারের ঘোষণা করা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বিএনপিও তিন দিন শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুক্র ও শনিবার নিজের বগুড়া ও জয়পুরহাট সফরও একদিন করে পিছিয়েছেন খালেদা জিয়া৷ বিরোধিতা ভুলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শোকে সমবেদনা জানানোর এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে ধন্যবাদার্হ৷ জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে অন্তত সরকার এবং বিরোধীদলের প্রত্যাশিত ঐক্যের পথে যাত্রা কি শুরু হলো অবশেষে?

সে আশার গুড়ে বালি৷ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কফিনে ফুল দেয়ার সময় একটু দূরেই কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে খালেদা জিয়া প্রথমে সেদিকে এগোলেও পরে নাকি ফিরে চলে গেছেন অন্য পথ ধরে৷ অনেকটা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দল বিএনপির মুক্তিযু্দ্ধের চেতনাকে সরিয়ে রেখে উল্টো পথে হাঁটার মতোই৷ এখানে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়ও কম নয়৷ অতীত এবং চলতি সময়ের তিক্ততাগুলোর কারণেই কি সৌজন্য গৌণ হলো? রাজনৈতিক অবস্থান থেকে হয়তো ঠিকই করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু সৌজন্য সাক্ষাতের এ সুযোগ হাতছাড়া না করলেও কি খুব ক্ষতি হতো!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য