1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢেউ ভেঙে জাফরের খেলা

হাফসা হোসাইন১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮

কক্সবাজারের ছেলে জাফর আলম৷ ২৫ বছর বয়সী সুঠামদেহী এই যুবক দেখতে বাংলাদেশের আর দশটা সাধারণ ছেলের চেয়ে আলাদা৷ শুধু দেখায় নয় সব কিছুতেই ভিন্ন রকম অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে থাকে সব সময়৷

https://p.dw.com/p/FKs1
যে সাগর নিয়ে সাধারণ মানুষের এতো ভয়, সেই সাগরের ঢেউ নিয়ে খেলাই জাফরের নেশাছবি: Arafatul Islam / DW

তাই যে সাগর নিয়ে সাধারণ মানুষের এতো ভয়, সেই সাগরের ঢেউ নিয়ে খেলাই তার নেশা ও পেশা৷

জাফরের দাবি, বাংলাদেশের প্রথম সারফার সে৷ দেশে এই খেলাকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্য তার৷ সেই সাথে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতকে বিশ্ববাসীর সামনে আরো জোরালো করে তুলে ধরতে চায় সে৷ কক্সবাজারের ৭৮ মাইল দীর্ঘ সৈকতে এ মাসেই আয়োজন করা হচ্ছে ৪র্থ বার্ষিক সার্ফিং প্রতিযোগিতা৷ ১৫ জন মার্কিন সারফারের সঙ্গে লড়বেন জাফরসহ বাংলাদেশের অন্য সারফাররা৷

Cox`s Bazar: Sonnenuntergang vor der Küste von Bangladesh
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে সার্ফিং-এর অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছেছবি: picture alliance/Photoshot

কক্সবাজার সৈকতে এত সুন্দর ঢেউ থাকলেও সার্ফারদের নজর কাড়েনি তেমন৷ সাহসী দুএকজন পর্যটক ঢেউয়ের সঙ্গে খেলায় মেতেছেন কখনও৷ তা দেখেই সার্ফিং-এর প্রতি আগ্রহ জন্মে জাফরের৷ আর সে আগ্রহের বশেই ১০ বছর আগে এক অস্ট্রেলীয় পর্যটকের কাছ থেকে ২০ ডলার দিয়ে সার্ফবোর্ড কেনেন জাফর৷ এর পর ঢেউয়ের সাথে লড়াই করে ৫ বছর ধরে সার্ফিং চর্চা করেছেন একাই৷ সার্ফবোর্ডে নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য লিশ অর্থাত্‌ কোন বেল্ট না থাকায় ঢেউয়ের তোড়ে সাগরের নোনা পানিতে ডুবেছেন বহুবার৷

আর এভাবে অনুশীলনের সময়ই বিখ্যাত সার্ফার টম বাওয়ারের বায়নুকুলারে ধরা পড়েন জাফর৷ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে সার্ফিং-কে জনপ্রিয় করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হনুলুলুতে সার্ফিং দ্য নেশনস নামে অলাভজনক এক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বাওয়ার৷ তিনিই জাফরকে সুন্দর একটি লিশ উপহার দেন৷ সেইসঙ্গে তার সার্ফবোর্ডটিও মোমের প্রলেপ দিয়ে ঠিকঠাক করে দেন বাওয়ার৷ খোঁজ করছিলেন বাংলাদেশী সারফারদের৷ কিন্তু ঘুরে ফিরে পেয়েছিলেন এক জাফরকেই৷

২০০২ সালে কক্সবাজারে সার্ফ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন জাফর৷ তার শিক্ষার্থী এখন ৪৮ জন৷ ১২টি মেয়েও আছে ক্লাবে৷

Cox`s Bazar: Fischer an der Küste von Bangladesh
কক্সবাজার মানেই সমুদ্র নির্ভর ভিন্ন এক জীবনধারাছবি: AP

এ মাসে কক্সবাজারে অনুষ্ঠেয় সার্ফিং প্রতিযোগিতার সময় বাংলাদেশে আসবেন বাওয়ার৷ সে সময় তিনি যাচাই করে দেখবেন সার্ফিং-এর জন্য কোন সৈকত ভালো- ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত হানটিংটন বিচ না কক্সবাজার?

জাফর ও বাউয়ার দুজনেই মনে করছেন, কক্সবাজারের এই সমুদ্র সৈকতে সার্ফিং-এর অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে৷ এখানে এই খেলাকে জনপ্রিয় করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে ঘটানো যাবে আমূল পরিবর্তন৷ কারণ, পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় সার্ফিং-কে কেন্দ্র করেই এখানে আরো প্রসার ঘটানো যাবে পর্যটন শিল্পের৷

তবে এই সার্ফিং শিখতে গিয়ে কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন জাফর৷ দেশের মেয়েদের সাধারণ পোশাক শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ পরে সার্ফিং সম্ভব নয়৷ তাই সমাজ ও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে অনেক মেয়েরই আগ্রহ থাকলেও শিখতে পারছে না তারা সার্ফিং৷ এরই মধ্যে সার্ফ ক্লাবে ভর্তি হয়ে আবার তা ছেড়ে দিয়েছে ৫টি মেয়ে৷

অবশ্য ওসব বাধা জয় করে বাংলাদেশেও একদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে সার্ফিং৷ এর মাধ্যমে দেশের পর্যটন খাতের প্রসার ঘটবে আরো, এমনই স্বপ্ন জাফরের৷ আর বাওয়ারের স্বপ্ন, বাংলাদেশর প্রথম সারফার হিসেবে ইতিহাসের বইতে লেখা হবে জাফরের নাম৷