1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

থাইল্যান্ডে অভিবাসীদের অমানুষিক কষ্ট

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেক কষ্ট সহ্য করে থাইল্যান্ডে যান মিয়ানমার আর কম্বোডিয়ার গরীব লোকেরা৷ কিন্তু সেখানে গিয়ে বেড়ে যায় কষ্টের পরিমাণ৷ ফলে পালাতে চান অনেকে৷ কিন্তু ধরা পড়ে প্রাণ হারাতে হয়ে অনেককে৷

https://p.dw.com/p/12bHm
Bild: Nipon Mekwattanakarn_Burmese Migrant Worker.JPG Titel: GMF Klick! Fotowettbewerb 2011, Tibet Fotograf/Datum:Nipon Mekwattanakarn, Thailand, June 2005 Aufnahmeort: Prachaubkirikhan, Southern Thailand Beschreibung: The man in the photo is one of tens of thousands irregular Burmese migrant workers in the fishing industry of Southern Thailand. It is very common that such workers are trafficked and deprived of their human rights. Nevertherless the man in the picture proudly shows his human dignity and pride. Format: Flash Galerie, freies Bildformat, Artikelbild Bildrechte: Verwertungsrechte im Kontext des Global Media Forums eingeräumt.
মিয়ানমারের এক শ্রমিক কাজ করছেন থাইল্যান্ডেছবি: Nipon Mekwattanakarn

হালা মিন্ট৷ মিয়ানমারের নাগরিক৷ ভাগ্য বদলাতে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন৷ যোগাযোগ করেছিলেন দালালদের সঙ্গে৷ পরে সাতদিন ধরে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে অবশেষে গিয়ে পৌঁছান স্বপ্নের থাইল্যান্ডে৷ ভেবেছিলেন, কষ্টের দিন শেষ৷ এবার থেকে সামনে শুধু ভাল দিন৷

কিন্তু না৷ মিন্ট ভাবতেই পারেন নি, যে কষ্ট করে তিনি থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন, তার চেয়েও বেশি কষ্ট অপেক্ষা করছে তার জন্য৷

থাইল্যান্ডে সমুদ্রগামী একটি মাছ ধরার জাহাজে কাজ শুরু করেন মিন্ট৷ যদিও কোনো এক কারখানায় কাজ করার কথা ছিল তার৷ ঐ জাহাজেই শুরু হয় তার সাত মাসের কষ্টের জীবন৷ সেখান থেকে পালিয়ে না এলে চলতেই থাকতো সেটা৷ নয়তো কোনো একদিন জাহাজের ক্যাপ্টেনের গুলিতে প্রাণ দিতে হতো৷

জাহাজে তার কাজের বর্ণনা দিতে গিতে মিন্ট বলেন, তাকে কাজ করতে হতো দিনে ২০ ঘন্টা এবং সপ্তাহে সাতদিন৷ অর্থাৎ কোনো বিরতি নেই৷ শুধু খাওয়া দাওয়ার জন্য যে সময়টুকু দরকার সেটাই পেতেন তিনি৷ আর বাকীটা সময় কাজ আর কাজ৷ আর একটু গাফিলতি হলে শুরু হতো মালিকের নির্যাতন৷

এভাবে কাজ করতে না চেয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল মিন্টের এক সহকর্মী৷ কিন্তু বিধি বাম৷ ধরা পড়ে যান মালিকের কাছে৷ ফলে সবার সামনে ঐ কর্মীকে মারধর করেন মালিক৷ পরে জাহাজের পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে মাথায় গুলি করে তাকে মেরে ফেলা হয়৷

GMF Klick Fotowettbewerb 2011 KLICK
ছবি: Philipp Wesche

নিজের চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে মিন্ট অসহায় হয়ে পড়েন৷ সিদ্ধান্ত নেন তিনিও পালিয়ে যাবেন৷ তাই একদিন ঝাঁপ দেন সাগরে৷ পরে লাইফ জ্যাকেটে ভর দিয়ে সাঁতরে পাড়ে ওঠেন তিনি৷

মিন্ট এখন কাজ করেন এমন এক সংস্থায়, যার কাজ হচ্ছে মিয়ানমারের আটকে পড়া যুবকদের উদ্ধার করা৷

এতক্ষণ থাইল্যান্ডের যে ঘটনা বলা হলো সেটা স্বাকীর করছেন সেদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী সিরিরাত আয়ুওয়াথানা৷ তিনি বলেন তাঁর সরকার এই সমস্যা সম্পর্কে অবহিত রয়েছে এবং এর সমাধানে একটি কমিশন গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে জানান মন্ত্রী৷ এই কমিশনের মাধ্যমে মাছ ধরা জাহাজ ও সেখানে কাজ করা শ্রমিকদের তালিকা নিবন্ধন করা হবে৷

অবশ্য থাই মন্ত্রী স্বীকার করেছেন দূর সাগরে জাহাজে শ্রমিকদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয় সেটা পর্যবেক্ষণে রাখা কঠিন৷

এদিকে থাইল্যান্ডের একটি উপকূলীয় অঞ্চলের এক পুলিশ সদস্য বলেছেন প্রতি মাসে গড়ে ১০টি মৃতদেহ সাগর থেকে উপকূলে ভেসে আসে৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম'এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে৷

এছাড়া জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কম্বোডিয়ার অভিবাসীদের অর্ধেকই বলেছে যে, তারা জাহাজে তাদের অন্তত একজন সহকর্মীকে মালিকের হাতে নিহত হতে দেখেছেন৷  

তবে থাইল্যান্ডের জাতীয় মৎসসম্পদ সমিতির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷

উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডের সামুদ্রিক খাবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে৷ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোই প্রধানত থাইল্যান্ড থেকে এধরনের খাবার আমদানি করে থাকে৷

এমন পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ড থেকে সামুদ্রিক খাবার না কেনার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম