1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণ এশিয়ায় শৌচাগার ব্যবহারে ইতিবাচক পরিবর্তন

রিয়াজুল ইসলাম৪ জুলাই ২০০৮

মানবস্বাস্থ্য রক্ষায় স্যানিটেশন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয়৷ এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে জাতিসংঘ এ বছরকে ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক স্যানিটেশন বর্ষ হিসেবে৷

https://p.dw.com/p/EWd2
বদলাচ্ছে জীবনমান, বদলাচ্ছে রুচিবোধছবি: AP

গত কয়েক বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় শৌচাগার ব্যবহারে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তার স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে জাতিসংঘ৷

লোকেরা তাদেরকে ডাকতো ভাংগি বলে, কারণ তারা বাড়ী বাড়ী গিয়ে শৌচাগার পরিষ্কার করতো মানুষের বর্জ্য তুলে আনতো৷ এটাই ছিল যেন তাদের নিয়তি৷ কারণ বাপ দাদাদের আমল থেকে এই ছিলো তাদের একমাত্র পেশা৷ সমাজের উপর তলার মানুষ তাদের দেখতো অচ্ছুত হিসেবে৷

ভারতের ৭ লাখ মেথরের মধ্যে এমনই একজন ছিলেন উষা চামার৷ কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে মাত্র সাত বছর বয়সে তাকে মায়ের সঙ্গে শুরু করতে হয়েছিলো মানুষের বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ৷ মাত্র ১০ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মায়ের জায়গায় আসে শাশুড়ি৷ তারও ছিলো ওই একই কাজ৷ এভাবেই পার হয়ে যায় দেড় যুগ৷ অচ্ছুত হওয়ায় স্কুলে যাওয়া কিংবা মন্দিরে ঢোকার সৌভাগ্য উষার কখনো হয়ে ওঠেনি ৷ কিন্তু সময় বদলেছে৷ ময়লার বাক্সের বদলে এখন উষার হাতে সেলাই মেশিন৷ কখনো বা সে হাতের নিপুন কারিগরীতে তৈরী হচ্ছে চমত্কার সব মোমবাতি৷ তাই যারা এক সময় উষার ছোয়াটা পর্যন্ত এড়িয়ে চলতো আজ তারা নিজেরাই আসছে শাড়ীতে তার এমব্রয়ডারির কাজ দেখতে৷ এক সময়ের অচ্ছুত উষা চামার এখন অনেকেরই প্রিয় উষা দিদি৷

কিন্তু কিভাবে তার জীবনটা এভাবে বদলে গেল? এটা জানতে হলে আমাদেরকে আরেকটু পেছনে যেতে হবে৷ ১৯৭০ সালের কথা৷ ড. বিন্দেশ্বর পাঠক নামে এক ভারতীয় ভদ্রলোক প্রতিষ্ঠা করেন সুলভ নামে একটি সংগঠন৷

ভারতের দরিদ্র মানুষের খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার অভ্যাস কিভাবে পাল্টানো যায় সে চিন্তা থেকে তিনি এ সংগঠনটি গড়ে তোলেন৷ এক পর্যায়ে তিনি উদ্ভাবন করেন দুই পিটের একটি শৌচাগার যার নাম দেন সুলভ শৌচাগার৷ পরিবেশ বান্ধব এ শৌচাগার তৈরী করতে খরচ হয় খুব কম৷ তাই দরিদ্র মানুষের কাছে খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ সুলভ শৌচাগার৷

কেবল ভারত নয় তৃতীয় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অভ্যাস বদলে দিয়েছে তার এই উদ্ভাবিত শৌচাগার৷ কিন্তু ড. বিন্দেশ্বর কেবল মানুষের অভ্যাস পাল্টে দেননি, শৌচাগার পরিষ্কার করায় যারা সমাজের কাছে অচ্ছুত বলে গণ্য সেসব দলিত মানুষের উন্নয়নেও কাজ করে গেছেন৷ গত প্রায় চার দশকে উষা চামারের মত ৬০ হাজার মেথর সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান সুলভ৷

বিভিন্ন কারিগরী শিক্ষার মাধ্যমে তাদের নিজের পায়ে দাড়াতে সাহায্য করেছে সংগঠনটি৷ জাতিসংঘ এ বছরকে ঘোষণা করেছে স্যানিটেশন ইয়ার হিসেবে৷ আর এ উপলক্ষে জাতিসংঘ বিশেষ সম্মানে ভুষিত করতে যাচ্ছে সুলভকে৷ একইসঙ্গে সম্মানিত করা হবে উষা চামারকে, ভারতের লাখ লাখ দলিত মানুষের কাছে যিনি হয়ে উঠেছেন ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে৷ তাদের জন্য রইলো আমাদের অশেষ শুভেচ্ছা৷