1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দারিদ্র বিমোচন না হলে মাছ চাষ টিকিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন- ডঃ কেভার্ন

১২ মার্চ ২০১০

সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে মাছের ঘাটতি৷ এ সমস্যা কতটা তীব্র ? উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভবিষ্যতে মাছ খাওয়া কী বিলাসিতায় পরিণত হবে ? এসব প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন জাতিসংঘের খাদ্য এ কৃষি সংস্থা এফ এ ও -র কর্মকর্তা ডঃ কেভার্ন কখরান৷

https://p.dw.com/p/MPsV
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কর্মকর্তা ডঃ কেভার্ন কখরানছবি: FAO

সারা বিশ্বে মাছের যে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এর মূল কারণ কী ?

ডঃ কেভার্ন কখরান:

‘‘কথাটা সত্যি যে সারা বিশ্বেই এই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ এর মূল কারণে রয়েছে চাহিদার ঊর্ধ্বগতি৷ সেই তুলনায় সরবরাহ বা উৎপাদন কম৷ আমরা চেষ্টা করছি মাছের সংখ্যা বাড়াতে৷ আমরা তীব্র নজর রাখছি পুরো বিষয়টির ওপর৷ কীভাবে মাছের এই সংকট অন্যভাবে মোকাবিলা করা যায়, সমুদ্র, নদী-নালার ওপর বাড়তি চাপ না ফেলে – সে বিষয় নিয়েও আমরা কাজ করছি৷’’

টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ করে কি এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ? যদি হয়ে থাকে তাহলে কোন ধরণের পদ্ধতির কথা এখানে বলা হচ্ছে ?

ডঃ কেভার্ন কখরান:

‘‘এ ধরণের প্রশ্নের কোন সহজ উত্তর নেই৷ সমস্যাটি বেশ কঠিন৷ মূল কারণগুলো কখনোই এক রকম নয়৷ এক একটি দেশে, অঞ্চলে সমস্যা একেক রকম৷ একদিকে অর্থনৈতিক অবস্থার দরুন মাছ ধরার প্রবণতা বাড়ছে, সেটা আমরা দেখেছি৷ সেই দেশগুলোতে মাছের দাম বেশি, মাছ ধরার প্রযুক্তিও উন্নত৷ অন্যদিকে দেখা গেছে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ রয়েছে দশকের পর দশক ধরে – বিলাসিতা হিসেবে নয়, প্রয়োজনে৷ দরিদ্র দেশগুলোতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা হয় – সেসব মানুষের সংখ্যা বেশি৷ সেখানে সমস্যার সমাধান করতে হবে অন্যভাবে৷ আমাদের যা করা প্রয়োজন, তা হল – সবগুলো সমস্যাকে চিহ্নিত করা৷ যদি আমরা মাছচাষকে টিকিয়ে রাখতে চাই, তাহলে মূল কারণগুলো নিয়েই কাজ করতে হবে৷ নিয়মিত মাছ খাওয়া, জীবিকা নির্বাহের জন্য মাছ ধরা ছাড়া আর কোন্ কোন্ ক্ষেত্র
08.2009 DW-TV euromaxx a la carte archiv Fisch und Meeresfruechte
খোলা রয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে৷ দেশের প্রশাসন এবং মৎস ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন৷ যে দেশগুলো আমাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছে, তাদের আমরা সাহায্য করছি৷ তবে শুরুতেই বলা হয়েছে, সমস্যাটি অত্যন্ত জটিল, যে কারণে সমাধানও এত সহজে দেওয়া সম্ভব নয়৷’’

সারা বিশ্বে যত মাছ উৎপাদন করা হয় জাপান একাই তার ১০ শতাংশ ভোগ করে থাকে৷ এ ক্ষেত্রে জাপানের দায়িত্ব কেমন হওয়া উচিৎ ?

ডঃ কেভার্ন কখরান:

‘‘উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত দেখা যায়, সব পণ্যই এরা ভোগ করছে বেশি৷ এককভাবে কোন দেশকে দোষ দেয়া উচিৎ নয়৷ মাছের বেলায়ও তাই হচ্ছে এবং দেখা যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে মাছ আসছে সবচেয়ে বেশি৷ ২০০৬ সালে জাপান ১৩ বিলিয়ন ডলারের মাছ এবং মাছ সামগ্রী আমদানি করেছে৷ অ্যামেরিকাও কাছাকাছি রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমদানী করেছে এর থেকে আরো অনেক বেশি৷ এর মূল কারণ হল, মাছ অত্যন্ত জনপ্রিয়, এবং এই জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে৷ যাদের হাতে টাকা রয়েছে মাছ কেনার, তারা মাছ কিনবেই৷ আমাদের যা করা প্রয়োজন তা হল, এসব ক্রেতাকে সেসব দোকান থেকে মাছ কেনায় উদ্বুদ্ধ করা, যে সব ব্যবসায়ী মাছ চাষ টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী৷ এছাড়া যে সব দেশ মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল, যারা মাছ উৎপাদন করছে তাদের মাছ উন্নয়ন প্রকল্প এবং ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী করে তোলা৷ এই কাজগুলো ইতিমধ্যেই করা হচ্ছে তবে তা আরো দ্রুততার সঙ্গে করা প্রয়োজন৷ ’’

এক সময় খাবার তালিকায় আর মাছ থাকবে না - সেদিন থেকে আমরা কত দূরে বা কত কাছে ?

ডঃ কেভার্ন কখরান:

‘‘পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলে মাছচাষকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রতিদিনই তারা তাদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ আমরা দেখেছি এদেশগুলো বেশ ভালভাবেই সময়, অর্থ, চাহিদা, সরবরাহ এবং উৎপাদনের মধ্যে চমৎকার সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হয়েছে৷ আমি মনে করি, মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলো যদি এ ধরণের নিয়মের মধ্যে চলে আসে - তাহলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব৷ কিন্তু অনেক অঞ্চল রয়েছে যেখানে এই কাজগুলো করা সম্ভবই হচ্ছে না৷ বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাবারের যোগান নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র দূর করতে মাছ ধরাকে প্রাধান্য দেয়া হয় - সেখানে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব নয়৷ যদি এই নির্দিষ্ট সমস্যগুলোকে চিহ্নিত না করা হয়, দারিদ্র বিমোচনে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় - তাহলে সেই অঞ্চলগুলোতে মাছ চাষ টিকিয়ে রাখা হবে সত্যিই কঠিন৷ এখানে শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যের কথা বলা হচ্ছে না, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে৷’’

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন