1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লি-মস্কো সম্পর্কের মোড় ঘোরাতে মোদী-পুটিন বৈঠক

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

অনেকের মতো আমিও মনে করি, বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ কখনো এক থাকে না৷ আজীবন কেউ কারো বন্ধু বা শত্রু থাকতে পারে না৷ কৌশলগত কারণে দ্বিপাক্ষিক বা বহু পাক্ষিক সম্পর্কে কখন জোয়ার, কখন ভাটা – এটাই সাধারণ নিয়ম৷

https://p.dw.com/p/1E4Kf
Putin bei Modi 11.12.2014 Neu Delhi
ছবি: Reuters/A. Abidi

ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ঐতিহাসিক সম্পর্ক নেহেরুর সমাজতান্ত্রিক জমানায় যা ছিল, নব্বইয়ের দশক থেকেই তাতে ধরতে শুরু করে ভাটার টান৷ ভারত এখন কাছে যেতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের৷ সম্পর্কের নতুন সমীকরণের ফরমুলা মোদী সরকার তাঁর পূর্বসুরির মতো ঢেলে সাজাতে চাইছে৷ অথচ ভারত মস্কোকে পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারছে না৷ সামরিক সহযোগিতা বা পরমাণু শক্তি, বিশ্ব মঞ্চে ভারতকে মস্কোর ক্রমাগত সমর্থন দিয়ে যাওয়া এবং অন্য অনেক কিছুতেই ভারতের টিকি বাঁধা মস্কোর কাছে, যেটা চট করে ছেঁড়া সম্ভব নয়৷ তাই ইউক্রেন ইস্যুতে এবং গণভোটের অজুহাতে ক্রাইমিয়া জবর দখলের প্রতিবাদে পশ্চিমী দুনিয়া যখন সোচ্চার, ভারত প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা না করলেও মনে মনে মেনে নিতে পারেনি৷ কারণ তাহলে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরে গণভোটের দাবিকে মেনে নিতে হয়৷ এটাই আমার ব্যক্তিগত মত৷ তবে পশ্চিমী দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞা জারিকে সমর্থন করেনি ভারত৷ কিন্তু আপাত দৃষ্টিগ্রাহ্য বৈপরিত্য যেটা আমার চোখে পড়েছে, সেটা হলো ক্রাইমিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে পুটিনের প্রতিনিধিদলে সামিল করা ভারত অনীহা ব্যক্ত করেনি কেন?

অন্যদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় মস্কো পড়েছে বিপাকে, অন্তত অর্থনৈতিক দিক থেকে৷ রাশিয়ার অর্থনীতিতে তার ছাপ ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মস্কোকে বিকল্প বাজার খুঁজতে হচ্ছে৷ পুরানো বন্ধু দেশগুলিকে, বিশেষ করে ভারতকে আবার কাছে টানতে চাইছে৷তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দিল্লি সফরের ঠিক মাস দেড়েক আগে মাত্র ২৪ ঘণ্টার এক ঝটিকা সফরে দিল্লিতে এসে বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিয়ে বেশ কিছু চুক্তি সই করে ফিরে গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমি পুটিন৷

Putin in Indien - Ankunft
২৪ ঘণ্টার ঝটিকা সফরে ভারতে এলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনছবি: Reuters

ভারত যে এনার্জি সংকটে ভুগছে, সেটা দুনিয়া বিদিত৷ তাই পুটিন সই করে গেলেন ভারতকে ১২টি পরমাণু চুল্লি সরবরাহের সমঝোতাপত্র৷ গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানির বাজার খুঁজতে ভারতকে বেছে নিয়েছে মস্কো৷ হিরে কাটা এবং পালিশ করার বিশেষজ্ঞ জ্ঞানে ভারত প্রথম সারির দেশ৷ আর হিরে উৎপাদনে রাশিয়া অগ্রগণ্য দেশ৷ আমরা জানি, ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং সমর সম্ভারের বুনিয়াদি কাঠামোটা তৈরি রাশিয়ার ধাঁচে৷ অনেক কিছুই রুশ প্রযুক্তি-নির্ভর৷ তাই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বন্ধ রাখা সম্ভব নয় ভারতের পক্ষে৷

পশ্চিমী দুনিয়ার দিকে ভারতের ঝুঁকে পড়াটা রাশিয়া কোনেদিনই ভালো চোখে দেখেনি৷ তাই ভারতকে চাপে রাখতে প্রতিরক্ষা সরবরাহে টালবাহানা করতে শুরু করে মস্কো৷ যেমন, বিমানবাহী রণতরি ‘গরর্সকভ' তারা সময়মত সরবরাহ করেনি৷ উল্টে খেপে খেপে দাম বাড়িয়ে চলে৷ বিমানবাহিনীর জন্য যন্ত্রাংশ সরবরাহের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা৷ তবে এটাই প্রধান কারণ নয়৷ তাহলে কেন ভারত দূরে সরে গেল রাশিয়া থেকে?

Bildgalerie Bengali Redaktion - Anil Chatterjee
অনিল চট্টোপাধ্যায়ছবি: DW

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আমিও সহমত পোষণ করি প্রথমত দুটি কারণে৷ এশিয়ায় চীনের সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত দোস্তি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেটা ভারতের বিলকুল না-পসন্দ৷ শুধু প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, প্রযুক্তি ও সিস্টেম রপ্তানির দিক থেকেও যেটা একান্তভাবে ভারতের হাতে ছিল, সেটা চীনকে দিয়ে এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্যে ভারতকে অনেক ছোট করা হয়৷ উল্লেখ্য, এ বছরেই চীনের সঙ্গে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের এনার্জি বাণিজ্য চুক্তি হয় মস্কোর৷ সেখানে দিল্লি-মস্কো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ান ডলার৷ দুই, ভারতের চির-বৈরি দেশ পাকিস্তানকে বিপুল সমর সম্ভার সরবরাহ করা ভারতের ঘোরতর আপত্তি বোধগম্য৷ তবে আমার যেটা মনে হয় বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মোদী যদি প্রয়োজন মাফিক তাল মিলিয়ে চলতে পারে, তাহলে সেটাই হবে মোদী সরকারের রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় তুরুপের তাস৷

ঐ যে আগেই বললাম, পরিবর্তনশীল বিশ্বে কে যে কখন কাকে ডোবাবে, কেউ বলতে পারে না৷ এটা বহুবার আমাদের দেখা৷ তবে আমার মতে পুটিনের দিল্লি সফরের সময়টা ওবামা সফরের ঠিক আগে করলেই বোধহয় ভালো হতো৷ এর ফলে দিল্লিতে মোদী-ওবামা বৈঠকে তার ছায়া পড়তে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য